কবিতার কাগজ
মোস্তাক আহমাদ দীন
[গাঢ়]তোমার রহস্যময় প্রীতিলীলা অবলোকন করিতেছিলাম[/গাঢ়]
তিনি প্রথমত বৃসমীপে অর্থনা করিতেছিলেন, আর তাহা দর্শনে তুমি
এই মর্মে প্রার্থনা করিতেছিলে-অর্থাৎ ঈষর্া করিতেছিলে--যে কিনা
তোমার অধীন তাহাকেই ত্রাতা ভাবা হইতেছে, আমি তোমার এমত
গর্বিত মস্তক দর্শনে হাসিতেছিলাম।
অনন্তর তিনি যখন তোমাতে অর্থনা করিতেছিলেন তুমি বিলণ প্রীত
হইতেছিলে, আমি ইহাতে তোমার লাভ-তির তেরিজ খুঁজিতে গিয়া ব্যর্থ
হইতেছিলাম; ...অতঃপর হাসিতেছিলাম, কেননা অল্প-অল্প বুঝিতে
পারিতেছিলাম, এবং তাহাতেই তোমার তনুমনে সঙ্গতৃষ্ণা ধিকিধিকি
বাড়িতেছিল...
[গাঢ়]আমিবিনা কিছু পড়ে থাকে[/গাঢ়]
বিবাহসূত্রে আমি ধৃত, যেমতি যৈবতীমন বান্ধা থাকে
কালসন্ধেবেলা।
তবু ভেসে আসে সুর; নিঁধুয়া মন্ত্রের ধ্বনি ঘরে ভেসে এলে
গাঙে আসে অশেষ জোয়ার; পরোনো তের রূপে
জেগে ওঠে পুরাতীত স্পর্শের কাল
তথাপি বন্ধনগুলি কথা বলে ওঠে, আর আমি-বিনা কিছু
পড়ে থাকে বুঝি এই ঘরে। এই কালঘোরে।
---------------------------------------
জফির সেতু
[গাঢ়]'তোমার চুম্বনগুলো পেঁৗছে দাও'[/গাঢ়]
কী রকম রক্তমদ আর সারসের লাল মাংস বাতাসে ওড়ে; গ্রীষ্মের দুপুরে
বাদামি চুম্বনের ফেনা উড়ে এসে একাকার হয়ে যায় চন্দনকাঠের বতর্ুল টেবিলে
আমাদের সামনে ফ্রেঞ্চফ্রাই আর বারুদ পাহাড়ের মতো ধূমায়িত কফি
কাপে মুদ্রিত ঘন অরণ্যের একাকী জেব্রা, কত সহজেই না তোমার
বুকে উদ্যত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গোঙাতে থাকে; কিন্তু তোমার স্তন, স্তনগুলো
বিমর্ষ-রাত্রির মতো চুপচাপ, চিকন ঠোঁটে একটা বিরল মৌমাছি গুঞ্জরণ
তোলে অবলীলায়।
আর তোমার চোখ দুটি মদে ভেজা রুটির মতো উজ্জ্বল, লোভাতুর
এক সময় তুমি দাঁড়ালে, তোমার জোড়া ঊরু থেকে নেমে গেল এক পাল
আরবীয় ঘোটকী, তাদের রক্তিম খুরের আওয়াজ চাক চাক মধু হয়ে
আমার শিরায় শোনিতে লাফিয়ে উঠলে, আমি সমুদ্রফেরত বহুদিন
সঙ্গমহীন নাবিকের মতো অপার আলোড়ন নিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়াই
সমস্ত দুপুর পেছনে ফেলে তুমি তখন চৌকাঠে পা রেখেছ
[গাঢ়]বর্ষা নিয়ে কবিতা[/গাঢ়]
বর্ষা নিয়ে একটি কবিতা লেখা আমার বহুদিনের ইচ্ছে
কিন্তু বছরের পর বছর তা আর লেখা হয়ে ওঠে না
গ্রীষ্মে আমার ত্বক পুড়ে সে-ই নিয়ে আসে বর্ষার দগ্ধ ময়ূর
আমি অনাদি, তপ্ত শুধু ধারাজলে
শরত-হেমন্তে শস্যের আভায় সতত উৎসারিত
আর শীতে-বসন্তে অনুভূতিগুলো কেমন উষ্ণ ও লাল
বর্ষা নিয়ে কবিতা আমাকে লিখতেই হবে
এই বর্ষায় আমি বৃষ্টিতে গাছের মতো ভিজি
আমার শর্দি-কাশি হয়
বউ বলে, ঢং দেখে আর বাঁচি না!
এদিকে আমার শরীর থেকেও কেয়া ও মহুয়ার গন্ধ বের হয়
ভবঘুরে মেয়েরাও উদ্দীপক আগুন নিয়ে আশেপাশে ঘুরে
আমি উত্তেজিত হই এবং ভাবপ্রবণ হয়ে ওঠি
তবে বর্ষা নিয়ে কবিতা আমার লেখা হয়ে ওঠে না
কিন্তু বর্ষা নিয়ে একটা কবিতা আমাকে লিখতেই হবে!
---------------------------------------
মাহবুব লীলেন
[গাঢ়]প্রকৌশলী[/গাঢ়]
প্রতারণা না করলে মনে রাখে না কেউ এই ধর্মবিশ্বাসে আমাকে ঠকালে তুমি
দেড় যুগ ধরে জানতেও না আমার ভেতরে তুমি আছ
যখন জানলে; পোষাল না তোমার। আরো কী যেন কী চাইলে তুমি
ডাকলে
তুলে রাখলে
ভালবাসার কায়দা-কলা শিখিয়ে পড়িয়ে যাচাই নিলে; ফেল করালে
এর-ওর সাথে তুল্য করে আঁচড়ে কামড়ে তাড়িয়ে দিলে
শুভাকাঙ্ী-সভা করে দূরে থাকার নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দিলে
বুঝিয়ে দিলে দাগ না দিলে মনের মধ্যে থাকে না কেউ
না বলেও যে মনে রাখে;
মনে রাখার জন্য তুমি তার মনটাও পুড়িয়ে দিলে
[গাঢ়]ভারুয়া[/গাঢ়]
খুশি হবার কিছু নেই স্যার
ভালবেসে নয়; তুমি ফ্রি আছ বলেই তারা তোমাকে ডাকে
অথবা ডাকলেই তুমি যাও বলে ডাকে
নিজেদের একা সময়ে তোমাকে কথা শোনার মানুষ বানাতে ডাকে
নিঃসঙ্গ পথে সহযাত্রী বানাতে ডাকে
তাদের মন খারাপে তারা তোমাকে ওষুধ বানাতে ডাকে
তারা তোমাকে ডাকে কারণ ডাকলেই সম্মানিত বোধ করো তুমি আর প্রাণপণ চেষ্টা করো আরো সম্মানীত হয়ে উঠার আর তোমার মতো এমন বহুমুখী সার্ভিস এজেন্সি অন্য কোথাও নেই তাই
তারা ডাকে আর
চবি্বশ ঘণ্টা বেয়ালি্লশ কিসিমের কাজের জন্য তোমাকে পাওয়া যায়
তাই সারাণ তারা তোমাকে ডাকে
এবং ডাক না শিখেও কেউ কেউ ডাকে
আপ্লুত হবার কিছু নেই স্যার। নিজেকে মূল্যবান ভাবারও কিছু নেই
যদি বিশ্বাস না হয় তবে তোমার একা কিংবা মন খারাপের দিনে
যে কাউকে ডেকে দেখো; একটা কুত্তার বাচ্চাও ধরবে না ফোন
---------------------------------------
মাহবুব মোর্শেদ
[গাঢ়]রিকা পর্ব[/গাঢ়]
ঠাকুরের গ্রামে ছোট ছোট পাড়ায় পাড়ায়, মাঝে মাঝে বয়ে গেছে বিল ঝিল,নদী
টাঙ্গন। সেইখানে এক গ্রামে রিকা থাকে। তার সেই বাড়ি হতে আসন্ন আশ্বিনে মাড়াই
কলের ধোঁয়া দেখা যায়।
আখের গাড়িতে বাহিত সুমিষ্ট আখরাশি, যাহা কিনা ঘাসের
স্বজাতি, ইহাদের- তারা সব দেখে থাকে অবনীন্দ্র ঠাকুরের সনে। রিকা ও রবীন্দ্রনাথ
দুইজনে বৈকালিক চায়ের আসরে ধূমায়িত অগি্নর সকাশে নানামুখি গান গেয়ে থাকে।
আর জলাশয়ে, বিভিন্ন কাশের বনে আজি এ আশ্বিনে ঠাকুরের গ্রাম কাঁচসম ঝলকে
ঝলকে। সেইখানে রিকা তার 22শে শ্রাবণে পাড়ায় পাড়ায় অবিরত লিখে যায় নামাবলী
ইহাদের, বিনয়ের অবিনীত আকাশের, ধোঁয়াচ্ছন্ন গোধূলী মেঘের। এইকাশ,তুমি সখা
তার প্রাণে কোন অবকাশে আরবার ফুটিয়াছো প্রভু? আর হে কদম তুমি ঈশ্বরীর হতে
দূরে, অদূরবর্তী মেঘের উপরে না হয় ফুটিও এই পৌষে অথবা আশ্বিনে।
আরও ধীরে
জীবন বাবুর সাথে রাস্তার মোড়ের দোকানে চা খেতে খেতে স্থানীয় কাউকে না হয়
জিজ্ঞাসিও কোন পথে যেতে হয় রিকাদের বাড়ি। এই শীতে নিশুতি প্রহরে। তারপরে
হয়তো চলিলে একা যেই পথে তারা দুই বোন কলেজের মেয়ে হলে রাতভর ঘুমিয়ে, না
ঘুমিয়েও থাকে। দ্বারখুলে মিলে মিশে দুইবোন যখন প্রভাতে উত্তরের পানে রয়েছে
তাকায়ে, সোয়েটারে ঢাকা তার লাল জামা। তখনও হয়নি চা, আবারও ডাকেনি মা।
অলস হে প্রাণ তুমি শিলিগুড়ি হতে এসে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতে অবকাশ নিরসিও ভাই।
যাতে ওই হিমালয়, তাকালেই দেখা যায়। রিকাদের বাড়ি হতে সেই হিমালয়।
---------------------------------------
অর্জুন মান্না
[গাঢ়]বিলাপ[/গাঢ়]
এসো, একটু পাপ করি
দু'জন একসাথে
পাপ ঝুড়ি ভরি
[গাঢ়]প্রতিকৃতি[/গাঢ়]
এসো নারী; বসো তেপান্তরের কোলে-
আলোর স্বল্পতা মা করো
আমি অন্ধ আলোহীন পা ফেলে চলি
রাত তার কবচ ভরে অন্ধকার দিয়েছে
দেখো; অন্ধকার কতটা ভবগুরে, কতটা কোমল
দেখে নাও।
বন্ধ করো চোখ, হাত বাড়াও
কী ঠেকছে?
পাপ লোভ ঘৃণা?
মানুষের নগ্ন শরীর।
পুরুষ?
তার নপূর্বের ধর্ষন যন্ত্র?
ছোঁয়ে দিয়ে এসো।
অন্ধকার ছোঁয়ে দাও
আমিও ওমন-
অমাবশ্যা অন্ধকার
শরীরের ওপর করপোরেট ড্রেন
বয়ে যায়
শুধু_
নদী বয় না
আলো সয় না
[গাঢ়]ফায়ার ব্রিগেড[/গাঢ়]
তাঁর পাশে আগুণ ছিলো, আকাশ ছিল দূরে
কাছাকাছি কেউ ছিলনা, আগুণে সে পুড়ে
[গাঢ়]ধূধূ[/গাঢ়]
বিজন বাড়ি সজন গাঁ
আমার কাছে এসো না
---------------------------------------
রাগ ইমন
[গাঢ়]কামসূত্র শিখতে চাই[/গাঢ়]
দেখে যাও বৎসে!
এ মহা মিলনে শিখে নাও কিছু জরুরি সূত্র।
বাৎসায়নের মত একদিন তুমিও লিখবে_
একটি দেশের রূপকথা পূত্র।
আহা গোলা ভরা ধান তার
নদী ভরা নৌকা আর
মানুষ গুলো ভারি পরহেজগার,
তসবী ছাড়া নেই উবগার!
দেখো দেখো কি মহা জোট হয়ে মিলে যায় সব বেগম আর সাব!
কে কারে কেমনে লাগায়, পেঁচিয়ে যায় রে সকল হিসাব!
"গুরু,
এই কি শেষ নাকি শুরু?
এদের কষ্ট হয় না এত লাগাতে, এত্ত পুরু?"
হা আবাল, হা নাবাল, এ বড় রঙিন পুঁজিবাদ কনডম,
সবাই সবার আদম, আহা, হাওয়ায় ভাসে গন্ধম!
রে মুরিদ, তোর মুরোদ হলো না এই নাটিকা বোঝার?
সাধ বলিস পুংশকের আর কর্ম হলো খোঁজার!!
তোর হয়নি সময় বোঝার?
"কিন্তু, ওস্তাদ!!!
এদের না সারা বছর বিবাদ!
এরা না চোখের বালি, বাড়া ছাই কারো পাতে
এরা না মারে মুখে মুখে,না যদি পারে হাতে?"
"হা আবাল, হা নাবাল, মুরিদ, তোরে শেখানোই মিছে!
দিনের আলোয় দেখায় ঝগড়া
ব্যবসা, বিয়ে, এক লগে
কামায় টাকা ড্যাগরা ড্যাগরা
মদ্য পান ও এক মগে!
হাতে মারে না, হাত মারে মিলে মিশে সব পিছে!
"গুরু, লেখায় টেখায় কাম নাই
লেখকদের ও দাম নাই।
এবার চলো শিখি যাই, মহা মিলনের সূত্র
যাইবো ভেসে উন্নযনে মা, কন্যা, পূত্র!!"
হা আবাল, হা নাবাল, ওদের ও নাই বেল।
আসল যারা নাড়ছে কাঠি, লাগ ভেল্কি ভেল!
তাদের কাছে যাইলে হবে তোমার দামাদামি
হইতে হবে পূত্র কারো , নইলে মরা স্বামী!
পরম্পরাই দামী
"গুরু, স্বামী কোথায় পাবো, আর আমি তো কানাই!
বদলে ফেলে, বলেন যদি, বৃত্ত দুটো বানাই!"
হা পূত্র, এই তো বুঝেছো লাইন
খুশি করো কাকাকে আর খালায় রাখো ফাইন!
বলবে কথা যেনো তুমি গভীর জলের বাইন।
মনে রেখ, কাকা-খালা, এদের কথাই আইন।
বৃত্ত তোমার লাগবে দুটো বটে
দণ্ড খানাও রাখিও পকেটে
কাকার যেমন লাগবে তোমার সেবা
সুন্দরীও চাইবে যখন, দেবা!
এটা হলো উন্নয়নের ফমর্ূলা
নাকের আগায় ঝুলছে জোয়ার হতে
কখন, কোথায়, কেমনে কি এর ভর গুলা
কাম সূত্রে কেল্লা করিস ফতে!
কনডমের এই পুঁজি নাহি ফুরাবে হায়
রাজার নীতির চাপে নটে মুড়ায় যায়!!!
---------------------------------------
আ স ম মাসুম
[গাঢ়]অস্পৃশ্য অন্তরালের প্রতি...[/গাঢ়]
যার অশ্রু কথন বুঝতে পারিনি কখনো...
এক আজলা অন্ধকারে ছিল আমার ঠিকানা -
দেখো একবার,আমি আজ স্বপ্ন যাজকের মতো
শুরু করেছি অনন্তের বুক ছুঁয়ে পথচলা -
এইসব নাগরিক ইচ্ছাকে ভাসান দিয়ে অবশেষে
পৌরানিক বাউল হবো আমি -
তোমার চোখের স্বচ্ছ সফেদ একবিন্দু উদাস জলের মতো।
তোমার নিখাদ ভালোবাসার ছোঁয়ায় অন্তর পুঁড়ে খাঁটি -
এমন শুধু পুঁথি পুরাণে পাওয়া যায়...
মলুয়ার পালা...বিনন্দের কিস্সা...মৈমনসিং গীতিকা...
আমার আকাশে দূর্দান্ত মেঘ,
তুমি না আসলে, না হাসলে, বৃষ্টিই হবে না...
প্রতিদিন মেঘ বোঝা হয়ে পথ চলি রৌদ্দুরে।
এসো দুজন মেঘালয় বৃষ্টিতে সনাত হই।
তোমার স্পর্শহীনতায় আমি ক্রমশ নিঃসঙ্গ ঈশ্বর ছুঁই।
শিল্পের দহনে নারী তোমাতে আবদ্ধ হই।
---------------------------------------
মঞ্জুর মোহাম্মদ
[গাঢ়]ব্যবধান[/গাঢ়]
গুরুচরণ বাউরীকে; যিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এখন চা বাগানের অকর্মা কুলি
স্নেহের আদরে কাটা
মার্জিত কেশের মুকুট বিছানো জমিন।
টিলার উঠোনে টিলা
যেনো এক বহর উটের পিঠ।
এমনি মাটির আলুথালূ শিরগতর কাঁধে
আহা কি সুন্দর অপূর্ব সমতালে
গুল্মের সমাজ।
বিশ্রামের আদলে হৃদয় টানে শিল্প চোখ,
তাইতো শখের সময় আর মনের মানুষ
ঢল নামে রোদের ভাটায়।
অভিসার ফুরালেই ওখানে
রাতের আড়ালে সূর্য লুকায়।
তখন আনন্দ চোখ খুলে
শিল্প লোভ তৃপ্তি নিয়ে
ধন্য পায়ে- কেবল বাড়ি ফেরা।
এইভাবে সকল পথিকের থাকে পথ
দিনের শেষ সীমানায়।
অথচ কেউ জানেনা-
যাদের হাতে শুভিত প্রকৃতির কলম
এঁকেছে ছন্দের নন্দিত গুল্মের সমাজ।
তবু বুভু পেড়ে পড়ে না সুখাদ্যের বুনিয়াদ।
কেবল তারাই জানে কতো ঘাম কতো শ্রমে
পশমের গোঁড়ায় লোনা জলের বৃষ্টি নামে।
ত্বক পোড়া রোদের কামড়ে
জির্ণ দেহের মানুষ তারা
প্রকৃতিকে কেবল দিতে জানে প্রাণের সমাদর।
---------------------------------------
সামস শামীম
[গাঢ়]মাতালের গান[/গাঢ়]
এতো তিড়িং নৃত্য জানে ধানকিনা মাছ
নিয়েছ কখনও তিতপুঁটি মাছের স্বাদ?
চরপড়া মরা গাঙ জেগে উঠলে
জোয়ারের ভয় জাগে মনে
তারচেয়ে ভালো বরং
স্রোতের বিপরীতে চলা।
---------------------------------------
শফিকুল ইসলাম খান
[গাঢ়]আমি ফিরে এসেছি[/গাঢ়]
আমি ফিরে এসেছি
ভেজা বর্ষার জলের মতো ফিরে এসেছি।
এই সবুজ, সবুজের ঘ্রাণ
সব-সব চেনা, চেনা পথ
চেনা শৈশব-কৈশোর তারুণ্য
এই পথের ধুলোতে মিশে আছে।
আমাকে আলিঙ্গন করো পথ
আমি এই ধুলাতে মিশে যেতে চাই,
আমাকে আলিঙ্গন করো।
---------------------------------------
হাসান আওরঙ্গজেব
[গাঢ়]নিরন্নের দিনে নির্জন অবকাশ[/গাঢ়]
তোমার হলুদাভ স্বর্ণকমল
তৃণভূমি তুলে দাও
কোনও ভুমিহীন চাষীর শক্ত সমর্থ্য হাতে
অনাবাদী ভুমির কষ্ট অনেক!
লাঙ্গল কলার কর্ষন রমণে তুমি
ভুলে যাবে শস্যহীনতার দুঃখ
---------------------------------------
হাসান মোরশেদ
[গাঢ়]আন্না আখমাতোভা কবিতার গনিকা কবিতার তাপসী[/গাঢ়]
আন্না আখমাতোভা, যার পুরো নাম ছিল আন্না আন্দ্রিভনা গোর্নিকা। রাশান কবিতার 'সেন্টা পিটার্সবার্গ' ঘরানার প্রধান কবি হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল একটা সময়ের শিল্প ও শিল্পবোদ্ধাদের সংঘ।
আন্না'র নিজের গল্প তেমন আলাদা কিছু নয়। সকল সমাজে সকল সময়ে একজন কবি এবং একজন প্রতিভাবান মানুষের বেড়ে উঠার গল্প। হঁ্যা, নারী হিসেবে তার গল্প আরো বেশি কিছু বেদনাময়।
কিশোরী আন্না'কে নাম বদলাতে হয়। বাবা চাননি বখে যাওয়া মেয়ের আজেবাজে লেখার সাথে তাঁর অভিজাত নাম উচ্চারিত হোক।
প্রথম বিয়ে আরেকজন কবিপুরুষের সাথেই। নিকোলাই গোমিলয়েভ, যিনি কখনোই আন্না'র কবিস্বত্বাকে গুরুত্ব দেননি। একবার ভীষন েেপ গিয়েছিলেন, যখন আলেক্সান্দর ব্লক ঘোষনা করেছিলেন 'কবি হিসেবে আন্না, নিকোলাই থেকে অনেক উঁচুতে'
এরপর আরো দু'জন বিদগ্ধ জনের সাথে তার ঘরসংসার।
সবশেষে নোবেলজয়ী 'বরিস পাস্তরনেক' এর সাথে রহস্যঘেরা প্রেম, যা শেষপর্যন্ত পরিনতিহীন।
তবে আন্না আখমাতোভা'র জীবনে পরোভাবে সবথেকে গভীর দাগ ফেলেছিলেন কমিউনিষ্ট লৌহমানব জোসেফ স্ট্যালিন।
আন্না ও তাঁর সমসাময়িক কবিগন রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে ব্যক্তিগত নির্জনতাকে ঘিরে যে ঘরানার কবিতা লিখতেন, বলশেভিক বিপ্লবের পর সেগুলোকে প্রতিবিপ্লবী আখ্যা দেওয়া হয়। স্ট্যালিন আমলে তাঁর প্রথম স্বামী কবি গোমিলয়েভ' কে মৃতুদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁর তৃতীয় স্বামী নিকোলাই পুনিনও মারা যান শ্রমশিবিরে। পার্টিজান হওয়ার পরও পাস্তোরনাক এর সাথে পার্টির আচরণ তো ইতিহাস।
আন্নার একমাত্র ছেলে'রও পুরো তারুণ্য কেটেছে বন্দীশিবিরে।
স্ট্যালিনের জন্য প্রশংসাগাঁথা রচনা করেও আন্না দীর্ঘবছর ছেলেকে দেখতে পাননি। স্ট্যালিনের রাজনৈতিক সহচর আন্দ্রে জিদানভ একবার জনসম্মুখে তাঁকে আখ্যায়িত করেছিলেন' অর্ধেক গনিকা, অর্ধেক তাপসী' বলে। পার্টিজান ছিলেন না বলে 1925 থেকে 1952 এ দীর্ঘসময়ে তাঁর কোনো কবিতা প্রকাশিত হয়নি সোভিয়েতে। পশ্চিমে পালিয়ে যাওয়া কবিবন্ধুদের ধারণা ছিলো আন্না আর বেঁচে নেই।
বাইরের পৃথিবী আন্নাকে প্রথম জানতে পেলো যখন তিনি 1965 তে ইতালি ও ইংল্যান্ড ভ্রমণের অনুমতি পান।
ইংল্যান্ডে এলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান সুচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে।
আন্না'র কবিতাগুলো আরও বেশি নন্দিত হতে থাকলো 1966 তে তাঁর মৃতু্যর পর।
সেন্ট পিটার্সবার্গ এর কাছে গড়ে তোলা হয়েছে 'আন্না আখমাতোভা' স্মৃতি জাদুঘর, সেখানে জীবনের এক দীর্ঘ সময় পার করেছিলেন এই কবিতার তাপসী।
মুল রাশান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা আন্না'র কবিতা প্রথম পড়েছিলাম অন্ততঃ একযুগ আগে। বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করা এক কিশোরের জন্য, সে পাঠ অবশ্য বেশ ভারী ছিলো।
তবু অনুভূতি দিয়ে ধরতে চেয়েছিলাম। ধারনপর্বটা শেষপর্যন্ত কিছুটা বোঝা আর অনেকটা না বোঝাতেই আটকে গিয়েছিল।
একযুগ পর যখন পেশাগত কারনে ইংরেজি চচ্র্চা চালিয়ে যেতে হচ্ছে, আর চমৎকার যোগাযোগ ঘটেছে কিছু মানুষের সাথে, সারা পৃথিবীর কবিতা যাদের পঠনে ও মননে_ ঠিক এ অবস্থায় স্মৃতিতে ফিরে এলো আন্না আখমাতোভা 'কবিতার গনিকা, কবিতার তাপসী'।
মুল রাশান থেকে ইংরেজি। সেখান থেকে বাংলা।
আর এটা কোনভাবেই আরিক অনুবাদ নয়। যা করেছি তাকে আমি বলি, ভাবানুবাদ।
যেনো এক মহান শিল্পীর অাঁকা ছবি দেখে এলাম। এবার চোখ বুঁজে নিজস্ব কল্পনায় তাকে আবার দেখলাম। চোখ খুললাম।
এবার নিজের অাঁকার পালা, সেই ছবিটাই। ছবিটা ঠিক রাখার চেষ্টা তো থাকবেই, কিন্তু জলরংয়ে অাঁকা মুল ছবি যে এবার পেন্সিলে অাঁকা হয়ে যাবেনা, এমন নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না।
[গাঢ়]অন্যজীবন[/গাঢ়]
এসব ছাড়িয়ে অন্য কোথাও জীবন আছে জানি,
অন্য রকম। সেই জীবনে একটি কিশোর সন্ধ্যেবেলা
সীমানা ছাড়ায়। এক কিশোরী, সেই কিশোরের
চুলের ফাঁকে আঙুল বোলায়।
হাজার কয়েক
প্রজাপতি তাদের ঘিরে জ্যোৎস্না ঝরায়।
কিন্তু আমরা টুকরো মানুষ, ভগ্নজীবন অাঁকড়ে থাকি
মুক্ত হবার প্রবল নেশায়, চারপাশেতে দেওয়াল গড়ি।
হঠাৎ কেবল হন্যে বাতাস, ভাবনাঘরে ঝাপ্টা দিলে
মনে পড়ে অন্য জীবন।
সেই জীবনে একটি কিশোর,
জ্যোৎস্নাময়ী এক কিশোরী...
অন্য জীবন, অন্য কোথাও_
আমরা কি আর পেঁৗছতে পারি?
[গাঢ়]অবকাশযাপন[/গাঢ়]
দণি সমুদ্রতীরে অন্য কেউ যাক অবকাশে
অন্য কেউ উপভোগ করুক, স্বর্গভূমি
এখানে উত্তুরে হাওয়া, এখানে আমি
আমার স্মৃতিরা মেঘদল হয়ে, ভাসে আকাশে।
পাশে কেউ নেই, আমি তো আছি আমার
সমস্ত অতীত ও সমপ্রতি
জ্বেলেছে প্রদীপ, যেনো নিয়তি,
সি্নগ্ধ শিখাটি হেমন্তবেলা সাথী উষ্ণতার।
।
[গাঢ়]প্রিয় বরিস, তোমার জন্যে[/গাঢ়]
ফুরিয়েছে আমাদের কথোপকথন
বিদেয় নিয়েছে বসন্ত বেলা
এসেছে স্তব্দতার প্রহর
ভেসেছে বিষন্ন ভোলা।
স্বর্গের ফুলদল প্যাকেট বন্দী
শবচারী হবে তারা,
শোকে নত বিশাল ছায়াপথ
ুদ্র পৃথিবী, কাফনে মোড়া। ।
[গাঢ়]শেষ প্রণয়ের গান[/গাঢ়]
ক্রমশ: শীতল হয়ে এসেছিলো আমার সকল
তখনো অনেকটা প্রহর হেঁটে যাওয়া কেবল
প্রাচীন গল্পের মতো আরো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ
হায়! কান্ত আমি, ফুরিয়েছে চলার শপথ।
হেমন্তের করুন সন্ধ্যায় কেবল জেগেছিলো
মেপলের শীর্ন পাতা, আর তারা বলেছিলো
'ওগো বিষন্ন মেয়ে, এসো বসি ওই প্রান্তে
এসো একসাথে ঝরে পরি এ কারণ হেমন্তে'
'আমি ও বিরহপ্রিয়, আমি ও কাঙ্গাল বড়ো
হে মেপল, হে প্রিয়... আমাকে গ্রহণ করো'
আমাদের শেষবেলা শুধু এই কথা হয়েছিলো
একটি প্রদীপ, তার হলুদাভ শিখা জ্বেলেছিলো।
[গাঢ়]আমার ছুটে চলা[/গাঢ়]
ছুটে চলা বেশ জ্যামিতিক।
কারো বেলা এক সরলরেখা
কারো বৃত্তাকার;
যেনো বেলা শেষে বাড়ি ফিরে আসা
অথবা, প্রতীা হারানো প্রেমিকার।
সবারই ছুটে চলা বেশ জ্যামিতিক
শুধু আমারই বেলা নিয়ত বিপরীত
স্মৃতি থেকে গন্তব্য মুছে গেছে,
মুছে গেছে নামসহ নারী
যেনো লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে
করুণ ট্রামগাড়ি। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।