আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাফ নদীর তীরে...কিম্বা তীরের পাশেই নাফ নদী...(5)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

4জানুয়ারী তারিখে আমার অবস্থা যা তা! ঘুম ভাঙলো সেলফোনের শব্দে। সময় তখন 8টা। আলমগীর মাস্টার ফোন দিছে...তাগো ক্যাম্পে যাওনের কথা আইজকা। তড়িঘড়ি কইরা উঠলাম বিছানা থেইকা। মৌসুমের জন্য নাস্তা আনতে টাকা দিলাম রুম বয়রে।

আমার নাস্তা করনেরও টাইম নাই...গিয়া দাঁড়াইলাম স্কুটার স্ট্যান্ডে, নুরুল আমিন ভাইয়ের থাকার কথা, কিন্তু তিনি নাই, কিছু করার নাই তখন আরেকজন স্কুটার আলারে ঠিক করলাম সাথে সাথে...তারপর নয়াপাড়া অভিমুখে যাত্রা... ক্যাম্পে পৌছানের আগেই জানি সামনের ইনসপেক্টরের চৌকি থেইকা পারমিশন লইয়া তারপর ভিতরে ঢুকন যাইবো। প্রথম প্রশ্ন ইনসপেক্টরের, কিসের জন্য আসছেন? আমি কইলাম ঘুরতে...দ্্বিতীয় প্রশ্ন, কি করেন? আমি তারে আমার চাকুরী স্থলের আইডি কার্ড বাইর কইরা দেখাইলাম। সে কি বুঝলো কে জানে, পাশে বইসা থাকা একজনরে কইলো, দ্্বীন মুহাম্মদ এরে লইয়া যাও, খানিকটা ঘুরাইয়া লইয়া আসো। তয় ক্যামেরাতে যাতে কোন ছবি না তোলা হয়। আমি দ্্বীন মুহাম্মদের সাথে চললাম ভিতরে।

পথিমধ্যেই তার সাথে পরিচয় পর্ব...দ্্বীন মুহাম্মদ নয়াপড়া ক্যাম্পের 5 নাম্বার ব্লকের একজন মাঝি, তার নিয়ন্ত্রণে 50/60 টার মতো ঘরের দায়িত্ব আছে। তার তথ্য অনুযায়ী এখন নয়াপাড়া ক্যাম্পে লোক আছে 14,000-এর মতো। 1769টা পরিবার বাস করে। আমি তার লগে হাটি আর ডিসিপ্লিন্ড একটা ক্যাম্পের চেহারা দেখি, আমার বোধ হয় রোহিঙ্গারা বেশ পরিচ্ছন্ন জাতিগোষ্ঠী...কিন্তু যাওনের আগে আমার যেই সব বন্ধু 91, 94 কিম্বা 98তে গেছিলো ক্যাম্প ভিজিটে তাগো কাছ থেইকা পাওয়া তথ্যে জানছিলাম রোহিঙ্গারা খুবই নোঙরা তাগো কোন পরিকল্পণা নাই, বাচ্চা বিয়ানো ছাড়া... কিন্তু এখন আসলে তাগো কোন একটা তাড়না আছে পরিবর্তনের, বা তারা আসলেও গোছানো চরিত্রগত ভাবে, কিন্তু যেহেতু নিজের ভূমি না তাই প্রয়োজনবোধ করে নাই অনিশ্চিত ভূমিরে গোছগাছ করনে। যাই হোক হাটতে হাটতে দ্্বীন মুহাম্মদ মারফত জানলাম ব্লক গুলি এখন কেমনে চলে, কিরম ভাবে তাগো আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রিত হয়।

দ্্বীন মুহাম্মদের আত্মবিশ্বাস চরম, সে কইয়া দিলো রোহিঙ্গা পল্লীতে কেউ আর এখন কোন ঝামেলা তৈরী করে না। সবাই নিজের অনিশ্চয়তা লইয়া ভালোই কনসার্ন। দেখলাম মধ্যবয়স্ক পুরুষেরা রাস্তার মোড়ে গোল হইয়া বইসা রোদ পোহাইতেছে। তাগো মধ্যে হয়তো কেউ কথা কয় মাঝে সাঝে...কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই দৃষ্টি কেরম ভাসাইয়া দেওয়া...কি যে ভাবেন তারা!? আমি আলমগীর মাস্টররে ফোন দিলাম দ্্বীন মুহাম্মদের সাথে হাটতে হাটতেই, সে আমারে কইলো কাশেম মিয়ার দোকানে গিয়া বসতে সে আসতেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমরা গিয়া বসলাম দোকানে।

সেইখানে বিভিন্ন ব্লকের মাঝিরা বসছে...ক্যাম্প ইনসপেক্টর বদলী হইছেন তারে ফেয়ারওয়েল দেওনের লেইগা পরিকল্পণা করতাছে তারা। আমি গিয়া একদল নেতা পাইয়া গেলাম মুফতে। ভাগ্যে বিশ্বাস করলে কইতাম বড় কপাইল্যা আমি। যাউগ্গা তারা সেই পুরানা ইতিহাসই আমারে শুনায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সেনা শাসক তাগো মুসলিম বইলা নির্যাতন কইরা বাইর কইরা দিছে...তাগো এখন কোন দেশ নাই...তারা এখন বাংলাদেশরেই নিজের দেশ ভাবতে ভালোবাসে... আমার কাছে রোহিঙ্গাগো এই ইসলাম প্রীতিরে নিতান্তই একটা চালাকী মনে হইলো...তাগো জীবন যাপনে ইসলাম আছে তা সত্য, মসজিদে গিয়া তারা নামাজ পড়নের চেষ্টা করে নিয়মিত। ঘর গুলি ছোট মাত্র 10ফিট বাই 15 ফিট হইলেও মসজিদগুলি বিশাল আকারের।

রোহিঙ্গা মেয়েরা বোরকা পরলেও সেইটা কেবল কোন কারণে বেড়াইতে বা কাজের সন্ধানে বাইর হইলেই পরে। আর ঘরে থাকার সময় তাগো পড়নে রাখাইনগো মতোন থামি আর ফুল আঁকা বার্মিজ টপ...আরো একটা বিষয় হুবহু রাখাইন মেয়েগো মতোন...মুখে চন্দনের চক্র আঁইকা ঘোরে তারা, আর যেই কারণে ত্বক অনেক মসৃন আর চকচইকা হয় তাগো। আমি গান শুনতে চাওনের পর দুইটা ব্যাঞ্জো নিয়া দুইজন তরুণ আইলো...তারা সেমেটিক ঘরানার বাজনাও বাজাইতে শুরু করলো, কিন্তু গান শুরু করনের আগেই কোন এক ইমামের নিষেধে বন্ধ হইলো...আমি জিগানোতে আলমগীর মাস্টর কইলো তাগো পুরান জমানার নেতারা মনে করে...গান বাজনার সাথে অনিয়ম আইসা পরে...নেশা ভাঙ চলে যেই কারনে...ক্যাম্পে এইসব চালানের নিয়ম নাই। কিন্তু তাগো শুরুটা দেইখা আমার এক্কেরেই তা মনে হয় নাই...যেই ছেলেটা ব্যাঞ্জো বাজাইতেছিলো ওর নাম জুবের...তার বয়স 17/18, সে জন্মই নিছে এই ক্যাম্পে...তারপক্ষে তো অন্য কোথাও থেইকা শিখনের উপায় নাই। রোহিঙ্গাগো মধ্যে এতোসব নিয়ন্ত্রণ, অহেতুক শৃঙ্খলার প্রবণতা এইসব আসছে অনিশ্চয়তার বোধ থেইকা।

এই দেশীয় মুসলিম ভ্রাতৃত্বের নৈকট্য পাওনের চেষ্টা থেইকা এই বিশ্বাস আমার দৃঢ় হইলো। তয় একটা জিনিষ দেইখা আমি একটু অবাকই হইছি, রোহিঙ্গা শিশুদের একটা বড় অংশ নারী শিশু...হয়তো জেনেটিক কোন প্রভাব আছে এই পরিসংখ্যাণের। কিন্তু এইটার সুবিধা নেয় রোহিঙ্গা পুরুষরা। তারা বিয়া করে একাধিক। এই বিষয় নিয়া জিগানের পর অবশ্য দ্্বীন মুহাম্মদ রীতিমতোন খেপলো...তার কথা এইটা তো অনেকেই করে আমরা করলে ক্যান সমস্যা হইবো।

আমি খুবই মজা পাইলাম তার বলার ধরনে, কিন্তু আমারে অবাক কইরা সে একবারো ধর্মীয় ফরজ বিয়ার কথা উল্লেখ করলো না। আর এই সময়েই আলমগীরের গোপণ কথা জানলাম, সে এর আগে বিয়া করছিলো, তারে 'ডাইভোর্স' দিয়া এখন আরেকজনরে বিয়া করছে। সে আমারে তার 2 বাচ্চার কথা শুনাইছিলো...এখন শুনলাম তার দুই বউয়েরই 2টা কইরা বাচ্চা। (আগামী পর্বে সমাপ্য)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।