। । । ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো । ।
।
মফস্বলে এ সময়টায় খুব শীত পড়ে। আসার সময় বৌ যত্ন করে জ্যাকেট, শাল, সুয়েটার গুছিয়ে দিয়েছিল। সাথে দিয়েছিল তুশকা কাশির সিরাপ। দু'তিন দিনের ব্যাপার - তবুও সতর্কতা, যদি ঠান্ডা লেগে যায়! শেষ মুহূর্তে বড় মেয়ে যত্ন করে গলায় মাফলার জড়িয়ে বলেছিল - একদম অবহেলা করবে না!
দুই.
অবহেলা করার সময়টুকুও নেই।
ভীষণ তাড়াহুড়া। অনেকগুলো মিটিং করতে হচ্ছে। টেবিল মিটিং, পথসভা, সমাবেশ, মহাসমাবেশ - পত্রিকার ভাষায় জনসংযোগ। মফস্বলে মিটিংয়ের চেয়ে কাজ বেশী, কোলাকুলি বেশী। এবার সময়টাও খুব গোলমেলে।
তবে ভাগ্যজোরে শীত সিজনে ইলেকশন, কিংবা ইলেকশন সিজনে শীত! আহ্, কী অপূর্ব সমন্বয়! তাই শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে জোরেশোরে। মাইকিং হচ্ছে, পোস্টারিং হচ্ছে। নামের আগে জনদরদী, সমাজসেবক, এলাকার নয়নমণি যোগ হচ্ছে হরহামেশা। শীর্ণ শরীরের হাড্ডিসার মানুষের হাতে হাসিমুখে রিলিফ তুলে দিয়ে বেশ তৃপ্তি পাওয়া যায়। পাশ থেকে সাঙ্গপাঙ্গের দল বলে দেয়
- "জিনিস নেও, তয় ভোটের সময় নিমক হারামী কইরো না..."
শুনে নেতা মুচকি হাসে।
দরকারী কথাগুলো দরকারী মুহূর্তে বলা খুব প্রয়োজন।
তিন.
শীতকালে হাঁসের মাংস খুব স্বাদ হয়। ঘন মসলা দিয়ে রান্না করা তরকারীটাও ভালো ছিল। খিদের চোটে গপগপ করে খাওয়ায় বারবার ঢেকুর উঠছে। লবঙ্গ দিয়ে রং চা বানানো হয়েছে।
ডাকবাংলোর বৈঠকখানায় বসে নেতা আস্তে আস্তে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। গলাটা ঠিক রাখতে হবে। এই শীতে গলা বসে গেলে সমস্যা। চিৎকার করে ভাষণ না দিলে হাততালিও আসে না তেমন।
...রাত প্রায় এগারোটার মতো।
পরদিনের প্রোগ্রাম ঠিক করে কর্মীরা ঘরে ফিরে গেছে। দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বসে আছে - যদি দু'চুমুক লাল পানি পাওয়া যায়, শীতের রাতে শরীরটা গরম হতো খুব! কিন্তু নেতার ভাবভঙ্গী সুবিধার ঠেকছে না। বুঝতে পেরে নেতা নিজেই বললেন
- ঢাকায় আইসো, তখন জমবো নে। বুঝো না, এখন ইলেকশনের সময় কোন দিক দিয়ে কোন কথা বের হয় আবার...!
- তাইলে গেলাম আজকে। সাধারণ সম্পাদক চেয়ার ছাড়ে।
- ঠিক আছে যাও, কালকে সকাল সকাল চলে আইসো। বাকী সব ঠিক আছে তো?
- ঠিক মানে? পুরা ঠিক! কোন টেনশন কইরেন না।
দুজনেরই ঠোটের কোণায় তখন লুকানো হাসি।
চার.
শেষ রাতের দিকে ক্যামন যেন একটা খোঁচাখুচিতে নেতার ঘুম ভেঙে যায়। গায়ের উপরের লেপটা কে যেন টান দিয়ে নিতে চাইছে।
ঘুমঘুম ভাব নিয়ে নেতা বলেন
- অ্যাই, কী হইছে?
- খুব শীত করতাছে।
ডিমলাইটের হাল্কা আলোয় নেতা দেখে - পাশে শোয়া মেয়েটি শীতে কুঁকড়ে আছে। খানিকটা মায়াও হয় - অনভ্যস্ত শরীরের উপর ধকলটা বোধ হয় একটু বেশী হয়ে গেছে।
নেতা কিছু বলার আগে জড়ানো গলায় মেয়েটি আবার বলে - খুব শীত করতাছে, লেপের এই পাশটা একটু দিবেন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।