আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহবাস-একটি ছোটগল্পের কাগজের জন্য এলিজি

একদা কিছু তরুন যৌথ ভাবে যে সন্তানের জন্ম দিয়েছিল..এই ব্লগটি আপাতত: সেই সন্তানেরই ইনকিউবিটর...

এক. তখন আমাদের কিছুই ছিল না। ধমনীতে তারুণ্যের গরম রক্ত, যদিও নাগিনীর বিষাক্ত নি:শ্বাসে স্থবির ফুসফুস। সময় ক্রমাগত পিছিয়ে দিচ্ছিল আমাদের,জমাট অন্ধকারে দমবন্ধ হয়ে আসছিল খুব। তবু সেই মধ্যবিত্ত রক্তে সৃষ্ঠির তুমুল জোয়ার। আমাদের অস্তিত্বের মতো,সন্তানের মতো তুমুল মমতায় কাগজের গায়ে আঁকাআঁিক।

আমরা সময়ের অভিশপ্ত সন্তান,কালজয় করে অস্তিত্ব জানান দিতে পারবো না পরের প্রজন্মে। তবু নিজের সময়ে বেচেঁ থাকার কী এক তীব্র আকুতি আমাদের। আর সেই আকুতি থেকেই একটা ছোট্ট প্রচেষ্ঠা-'সহবাস'। বাংলা ছোটগল্পকে ধারন করার এক ছোট্ট প্রয়াস। এক গভীর রাতে,স্টেডিয়ামের অন্ধকার আর নির্জন কোনে আড্ডা মারতে মারতে যার স্বপ্ন বোনা শুরু...।

দুই. আহা,কী দূ:স্বপ্ন গেছে আমাদের। প্রচন্ডতম গোয়াতর্ুমিতে প্রথমেই ঘোষনা,আমরা বিজ্ঞাপন নেব না। হাত বাড়ালেই যে অগ্রজ বন্ধু হাতে গুজে দিয়েছেন সাহস,সেই নীলাঞ্জন দাস টুকুর আড়তে হানা দেয়া। সাধ্যমতো পকেট থেকে বের হলো কিছুটা। সিগারেট রেশন করে আর টুকিটাকি সঞ্চয়ের সবটুকু আমি দিলাম।

হাসান মোরশেদ,মান্না আর আসিফ মনি জোগাড় করতে চায় বাকিটুকু। কিন্তু আমাদের সবার ঝুলি ঝেড়েও অর্ধেক কুলায় না। পাথর যখন গড়িয়ে পড়ে,তার সাথে জুটে যায় সহযোদ্ধা বাকিরাও। ড্রয়ার ঝেড়ে উজাড় করে নিয়ে আসে নজমুল আলবাব,অর্না,জাকির চৌধুরী....। কোন এক দুপুরে ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে আসে ঝকঝকে 'সহবাস'।

আমাদের সকলের মিলিত সন্তান। আহ্,কী ছিমছাম তার শরীর। কী সুন্দর অফসেট কাগজে রায়হানের প্রচ্ছদ। কী গাথুনিতে হাসান মোরশেদ এর সম্পাদকীয়...। বেরুবার 15 দিনের মাথায় প্রথম সংখ্যা শেষ হয়ে যায় সাহিত্যামোদীদের উৎসাহে।

তারপর আরো কয়েকটি সংখ্যা পর পর...। বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে চাটাই বিছিয়ে বসে পড়া। 80 কপি বিক্রী করলাম 6 দিনে। মোরশেদকে বলি আরো কপি পাঠা,হেসে বলে 'আর নাই। মার্কেট আউট।

' ....তারপর দিন গড়ায়। বাঙ্গালির নদী আর বাঙ্গালির দল,সহসাই ভেঙ্গে পড়ে। স্কলারশিপ নিয়ে হাসান মোরশেদ রওনা হয় ভারতে। আমি গুটিয়ে নেই নিজেকে। আসিফ মনি চাকরি নিয়ে চট্টলা।

অর্না ব্যস্ত পড়াশোনায়,জাকির ব্যস্ত বিদেশ যাওয়ার পথ খুজতে,নজমুল আলবাব ব্যস্ত কঠোর জীবন যুদ্ধে আর অর্জুন মান্না তখন নিজেকে নিয়েই বুঝি মগ্ন। আর আমাদের সাহসের উৎস,আমাদের কমরেড,টুকুদা তখন বড়ো বেশি একা হয়ে যান...। তিন. মাঝখানে চলে গেছে 9 টি ক্যালেন্ডার। হাসান মোরশেদ এখন বাচ্চার বাপ, বিলাতে ভালোই কামায় । আসিফ মনি এখন মার্কস লাইনের কর্পোরেট কর্মকর্তা,ডলারে বেতন পায়।

আমি আজ বেনিয়া। অর্জুন মান্না আর নজমুল আলবাব সাংবাদিক। জাকির কাজ করছে আয়াল ল্যান্ডে। অর্না এখন বিদেশি দুতাবাসের এডভাইজর না কি যেন। ইচ্ছে হলেই ,আমাদের যে কোন একজনের পক্ষেই এক সংখ্যা সহবাস বের করা সম্ভব আবার।

কোন ক্লেশ ছাড়াই কয়েক হাজার টাকা প্রেসে থোক ঝেড়ে দিতে পারবে আমাদের যে কোন জন। তবু আর 'সহবাস' বের হয় নি আজো। চার. কাল মাঝরাতে টুকুদার ফোন পেয়ে তন্দ্রা টুটে। আবার কি 'সহবাস' বেরুতে পারে? তার কন্ঠে শুনি হারানো সোনালি দিনের আকুতি। আমি নষ্টালজিক হই।

পাচঁ. হাসান মোরশেদ তার প্রথম সংখ্যা সম্পাদকীয়তে এক জায়গায় লিখেছিল,'পথ চলা শুরু হয়েছে যখন,দেখা হবে আবার;কথা হবে দীর্ঘতর-যদিনা ইত:মাঝেই পথের মানুষরাই বরণ করে নেন চার দেয়ালের সুখশিকল। ' কেমনে বুঝেছি িরে মোরশেদ? কেন আজ এই কয়টা দিন পরেই তোকে ,আমাকে;আমাদের সবাইকেই দেখছি সোনার খাচায় বসে বসে ঝিমুতে ... আরিফ জেবতিক। 11.03.07

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।