আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই মেলা গতকাল

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

বই মেলা এখনা আকর্ষণ করে না আমাকে। নানাবিধ অনুশাসনের ভীড়ে বইমেলার হট্টগোলে নিজেকে অবাঞ্ছিত উটকো আগন্তুক মনে হয়। বারোয়ারী বইমেলার সময়টাতে দোয়েল চত্ত্বর থেকে টি এস সি পর্যন্ত ছমছম মানুষের ভীড়ে হেঁটে যেতে যেতে বিমর্ষ হতাম। বটি, স্যান্ডেল, রাজ্যের অহেতুক পসরা নিয়ে বসে থাকা মানুষ, উচ্চশব্দের গান, দিনমান উৎসবের সময়টাতে অসহ্য লাগতো সবকিছুই। পরিচ্ছন্ন বইমেলার কথা ভাবতাম।

তেমন সুযোগ হলো, বাইরের রাস্তার ভীড় সরিয়ে একেবারে পাঠক-লেখকের বই মেলায় গেলাম, তখন দুপুরে যাওয়া যেতো। বই মেলা জুড়ে ধুলা উড়ছে, তেমন ভীড় নেই, বই মেলা বই দেখা, বই বাছাই সবই অন্য রকম লাগতো। হুমায়ুন আজাদ তখন বিকালের সোহওয়ার্ডিতে দৌড়ানো বাদ দিয়ে নিবিষ্ট মনে বসে থাকতেন অনন্যার স্টলে। তার গলার স্বর, তাক কথা বলার ভঙ্গি, তার উচ্চারণ সচেতনতা আমার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকতো বইমেলা কালীন সময়ে। হুমায়ুন আহমেদকে আজাদের তেমন পছন্দ ছিলো না।

আমার বই মেলা বিনোদনের একটা অংশ ছিলো কল্পনায় হুমায়ুন আহমেদের বই নিয়ে তাতে হুমায়ুন আজাদের অটোগ্রাফ নেওয়া। অনেক ভেবেও সেরকম সাহস হয় নি, হুমায়ুন আহমেদের বইয়ে হুমায়ুন আজাদের অটোগ্রাফ নেওয়া হয় নি। বই মেলা তখন হুমায়ুন আহমেদের ভক্তদের কবলে। তিনি আসছেন, বইয়ের স্টলে মাছি থকথকে ভীড়। ইমদাদুল হক তেমন আকর্ষণের বস্তু হয়ে উঠতে পারেন নি।

প্রায়শই তার সাথে দেখা হতো। রিকশা দরদামের প্রতিদন্ডি। তাকেও বই মেলায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখলে মনে হতো, ম'লো যা ম্লেচ্ছতো পিছা ছাড়ে না- বই মেলা পর্যন্ত ধাওয়া করেতেছে। জাফর ইকবাল, তখনও তার বিখ্যাত গোঁফ সাদা হয় নি, নির্বিঘনে হাঁটতে পারতেন, হাঁটতে পারতো আনিসুল হক, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, দিলারা হাফিজ- অসীম সাহার কবিতা পড়ে তাকে গালি দেওয়ার তীব্র মর্ষকাম পূরণ হয় নি- কবির স্ত্র ীকেও বোধ হয় কবিতা লিখতে হয়, তাই তার বিবিজানও কবিতা লিখেন- অতিশয় অখাদ্য কবিতা এর পরও তাদের চামড়ার চোখে ধরা যেতো অবলীলায়। অবশ্য কারো সাথেই ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুযোগ হয় নি।

তাদের চিনতাম ফ্ল্যাপের ছবি দেখে। ফ্ল্যাপের একমাত্র উপযোগিতা। অহেতুক কাউকে হয়রানী করার ভালো উপলক্ষ হতে পারে বই মেলায় তাকে বিকেল বেলা ছেড়ে দেওয়া-যদি বিখ্যাত কিংবা জনপ্রিয় লেখন হন তিনি- হেনেস্তার চুড়ান্ত হবেন। এর পরের কোনো এক সময় স্বাস্থ্য সচেতন পাঠকেরা এবং ততোধিক সচেতন কতৃপক্ষ বই মেলায় সিগারেট ফুঁকা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর বই মেলার আকর্ষণ কমে গেলো। এবং তখন নিটান্ট দায় না পড়লে বই মেলায় যাওয়া হতো না, গেলেও বাংলা একাডেমী, সুপার ডিসকাউন্টে বই কিনতে।

মাঝে 4 বছর হাহাকার ছিলো, বই মেলার বাতিল ধুলা গায়ে মাখবো- তবে বইমেলা এখন উন্মুক্ত স্বাস্থ্যার্থিদের জন্য এমন ধারনা ছিলো না। হাজার হাজার মানুষ ছোট একটা পরিসরে গায়ে গা ঠেকিয়ে হাঁটা চর্চা করছে এমন বইমেলা আমি চাই না। উটকো মানুষ গায়ের উপর পড়লে সেটা উপভোগ্য না- যদি তেমন উপভোগ্যা নারী পড়তো হয়তো অন্যরকম হতো বিবেচনা- তবে পোড়ার কপালে তেমন জুটে না। ছেলেদের ধাককা আর কানুইয়ের গুঁতা যার নিত্যভক্ষণ তাকে মাছি থকথকে ভীড়ের সুন্দরী ললনা আকর্ষণ করে না। যাবো না, যাবোই না ভেবেছিলাম।

দুপুরে শাহবাগ থেকে রিকশা নিয়ে ভাবছিলাম কার্জন হল যাবো। যাওয়া গেলো না। টি এস সি পর্যন্ত আসার পরও পরিকল্পনা বদল হয় নি। সেখানেই রাস্তায় ব্যারিকেড। রিকশা চলবে না।

পরিকল্পনা ছিলো এই মাঝের পথটা হেঁটে তার পর দোয়েল চত্ত্বর থেকে রিকশা নিয়ে বাসা। টিএসসির গেটের সামনে আসতেই দেখলাম শরৎ বিখ্যাত শরীর নিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। তার পেছনে কড়া মাঞ্জা মারা কৌশিক আর তার বৌ। শিং ভাঙবো না ভাংবো না ভেবেও শিং মুড়িয়ে এঁড়ে বাছুর। হাঁটতে হাঁটতে বটতলা।

মাঝে র্যাব ভাইদের কর্মতৎপরতা- এর পর একে একে সব পরিচিত মানুষদের দেখা পাওয়া- সামনে কালপুরুষ, ঝড়ো হাওয়া, বাকী ,ব্রাত্য, জামাল ভাস্কর, এবং জেবতিক- ব্রাত্য কালপুরুষ ঝড়ো বাদ দিলে "অপরবাস্তবের কল্যানে সবার সাথেই টুকটাক আড্ডা হয়েছে। এর পর সাকিবালমাহমুদ এবং তার পরেই কাতরলোচন যুবকসহ ইমন, শুভ এবং তার প্রকাশক। বিশাল লটবহরের মাঝেই বইমেলা নীতিমালা ভঙ্গ করে ধুমপায়ী জনগনের প্রতিনিধি হয়ে আমরা ক'জনায় বিড়ি টানলাম। ক্লেশময় ধুমপান বলা যায়- স্পষ্ট আইন লঙ্ঘন করতে বিবেকে বাধে তবে ছড়ানো সিগারেটের অবশিষ্টাংশ দেখে সান্তনা পাই বেআইনি আচরন শুধু আমরাই করছি এমন না। শুভ'র নাকাল হওয়ার ঘটনায় বিমর্ষ হই।

একজন লেখককে অপরাধির মতো খানাতল্লাশী করা অনুচিত মনে হয়। তাছাড়া শুভ র চেহারায় তেমন প্রফেশনাল রংবাজ ভাব নেই- বেশ নিরীহ গোছের মানুষ। এর ভেতরেই জাফর ইকবালের উপর অটোগ্রাফ শিকারীদের হামলা- একবার মনে হলো তাকে গিয়ে বলি- জনা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে পকেটে স্ট্যাম্প প্যাড নিয়ে ঘুরেন, সাক্ষরতার লেভেলে আপনি অনেক উঁচু হতে পারেন তবে এই অটোগ্রাফশিকারিদের হাত থেকে বাচার সহজ উপায় টিপসহি। জীবন বাঁচাতে বৃদ্ধাঙ্গুলির ব্যাবহার শিখে নেন। ঝপাঝপ ছাপ মারবেন, আপনার স্পর্শ পেয়ে ধন্য হয়ে যাবে তাদের হৃদয়।

বই মেলায় কেজি মামুন " একমুঠো ভালোবাসা " বেচছেন 20 টাকায়- যদি তিনি স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান হতেন তবে কত দামে একমুঠো ভালোবাসা বেচতেন সে হিসাব কষতে কষতে আমি বইমেলা চত্ত্বর ছেড়ে ভাগলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।