আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটি কোন রম্য রচনা না, একটি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা---আমি বাথরুমেও গান গাই না

দেশ আমাকে কি দিয়েছে এই প্রশ্ন না করে প্রশ্নটা হওয়া উচিত আমি দেশকে কি দিয়েছি গুনগুন করে গান কে না গায়? আমি গাই না। সত্যি করে বললে ৭-৮ বছর হল গাই না। মনে মনেও না। গান শুনি কিন্তু গাইনা। কেন গাইনা সেই বেদনাদায়ক ইতিহাস আজ বলব ‘বাথরুম সিঙ্গার’ এই শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত।

শব্দটির আক্ষরিক অর্থ গোসল করতে করতে গান গাওয়া হলেও এর ব্যবহার আরও ব্যাপক। বাথরুমে অন্যান্য কাজ করতে করতে গান গাওয়া থেকে শুরু করে হাঁটতে হাঁটতে গান গাওয়া, কাজের ফাঁকে গুনগুন করা, রেডিও-টিভি বা সিডি প্লেয়ারে বাজানো প্রিয় গানের সাথে তাল মেলানো মানুষরাও এই খেতাবে মাঝে মাঝে ভূষিত হন। এই সিংগারদের আবার নাকি দু’টো প্রকারভেদ (হোস্টেল লাইফে বন্ধুরা তাই বলত) । এক ভাগে থাকে যাদের কন্ঠে নিতান্ত অপরিচিত গান শুনলেও মনে হয় এই গানটা যেন কোথায় শুনেছি! আরেকবার গাওয়ার অনুরোধ আসে। পরে মূল শিল্পীর গানটি সংগ্রহ করে শোনা হয়।

আরেকভাগে থাকে যাদের কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত শুনলেও মনে হয় গানটা পরিচিত, কোথায় যেন শুনেছি কিন্তু কিছু একটা মিলছেনা। আমার বন্ধুরা আমাকে এই দ্বিতীয় ভাগের শিল্পী হিসেবে গন্য করত। আমার গানের নাকি সুর ঠিক নেই, লিরিকস ভুল আর কন্ঠ নাকি ফাটা বাঁশ। আসলে হিংসাবশত ওরা এগুলো বলত-কারণ আমি মনে করতাম আমার মধ্যে গুণী শিল্পী হওয়ার সব উপাদান বিদ্যমান ছিল। যাই হোক ওদের কথাকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে আমি আমার গায়ক পরিচয়টাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আপ্রান চেষ্টা করতাম-বাথরুম, করিডর, ডাইনিং হল, পড়ার টেবিল সব জায়গায় নিজের সুললিত কন্ঠের সুর-মূর্ছনা ছড়িয়ে দিতাম।

আমি ছিলাম ভার্সেটাইল সিঙ্গার। সব ধরণের গান ই গাইতাম। এমনই একদিন গাইতে শুরু করলাম ক্লাসিক্যাল একটি গান। গান শুনেই আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু, যে কিনা কখনও আমার গান শুনে বাজে কথা বলেনি, বলে উঠল “তুই এই গানটি যে কোন মেয়েকে শোনালে সে তোকে ভালবেসে ফেলবে” । …………ইয়েস!!!এট লাস্ট সাম রেকগনিশন।

মনে মনে বলে উঠলাম। (যদিও তখন আমি প্রেমে আবদ্ধ, তারপরেও ভাল লাগে শুনতে যে আমার কোন একটি গুনের জন্য যে কোন মেয়ে আমার প্রেমে পড়ে যাবে-কার না ভাল লাগে:P) । বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিরে এতদিন পরে হটাৎ এই গানটা তোর ভাল লাগল কেন?” ও বলল, “আমারতো ভাল লাগেনি, আমি বলেছি এই গান শুনে যে কোন মেয়ে তোকে ভালবেসে ফেলবে। কারণ তুই গেয়েছিস------- ‘আমায় নহে গো ভালবাস, ভালবাস মোর গান’-------এই গানে তুই মেয়েটাকে অপশন দিয়ে দিচ্ছিস তোকে না ভালবেসে তোর গান ভালবাসতে। যেটা অসম্ভব অবাস্তব একটা ব্যাপার।

তাই মেয়েটা যেটা বাস্তবসম্মত তাই করবে-----তোকে ভালবেসে ফেলবে। কিন্তু সমস্যা হল তোর গার্লফ্রেন্ড আছে, পাশ করার পর বিয়ে করবি, ছেলে মেয়ে হবে এই অবস্থায় নতুন কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াটা কি ঠিক হবে?” চিন্তা করতে লাগলাম, ভাবলাম সত্যিই যদি ঘটনা তাই হয়, আর মনের ভুলে আমি কোনদিন এই গান টি গেয়ে ফেলি…………তখন কি হবে? সত্যি ই যদি কোন মেয়ে গান শুনে প্রেমে পড়ে যায় আমার বউ আমাকে আস্ত রাখবে না। ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবে। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য একটি রাস্তাই খোলা ছিল তা হল গান গাওয়া ছেড়ে দেয়া। সেটাই দিয়েছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।