আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আর কিচ্ছু না হোক অন্তত ফুলবাড়িয়ার চিত্তরঞ্জন দাস, বিনা চিকিৎসায় শহীদ তার তিন শিশু সন্তানের মা জ্যোৎস্না রানী দাস কে বলতে আমরা পারব,

আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া সন্ধানো করিয়া স্বপ্নেরও পাখি ধরতে চাই আমি স্বপ্নেরও কথা বলতে চাই আমার অন্তরের কথা বলতে চাই... কাল সকালটা আমদের জন্য একটা সুন্দর সকাল হবে, মানবতাবিরোধী ট্রাইবুনালের প্রথম রায় কাল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে কাল । প্রথম রায়টা হচ্ছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খাড়দিয়া গ্রামের শতাধিক রাজাকারের সমন্বয়ে গঠিত আলবদর বাহিনী প্রধান ও রাজাকার কমান্ডার মাওলানা আবুল কালাম আজাদের। এলাকায় তার পরিচিতি 'খাড়াদিয়ার বাচ্চু' বা 'বাচ্চু রাজাকার' নামে। এই লোকটির আরেক পরিচয় বেসরকারী টিভি চ্যানেল এনটিভির “আপনার জিজ্ঞাসা” অনুষ্ঠানের আলোচক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মানুষের ইসলাম সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাব দিয়ে ধার্মিক মহলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন তিনি।

এই মাওলানা আবার বনানী মসজিদের ইমাম । শত শত লোক তার পিছনে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়ত বাচ্চু মিয়ার কুকীর্তির বিবরণ মহাভারত হয়ে যাবে তবু এই ভণ্ড আলেমের ব্যাপারে দু একটা কথা না বললেই নয়, একাত্তরে নতিবদিয়া গ্রামের শোভা রানী বিশ্বাস এই আবুল কালাম আজাদের কাছে হয়েছিলেন ধর্ষিত। এ গ্রামেরই নগেন বিশ্বাসের স্ত্রী দেবী বিশ্বাসেরও সম্ভ্রম লুটেছিলেন বাচ্চু। নতিবদিয়ার নকুল সরদার ও রঘুনাথ দত্ত “তুই রাজাকার” শীর্ষক ধারাবাহিক রিপোর্টের রিপোর্টার প্রবীর সিকদারকে জানান, লুটপাট- হামলা না করার শর্তে আমরা চাঁদা তুলে বাচ্চুকে দু’হাজার চার শ’ টাকা দিয়েছিলাম। তারপরও সে লুটপাট করেছে, গ্রামের দুই নববধূর ইজ্জত হরণ করেছে।

পুরুরা গ্রামের জ্ঞানেন জীবন বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে কচুরিপানার নীচে আশ্রয় নিয়েছিল। বাচ্চু সেখানেই তাকে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে। বাচ্চুর রাইফেলের গুলিতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান ফরিদপুরের ফুলবাড়িয়ার চিত্তরঞ্জন দাস। সেদিন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জ্যোৎস্না পালিয়ে রক্ষা পেলেও একাত্তরে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় তার তিন শিশু সন্তান। ২০১২ সালের ৩ মে জ্যোৎস্না রানী দাস রাজাকার মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কাজীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা করেন।

মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবু ইউসুফ সিদ্দিকী জানান, আমি পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ফরিদপুর স্টেডিয়ামের পাশে বন্দিশিবিরে আটকা পড়ি। আমি দেখেছি বাচ্চু রাজাকার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ এনে পাক সেনাদের হাতে তুলে দিতো। তিনি জানান, বাচ্চু পাক দোসরদের সঙ্গে বন্দিশিবিরের আটককৃতদের নির্যাতন করতো। ধর্ষণের জন্য মেয়েদের সরবরাহ করত void(1); এই বাচ্চু ও তার বাহিনী একাত্তরে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে হাসামদিয়ার হরিপদ সাহা, সুরেশ পোদ্দার, মল্লিক চক্রবর্তী, সুবল কয়াল, শরৎ সাহা, শ্রীনগরের প্রবীর সাহা, যতীন্দ্রনাথ সাহা, জিন্নাত আলী ব্যাপারী, ময়েনদিয়ার শান্তিরাম বিশ্বাস, কলারনের সুধাংশু রায়, মাঝারদিয়ার মাহাদেবের মা, পুরুরার জ্ঞানেন, মাধব, কালিনগরের জীবন ডাক্তার, ফুলবাড়িয়ার চিত্তরঞ্জন দাস, ওয়াহেদ মোল্লা, দয়াল, মোতালেবের মা, যবদুল, বাদল নাথ, আস্তানার দরবেশ সহ বিভিন্ন জনপদের প্রায় শতাধিক মানুষকে। হয়ত এ রায় হলে আমাদের অনেকেরই কিছু যাবে আসবে না , কিন্তু ফুলবাড়িয়ার চিত্তরঞ্জন দাস, বিনা চিকিৎসায় শহীদ তার তিন শিশু সন্তানের মা জ্যোৎস্না রানী দাস কে বলতে আমরা পারব, নগেন বিশ্বাসের স্ত্রী দেবী বিশ্বাসকে আমরা বলতে পারব " মা আমরা পেরেছি, তোমার মাটিকে আদ্র করেছিল যে বাচ্চু রাজাকার বীর শহীদের রক্তে, বীরাঙ্গনার আত্মচিৎকারে তার বিচার আমরা করেছি . . . " মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে৷ কত বিপ্লবি বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙা তাঁরা কি ফিরবে না আর? তাঁরা কি ফিরবে এই সুপ্রভাতে- যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে৷ মুক্তির মন্দির সোপান তলে... লেখা আছে অশ্রুজলে ৷ যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষা লভি সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা মৌন মলিন মুখে জাগালো ভাষা আজ রক্তকমলে গাঁথা আজ রক্তকমলে গাঁথা মাল্যখানি, বিজয়লক্ষী দেবে তাঁদেরি গলে মুক্তির মন্দির সোপান তলে... লেখা আছে অশ্রুজলে ৷ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।