বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় জনাব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস
আমার এবং আমার মতো হাজারো তরুণের সালাম নিন। আপনি একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে। তাই আমার মনে হয় আপনাকেও একটি খোলা উত্তর দেয়া উচিত। আপনি রাজনীতিতে আসবেন, এ কথা আপনি অনেকবার বলেছেন।
আবার এমনো বলেছেন যে, সৎ এবং যোগ্য প্রার্থী পেলে সরাসরি রাজনীতিতে নাও আসতে পারেন। আমরা আপনার কথায় কখনো আশান্বিত আবার কখনো আশাহত হয়েছি। আপনি রাজনীতিতে আসবেন এ বিষয়ে আমরা কেউ না বলব না। তবে আপনার কাছে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ও বক্তব্য আছে।
1. আপনি বলেছেন, দেশের মানুষ কোনো এক পরিস'িতিতে আপনাকে রাজনীতিতে আসার অনুরোধ করেছেন।
তার মানে আপনি তো মানুষের অনুরোধ পেয়েই গেছেন। তারপরও আপনি আরো জানতে চান, তার মানে আপনি এখনো দ্বিধাগ্রসত্দ যে আসলেই রাজনীতিতে সক্রিয় ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করবেন কিনা। আপনি কি মনে করেন যে, যেকোনো সেবামূলক কাজে মানুষের চাওয়া না চাওয়া কোনো বাধা হতে পারে? রাজনীতিতে আসা এবং গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি করা দুটোই কি মানুষের সেবার জন্য নয়? জনসেবায় রাজনীতি করবেন, নইলে নয়- এ কেমন কথা? গ্রামীণ ব্যাংক যখন করছিলেন, তখন আপনাকে আপনার ব্যাংকার বন্ধুরা বলেছিল যে গরিবরা কোল্যাটেরাল ছাড়া ঋণ শোধ করবে না। আপনি তাদের কথা শোনেননি। তখন আপনাকে কেউ এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেনি, এখন কেন আপনার আমাদের সম্মতির দরকার? আর রাজনীতি করবেন এটা তো আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার।
আমরা আপানাকে বারণ করার কে?
2. আপনি বলেছেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেশকে কী পর্যায়ে নিয়ে এসেছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করতে উদ্যোগী হয়েছে তা আপনি অবলোকন করেছেন। আপনার মতে, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কার কার্যক্রম আপনাকে আশাবাদী করেছে। তাহলে ঠিক এর আগের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তারা অবশ্যই আপনাকে আশাহত করেছিল। তখন আপনি চুপ করে ছিলেন কেন? তার মানে কি আপনি অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষায় ছিলেন?
3. দেশের মানুষ আপনার কাছ থেকে যা আশা করে, তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মকাণ্ডে আপনার অংশগ্রহণ করা উচিত-এ কথা আপনি বলেছেন। তার মানে আপনি দেশের মানুষের ইচ্ছা জানেন।
তাহলে আর কোনো ভণিতা কেন, অথবা দেরি কেন? 'যদি তোর ডাক শোনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে'- এ কথায় কি আপনি বিশ্বাস করেন না?
4. আপনি বাংলাদেশের সব মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। এটা আপনার প্রাপ্য। আপনি এটা অর্জন করেছেন। তবে এমন মানুষ আরো অনেকেই এ দেশে আছেন এবং আসবেন। এমন মানুষের মধ্যে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ আছেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল আছেন, কলিম শরাফী আছেন।
কেউ বেশি, কেউ কম। তবে আপনি ছাড়া কেউ নোবেল পাননি। আপনি যখন বারবার বলেন, এমন ভালোবাসা আর কেউ পাবেন কিনা আপনি জানে না; তখন আমার মনে হয় আপনি আমাদের ভালোবাসার ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান। আমাদের দেশের মানুষ ভালোবাসতে জানে। আমার ধারণা, যেকোনো জীবিত এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাকেও আমরা আপনার মতো বা আপনার চেয়ে বেশি ভালোবাসি।
তবে শহরের মানুষের ভালোবাসা স্বার্থপর। তারা ভালোবাসে টাকা ও ক্ষমতা। আমি তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত নই।
5. আপনি কি মনে করেন না যে আপনি আপনার তৈরি দল নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিলেই আমাদের রায় পেয়ে যাবেন? আপনি কি মনে করেন যে আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করা আর আপনার দলকে সমর্থন করা সমার্থক? আপনি একটি দল গঠন করলে সেই দলের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, আদর্শ, কর্মপন'া সবকিছু জেনে আমরা বলতে পারবো আপনি কি সঠিক না ভুল। আমরা আপনার রাজনৈতিক আদর্শ জানি না।
একটি রাজনৈতিক দল শুধু অর্থনীতি নিয়ে কথা বলে না। দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, আইন, বিচার, সবকিছুই নিয়ে তারা কাজ করে। আমরা জানি না আপনার সাংস্কৃতিক লক্ষ্য, জানি না আপনার ধর্মীয় অবস'ান। আপনি কি ধর্ম নিরপেক্ষ, নাকি মাহাথিরের মতো আধুনিক মুসলমান? আপনি কি মতিউর রহমান নিজামীকে রাজাকার মনে করেন, নাকি সাবেক মন্ত্রী? আপনি কি মনে করেন মদ এবং জুয়া হারাম? আপনি কোন্টা বিশ্বাস করেন- আমরা বাঙালি নাকি বাংলাদেশী। আমাদের তরুণ সমাজ কি নিজেদের ডিজুস সংস্কৃতিতে গড়ে তুলবে, নাকি আমাদের নিজস্ব পরিচয় আছে? স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবের অবস'ান কোথায় বলে আপনার বিশ্বাস? আপনি কি মনে করেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক? আমি এসব আপনার কাছ থেকে স্পষ্ট জানতে চাই, কারণ আপনাকে যারা ভোট দেবে তারা এসব প্রশ্নেই বিভক্ত এবং এবং এরাই সিদ্ধানত্দ নেবে আপনি তাদের ভোট পাওয়ার উপযুক্ত কিনা।
6. আপনি বলেছেন আপনি বিতর্কিত হওয়ার ঝুঁকি নেবেন যদি আমরা চাই। আমরা চাই না আপনি বিতর্কিত হোন। যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদল করতে পারবেন এটা আপনি বিশ্বাস করেন, তবে এর কথাও আপনি নিশ্চয় বিশ্বাস করেন, রাজনীতিবিদরা বিতর্কিত হবেনই-এ ধারণাও বদলানো সম্ভব। আপনি রাজনীতিতে এসে প্রমাণ করুন রাজনীতিবিদরা শ্রদ্ধেয়। রাজনীতি শ্রদ্ধা ও ত্যাগের কাজ।
7. এরপর আপনি অনেক সাংগঠনিক প্রশ্ন করেছেন। ক) আপনি ভালো জানেন যে কীভাবে সারা দেশে সংগঠন করতে হয়। নইলে গ্রামীণ ব্যাংক গড়লেন কীভাবে? খ) রাজনৈতি দল তার গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমাজ বদলায়, এটাও আপনি জানেন। গ) সব বয়স নিয়ে কাজ করতে হলে আপনাকেই বলতে হবে আপনি কি ছাত্র রাজনীতির পক্ষে? আপনি কি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন চান? ঘ) সৎ মানুষের অনেকেই আপনার আহ্বানে সাড়া দেবেন বলে আমার বিশ্বাস, তবে তাদের ধরে রাখতে হলে আপনাকেই পরিকল্পনা করতে হবে। ঙ) মনোনয়নের নানানরকম পদ্ধতি আছে, আমেরিকান আদলে প্রাইমারি ভোট হতে পারে বা অথবা আপনি ইন্টারভিউ নিতে পারেন অথবা আপনার মতো চিঠি ই-মেইল দিয়ে সংখ্যা গোনা যেতে পারে।
আপনি চাইলে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা ও লিখিত প্রসত্দাব তৈরি করা যেতে পারে। আপনি সৎ মানুষ খুঁজছেন আর আর আপনি জানেন না এটা কীভাবে সম্ভব- এটা মানতে মন চায় না। তাহলে এতদিন কাকে খুঁজলেন, কীভাবে খুঁজলেন? চ) সততা রক্ষার কোনো নিয়ম বা উপায় নেই। এটা প্রত্যেকের বিবেকের বিষয়। তবে এ কথা মনে রাখবেন, অসৎদের সৎ হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
আপনার দলে প্রাথমিক অনত্দর্ভুক্তির সময় ব্যাক্তির সততা যাচাই করে নেবেনে এবং পরবর্তীতে অভিযোগ পেলে তদনত্দ করে শাসত্দি দেবেন। এটাই সবচে সহজ পথ। ছ) দলের অভ্যনত্দরীণ গণতন্ত্র রক্ষা করবে আপনার দলের গঠনতন্ত্র। সেটা গণতান্ত্রিক হলে, তাকে মেনে চললেই হবে। জ) তৃণমূল থেকে মতামত পেতে হলে আপনার গ্রামীণ ফোনের একটি মেসেজ নম্বর ফ্রি করে দেন।
আপনি প্রশ্ন করবেন। আমরা মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেব মতামত। আমাদের কোনো বিল হবে না। সফটওয়্যার বলে দেবে 'হঁ্যা' বেশি, নাকি 'না' বেশি। এবার বলেন, আপনাকে আমার যে নম্বরগুলোতে ফোন করছি সেগুলোর কারণে গ্রামীণ কতো কামাই করবে।
আপনি যে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মানুষের মতামত জানতে চেয়েছেন, আপনি কি মনে করেন গ্রামে বসবাসকারী 80 ভাগ মানুষ এই পদ্ধতিতে মতামত দিতে সক্ষম? তাহলে আপনি কি শুধু শহরের মানুষেরই মতামত জানতে চান?
8. আমি একজন চিকিৎসক। চিকিৎসা করি বিনামূল্যে। ছোট ব্যবসা করি, স্কুলে স্কুলে বিতর্ক শেখাই প্রায় 20 বছর। সেটাও বিনামূল্যে আমি বিটিভিতে অনুষ্ঠান করতাম। বিগত সরকার ক্ষমতায় এসে আমার অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।
অভিযোগ ছিল, আমি নাকি রাজনীতি করি। অভিযোগটি সত্য ছিল না। আমার অনুষ্ঠানটির মতো আরো অনেক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়েছিল। আমি অনেকবার তাদের দুয়ারে অনুনয় করেছিলাম বিষয়টি যাচাই করার জন্য। তারা সেটি করেননি।
আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আমরা নোবেলের উপযুক্ত নই, তবে ভবিষ্যতে নোবেল পাবে এমন মানুষের জন্য উৎসাহ দিতে অনুষ্ঠান বানাই। আপনি চাইলে আমি আপনার দলের জন্য চিকিৎসা করতে পারি, টেলিভিশনে কথা বলতে পারি কিংবা লিখতে পারি। এবার বলেন, আপনি যদি নির্বাচনে না জেতেনে, সেদিন আমাকে কেউ ব্ল্যাকলিস্ট করবে না, আমাকে হুমকি দেবে না কিংবা আমার অপরাধে আমার পরিবার কিংবা আমার বন্ধুদের নির্যাতন করবে না। অথবা আমার আয়ের পথ বন্ধ করে দিতে সক্রিয় হয়ে উঠবে না।
9. আপনাকে লিখলাম অনেক আশা এবং হতাশা থেকে। আমি জানি না আমার লেখায় আপনি রুষ্ট হবেন কিনা। আমি সাহস নিয়ে লিখেছি এই ভেবে যে, আপনি আমাদের আগের নেতা-নেত্রীর মতো নন। আপনি আমাদের বন্ধু। আপনি আমাদের আপনজন।
আপনি রাজনীতিতে আসুন। আপনি বলুন, আপনি কি চান। যদি আপনার চাওয়ার সঙ্গে আমাদের সবার চাওয়া মিলে যায়, তবেই আপনি সফল হবেন। তবে মনে রাখবেন, রাজনীতি সরল পথে কোনো দেশে চলে না। ক্লিনটন সাহেবের দেশেও নয়।
আপনার অনেক শত্রু হবে। আমরা আপনার জন্য লড়বো কিন' সে লড়াইয়ের কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা আপনার আছে তো? আপনি তো বলেছেন আপনি সৌভাগ্যবান। রাজনীতিতে দুর্ভাগ্য সৌভাগ্যের যমজ।
10. আমি জানি আমার মতো অসংখ্য মানুষ আপনার ডাকে সাড়া দিতে আসবে। তারাও কিন' ঝুঁকি নেবে।
আপনি তখন তাদের পাশে দাঁড়াবেন তো? আপনার ফিরে যাওয়ার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক আছে। সহজে তার ক্ষতি করা সম্ভব না। আপনার হিলারি ক্লিনটনের মতো বন্ধু আছে। আপনি চাইলে যখন তখন আমেরিকা যেতে পারেন। আপনি কথা দিন, আপনাকে ভোট দিলে যদি বরিশাল কিংবা খুলনায় কোনো পিতার সামনে তার কন্যা নির্যাতিত হয় তখন আপনি কোনো সেমিনারে জার্মানিতে থাকবেন না।
আপনি বলুন, মিছিলে আপনার মেয়ে আমার মেয়ের পাশেই থাকবে। আপনার ভাই এবং আমার ভাইয়ের সম্মান আপনার দলের যোগ্যতা দিয়ে হবে, পরিচয় দিয়ে নয়। তাহলে আমি আপনার পাশে থাকবো। আমরা আপনার পাশে থাকবো কিন' আপনি সত্যিই আমাদের পাশে থাকবেন তো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।