[গাঢ়]=আগে উপজেলা পরে জাতীয় নির্বাচন[/গাঢ়]
2008 সালের শেষে বা 2009 সালের শুরুতে সংসদ নির্বাচন হতে পারে। এর আগে 15 বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করা হবে। পদক্ষেপ নেয়া হবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, ভোটার আইডি কার্ড প্রদান, নির্বাচনকে সন্ত্রাস ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করার। ঋণখেলাপি, কালো টাকার মালিক ও দুনর্ীতিবাজরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় ভোটার আইডি কার্ড প্রদান ও নির্বাচনী বিধি-ব্যবস্থার সংস্কার করার পর এ দুটি নির্বাচন সম্পন্ন করবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে এ দুটি নির্বাচন হবে টেস্ট কেস। এর মধ্য দিয়ে যাচাই-বাছাই হবে সবার জন্য সমান পরিবেশে অনুষ্ঠিত একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা। ভোটার আইডি কার্ড প্রদানসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার সাধনে সময় লাগবে অন-ত এক বছর।
এখন থেকে সোয়া এক বছর পর ইউপি নির্বাচন এবং দেড় বছর পর অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। এ দুটি নির্বাচন শেষে 2008 সালের শেষে বা 2009 সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে সন্ত্রাস ও কালো টাকামুক্ত করতে নেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ঋণখেলাপি, কালো টাকার মালিক, দুনর্ীতিবাজদের নির্বাচনে প্রাথর্ী হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। তাদের ভোটযুদ্ধ থেকে দূরে রাখার জন্য আইন করা হবে।
ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রদানের উদ্যোগও নিতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এমনকি নিষিদ্ধ হতে পারে ছাত্র রাজনীতি। এ কাজগুলোর জন্য সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মনে করে, বিগত 35 বছরে বিশেষ করে শেষ 15 বছরের অসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতি_ দুনর্ীতি, স্বজনপ্রীতি, অবাধ লুণ্ঠন, অনিয়ম, দলীয়করণ, রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, জনগণের প্রত্যাশায় সরকার তা অপসারণের ব্যবস্থা করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে দুনর্ীতি, স্বজনপ্রীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তার বক্তব্য যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি রয়েছে দিকনির্দেশনা।
রাজনৈতিক শক্তি দ্রুত নির্বাচনের লক্ষ্যে অস্থির-অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে জেনেও জনগণের সমর্থনের ওপর ভর করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের সামনে থাকা প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অগ্রসর হচ্ছে। সরকারের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, সমান পরিবেশ নিশ্চিত করে সবার অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা। প্রধান উপদেষ্টাসহ সবাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বললেও কেউ সময়সীমার কথা বলছেন না। রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক মহল দ্রুত সময়ে নির্বাচন চাইলেও তারা বুঝতে পারছেন, ভোটার আইডি কার্ডসহ জনগণের প্রত্যাশার নির্বাচন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সময় লাগবে।
সরকার ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করেছে। দুনর্ীতিসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন, তাদের তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। চলছে 'অপারেশন ফোর টুয়েন্টি'। দুনর্ীতি দমন কমিশনকেও নতুনভাবে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আজই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন দুনর্ীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদ্বয়।
দুনর্ীতি মামলা দায়েরের 45 দিনের মধ্যে চার্জশিট ও 60 দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার বিধি প্রণীত হচ্ছে। দুনর্ীতি দমন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও তদন- সেল থাকবে। রাজনীতিকে পরিচ্ছন্ন করতে নির্বাচন কমিশন হবে অধিকতর শক্তিশালী। বিধিবিধানের মাধ্যমে নির্বাচনে ক্লিনম্যান বা প্রকৃত রাজনীতিবিদদের প্রাথর্ী হওয়ার পথ সুগম করা হবে। তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব সুনির্দিষ্ট করা হবে।
প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কঠোর মনোভাব নিয়েছে সরকার। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে অ্যাকশন শুরু হয়েছে। বিদু্যৎ সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে নেয়া হয়েছে পদক্ষেপ। সূত্র জানায়, একটি যেনতেন নির্বাচনের জন্য নয়, অর্থবহ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের কল্যাণে যাতে মানুষ ভোট দিয়ে জবাবদিহিমূলক সরকার নির্বাচিত করতে পারে তার জন্য যত সময় প্রয়োজন তাই নেয়া হবে। ওই নির্বাচনে দুনর্ীতিবাজ, সন্ত্রাসী, গডফাদার, ঋণখেলাপি, কালো টাকার মালিকরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এজন্য শিগগিরই নতুন আইন করা হবে। নির্বাচনে বিজয়ী সাংসদরা আইন প্রণয়ন ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস-ার করার সুযোগ পাবেন না। স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে। এদের মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটানো হবে।
সেনাশাসক এইচএম এরশাদের শাসনামলে 1984 সালের 17 ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়।
ওই সময় 15 ও 7 দলের আন্দোলনের মুখে মার্চ মাসের নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হন এরশাদ। পরে '85 সালের 1 ফেব্রুয়ারি এরশাদ সামরিক শাসন কড়াকড়ি করে এপ্রিলে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করেন। ওই সময় এ ব্যবস্থা জনপ্রিয় হওয়ায় '90 সালে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হয়। '91 সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ বাতিল করে ফের থানা পরিষদ চালু করে। '96 সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী '98 সালের 15 নভেম্বর উপজেলা পরিষদ আইন পাস করে।
রাষ্ট্রপতি 3 ডিসেম্বর আইনটিতে সই করেন। '99 সালের 1 ফেব্রুয়ারি পর্যন- নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইনের কার্যকারিতা নির্ধারিত হয়। এছাড়া আইন কার্যকর হওয়ার 180 দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সে সময় নির্বাচন না হওয়ায় '99 সালের 27 ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচনের সময়সীমা পার হয়ে যায়। পরে আইন সংশোধন করে 180 দিনের স্থলে 330 দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান করা হয়।
সংশোধনীতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে যথাসময়ে নির্বাচন করতে না পারলে সুবিধামতো সময়ে এক বা একাধিক তারিখ নির্ধারণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের থাকবে। নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বিভিন্ন সমস্যার অজুহাতে উপজেলা নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকে। একপর্যায়ে 2001 সালের 4 এপ্রিল সরকারি দল সংসদে উপজেলা পরিষদ বিল-2001 পাস করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে দেয়। কিন' আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় সাংসদদের আপত্তির কারণে নির্বাচন করেনি। 2001 সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচন করার প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি 2002 সালের অক্টোবরে নির্বাচন দিতে একমত হয়। কিন' কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাধা দেন। তার প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও কমিটি নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিয়ে কেবিনেটে পাঠায়। কেবিনেটে বিলটি নিয়ে আলোচনা করা হলে নাজমুল হুদা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেন।
তার সঙ্গে যোগ দেন সে সময়ের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। অধিকতর পরীক্ষার নামে বিলটি ফেরত দেয়া হলে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এভাবে দু'দলই জনগণকে উপজেলা নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার উদ্যোগ নিচ্ছে। সব ঠিক থাকলে দেশে আগামী বছর 382টি উপজেলায় আবার নির্বাচন হবে।
2002 সালের ডিসেম্বর থেকে 2003 সালের জানুয়ারি মাসে দেশে সর্বশেষ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছরের জানুয়ারিতে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে নতুন পরিবেশে ভোটাররা যাতে আইডি কার্ড নিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন_ সে লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর আগেই বাস-ব অবস্থা বিবেচনা করে হয় ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকেই শুরু হবে আইডি কার্ডের যাত্রা।
এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।