এ লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আমার যুদ্ধাপরাধ
ইতিহাসের বই, নাকি 482 পৃষ্ঠার রোমাঞ্চকর এক সিনেমা? কখনও দিলি্লর রেসিডেন্ট সাইমন ফেজারকে ঘিরে ধরছে উত্তেজিত জনতা। ফেজার ঘুরে দাঁড়িয়ে হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করছেন, 'কী হচ্ছে?' হাবিলদার লোক সরিয়ে দিচ্ছে। এবং ফেজার পিছন ফেরা মাত্র সেই হাবিলদারের ইঙ্গিতেই তরবারির কোপ তার শরীরে। দিলি্ল ব্যাংকের ম্যানেজার মিস্টার কেরেসফোর্ড আর তার স ী দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে খুনে জনতাকে আটকানোর শেষ চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু মুহ র্তে তারাও লাশ। যাবতীয় ঘটনাই দিলি্ল শহরে।
11 মার্চ, 1857 সকাল 9টা থেকে 10টা মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে। দেড়শো বছর পিছিয়ে গেলে 3/11 সাহেবদের কাছে ভয়ঙ্করই ছিল!
এবং ইতিহাস শেখাল, ইতিহাস থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। কেন কানপুর, মারাঠা থেকে দলে দলে বিদ্রোহী সিপাহী চলে আসছে দিলি্লর দিকে? গরু আর শুয়োরের চর্বিমেশানো টোটা দাঁতে কাটতে হচ্ছে বলে? না। দিলি্লর মানুষ সেই সময় যে আবেদন নিবেদন জানাচ্ছে, 'গদর' বা বিদ্রোহ শব্দটাই নেই। কখনও লিখছে, দাঙ্গাফাসাদ।
কখনও বা 'জেহাদ'।
হঁ্যা, জেহাদ! একদিকে ইংরেজ পাদ্রিরা বলছেন, 'ভারতীয়রা অজ্ঞান অন্ধকারে। এদের প্রভু যিশুর আলো দেখাতে হবে'। অন্য দিকে দিলি্ল শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মৌলভী সরফরাজ আলি। তার পাল্টা জিগির, আমাদের ধর্ম কাফেরদের হাতে বিপন্ন।
'
উইলিয়াম ডালরিসঙ্লের নতুন বই 'দ্য লাস্ট মুঘল' এ রকমই রোমাঞ্চকর। আর সেই বই নিয়েই আপাতত বিদগ্ধমহলে তুলকালাম। একদিকে অমর্ত্য সেন, সলমন রুশদি, খুশবন সিংহ, মুশিরুল হাসানদের মুগ্ধ বক্তব্য, 'সাধারণ মানুষকে ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী করতে চান? তা হলে এই ভাবেই রোমাঞ্চকর সুখপাঠ্য ভঙ্গিতে ইতিহাস লেখা উচিৎ। ' অন্য দিকে গৌতম ভদ্র, ইরফান হাবিবের মতো বাঘা ইতিহাসবেত্তারা বলছেন, "এ বই ইতিহাস লেখার মডেল হলে বিপজ্জনক। "
সমঙ্্রতি এক দৈনিককে দেয়া সাাৎকারে স্কটল্যান্ডের ছেলে উইলিয়াম ডালরিমঙ্ল কামানের গোলায় গুড়িয়ে দিলেন 'বিদ্রোহী' ইতিহাসবেত্তাদের।
বললেন, 'সমস্যাটা কোথায় জানেন তো? এ দেশে ইতিহাস লেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাদার ইতিহাসবিদেরা। এবং কথায় কথায় তারা 'সাব-অল্টার্ন', 'পোস্ট-মডার্নিজম', 'পোস্ট-স্ট্রাকচারালিজম' গোছের কিছু ব্যাখ্যা আনেন, সাধারণ মানুষ ভয়ে পালায়। অথচ, এ রকম রোমাঞ্চকর ভঙ্গিতে ইতিহাস লিখলে আমজনতা পড়বে। "
3/11-এর সেই ঘটনা 9/11-এর জেহাদকে আবারো উসকে দিচ্ছে নাতো? এ শংকাও রয়েছে বোদ্ধা মহলে। তর্ক ইতিহাস লেখার ধরণ নিয়ে, তর্ক ইতিহাসের স ত্র নিয়ে।
এই বই লেখার জন্য প্রায় 4 বছর ধরে দিলি্ল, লাহোর, ইয়াঙ্গুনের মহাফেজখানায়, দলিল দস াবেজ ঘেঁটেছেন লেখক। সব চেয়ে ইন্টারেস্টিং ঘটনা দিলি্লর ন্যাশনাল আর্কাইভে। সেখানে শীতাতপনিয়ন িত ঘরে 1857-র সিপাহী বিদ্রোহের সময়কার প্রচুর দলিল ও নথিপত্র। তখনকার দিনে ভাঙা উদর্ু হরফ 'শিকস া'য় লেখা। কেউ জানাচ্ছে, বিদ্রোহের বাজারে অমুক আমার বউকে নিয়ে পালিয়েছে।
মিষ্টিওয়ালারা কোথাও বলছে, আগে দাম না পেলে সিপাহীদের আর মিষ্টি বেচা যাবে না। প্রায় 20 হাজার দলিল, এত দিন বিশেষ কেউ পড়েও দেখেনি। ডালরিমঙ্লের বক্তব্য, এই সব না জানা তথ্য এই বইতেই প্রথম যথাযথ ব্যবহৃত হল।
ডালরিমঙ্ল থামছেন না। 3 সপ্তাহে 35 হাজার কপি বিক্রি এবং সেই তুঙ্গসঙ্র্শী সাফল্যের পর বিশ্বখ্যাত প্রকাশনসংস্থা ব্লুমসবারির সঙ্গে তিনি এরই মধ্যে 4 খণ্ডে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস লেখার জন্য চুক্তি সেরে ফেলেছেন।
উইলিয়াম ডালরিমঙ্ল জানান, 'ইতিহাস আমার কাছে একটা হাজার দুয়ারি প্রসাদ। সেখানে অজস্র ঘর। কোনওটা সাবঅল্টান ইতিহাসের, কোনওটা আবার পপুলার ইতিহাসের। ' যার মানে দাঁড়াচ্ছে, লাস্ট মুঘলই ডালরিমঙ্লের সঙ্গে এদেশের ইতিহাসবেত্তাদের চূড়ান লড়াই নয়। সবে প্রথম রাউন্ড!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।