কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
টেকনাফ যাওনের জন্য আমরা টার্মিনালের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে গিয়া পৌছাইলাম। বাস সার্ভিস এখন বেশ ভালো ঐ এলাকার, কিন্তু বাস পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চালাইতে গেলে একটু বেশি সতর্কতায় চলে...যেই কারনে মাইক্রোবাস এখন অনেক জনপ্রিয় । পুরা এক ঘন্টা বাঁচাইয়া দেয়...আমরাও মাইক্রোবাসে সওয়ার হইলাম। চাটগাইয়া একসেন্টে অনেক বিনোদন খুঁইজা পাই আমরা যারা ঢাকাবাসী, তয় ব্যক্তিগত ভাবে চাটগাইয়া বাংলারে আমার অনেক পছন্দ। অনেক বেশি অন্য ভাষার ইন্টার টেক্সচু্যয়ালিটি আছে...মাইকোবাসে আমি সেই মজা আর মৌসুম সেই বিস্ময় নিয়া চললাম টেকনাফ অভিমুখে...
এইরম টিলাময় পথে আমরা গত সাড়ে ছয় মাসের যুগল জীবনে প্রায় 4 বার গেছি...তাই অনেক ভালো লাগা থাকলেও মুগ্ধতা ছিলো না আমাগো চোখে।
আমি নজর রাখতেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলি কখন ক্রস কইরা যাই। আমার ধারনা ছিলো ক্যাম্প গুলি পাহাড় ঘেরা হওনের চানস আছে...তাই পাহাড় দেখলই চোখ দুখানি সুতীব্র...মৌসুমের প্রিয় পাহাড়ি বুনো ফুল। আমরা সোয়া একঘন্টার মধ্যেই টেকনাফের নীকটবর্তী... হঠাৎ চোখ টানলো বন্দরের কাছে সারে সারে নীচু কইরা বানানো বাশের বেড়া দিয়া বানানো ঘর। শয়ে শয়ে ঘর। আমার পাশের সিটে এক বৃদ্ধ বসছিলো, তার বয়স আশির কোটায় হইতে পারে, তারে আমি জিগাইলাম এইটা কি? সে আমারে যা কইলো তার থেইকা আমি খালি জাহাজী শব্দটার অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম।
বয়সের কারনে জড়ানো কথা। আমিও তাই আর উৎসাহ পাইলাম না কথা কওনে। আমরা টেকনাফ শহরে পৌছাইলাম। বাস স্টেশনে পোৗছানোর সময়েই মৌসুমের চোখে আটকাইছিলো হিলটপের উচু সাইনবোর্ড...আমরা রিকসা নিয়া আগে হিলটপ তারপর খাওনের লেইগা রেস্তোঁরা খুঁজতে বাইর হইলাম।
টেকনাফ শহরের খাওনের হোটেলের অভাব নাই এইটা আমি নিশ্চিত।
কিন্তু ঈদের টাইমে অলমোস্ট সবই বন্ধ...রিকসাআলা আমাগো প্রথমে নিয়া গেলো হোটেল সোনারগাঁওতে...ঐটা বন্ধ...তারপর গেলাম চিটাগাং হোটেলে...ঐটাও বন্ধ...তারপর আমাগো ঠাই মিললো হোটেল শেরাটনে। আমার চিরকালের পছন্দ সামুদ্রিক মাছ খাইলাম আর মৌসুম খাইলো তার চিরাচরিত মেনু মুরগী। যেই মাছ খাইলাম তার স্বাদ আমার কাছে সার্দিনের মতো লাগলেও ম্যাসিয়ার কইলো ঐটা হইলো চুমা মাছ...লোকালি যেইটারে মাইট্টা মাছ কওয়া হয়।
হোটেলে ফিরা ব্যাগটা থুইয়াই আমি বাইর হইয়া গেলাম...মৌসুম রুমেই থাকলো। টেকনাফ শহর একটা রাস্তার উপর তৈরী হওয়া শহর।
সেইন্ট মার্টিন যাওনের বন্দর শহরের বাইরে হওয়াতে শহরের কোনরম পরিবর্তন হয় নাই। হাজার হাজার টুপি আর দাড়িওয়ালা অলস লোকের শহর মনে হইলো ঈদের ছুটতে থাকা টেকনাফ। আগের ঈদের ছুটিতে বান্দরবানেও দেখছিলাম জনপদে উৎসব ভাবটা ছিলো পুরাপুরি, কিন্তু টেকনাফে ঈদ মানে ঢাকার মতোন দোকানপাট বন্ধ। বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নাই, কোন সিনেমা হল দেখি নাই...আমি চা'য়ের দোকানে বইসা খানিক্ষণ শহর বুঝনের চেষ্টা করলাম...আইলসামি আমার খুব প্রিয় একটা প্রপঞ্চ হওয়া সত্ত্বেও টেকনাফি আইলসামি আমার বিরক্তিকরই লাগলো...সম্ভবতঃ বেকারী আর কিছু ফিশিং কোলড স্টোরেজ ছাড়া কোন ইন্ডাস্ট্রি নাই এই শহরে। টু্যরিস্ট গো মানুষজন খুব ভালো চোখে দেখে না।
আলভীর কথা মতোই এরা আসলে টাকা কেন্দ্রীক ভাবনের চেষ্টা করে সবকিছুরেই।
গিয়া দাঁড়াইলাম স্কুটার স্ট্যান্ডে...নুরুল আমিন মাত্র তখন তার স্কুটারটারে ধুইয়া মুইছা পরিস্কার করতেছে...আমি তারে ঠিক করলাম রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্প পর্যন্ত। পথে তার সাথে বিবিধ কথা...রোহিঙ্গারা কেমনে শহরে বাঙালীগো সাথে একসাথে থাকনের কথা ভাবতেছে...যে কোন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতোনই অভিবাসীগো নামে যতো কূটকচালী, সব শুনলাম পুরা রাস্তায়। রোহিঙ্গা মেয়েরা দেখতে সুন্দর হয় এই তথ্য আমি প্রথম শুনলাম তার মুখেই। বাঙালী পয়সা আলারা তাগো বংশগতিতে সুন্দর চেহারার পোলাপাইন আনতে রোহিঙ্গা মেয়ে বিয়া করে দুই নাম্বার বা তিন নাম্বার বৌ হিসাবে।
এইটারে নুরুল আমিন জায়েজ কইরা দিলো পুরা...কিন্তু রোহিঙ্গা পুরুষরা বাঙালী মেয়ের প্রেমে পইরা যেই বিয়া করে সেইটা নিয়া তার আপত্তি আছে প্রবল। আমি বুঝলাম রোহিঙ্গাগো লেইগা বাঙালীরা এখন আর টেকনাফে খুব শান্তিতে নাই...কারন রোহিঙ্গারা তাগো অস্তিত্বের স্বার্থে যেই খাটনি, যেই শ্রম মূল্যে বিক্রি করে তাতে বাঙালী শ্রমিকগো অনেক সমস্যা তৈরী করে...তাগো আইলসামী বেশি জমেনা আগের মতো।
নুরুল আমিন আমারে নিয়া এক জায়গায় থাইমা কইলো এইটাই ক্যাম্প। আমি তো তাজ্জব! এ কী! এইটা সেই বন্দরের পাশের বস্তি টাইপ জায়গাটা। বৃদ্ধের সেই জাহাজীরা।
তুমুল উৎসবে আছে এই জনগোষ্ঠী তখনো, একটা হলুদ রঙের ব্যানারের নীচে দাঁড়াইয়া আছে একদল দাঁড়িওয়ালা লোক...মুসলিম এইড, টার্কি থেইকা আইজকা রোহিঙ্গাগো লেইগা কোরবানী দেওন হইবো। তিনটা মাঝারী সাইজের গরু আনা হইছে...রোহিঙ্গাগো মধ্যে আমি ধর্মীয় কোন অনুভূতি দেখলাম না এই কোরবানিতে, তারা বরং থালাবাটি নিয়া দাঁড়াইছে, কখন মাংস কাটা সম্পূর্ণ হইবো...নুরল্ল আমিনের সাথে কথা কইতেছিলাম আমি, যদি একজন মাঝির সাথে কথা কওন যায়, হাতে আমার হ্যান্ডি ক্যামকর্ডার...পাশের থেইকা একজন হঠাৎ কয়...এইটা সনি ক্যামেরা না? আমি এই গুলি সৌদী আরবে বেচতাম...আমি তাকাইয়া দেখি এক বাঙালী চেহারার তরুণ, বেশ স্বপ্রতিভ। তারে জিগাইলাম আপনে কই থাকেন? সে কয় এই ক্যাম্পেই এখন তার বাড়ি। আমার কিছুতেই বিশ্বাস হইতেছিলো না এই ছেলে রোহিঙ্গা...তার বাড়ির আঙিনায় গিয়া বইসা যখন তার ইন্টারভূ্য করতে শুরু করলাম তখন তার ভাষার পরিবর্তন দেখলাম মায়ের সাথে...ঐটাও চাটগাঁইয়াগো মতোনই একটা ভাষা। সেলিম তার দেড় বছর বয়সে এই দেশে আসছে...তারপর থেইকা এইরম ক্যাম্পে ক্যাম্পেই জীবন, মাঝে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বানাইয়া সৌদী আরবে 5 বছর চাকরী শেষে আবার মাঝি বাবার গদিরসীন হইতে দেশে ফেরৎ।
সে আমারে যেইসব কথা কয় সব হইলো আর্তি...এই দেশে তারা বাংলাদেশী হিসাবেই থাকতে চায়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরা তাগো নির্যাতন কইরা বার্মার থেইকা বাইর কইরা দিছে। ঐটা তাগো দেশ না আর...এখন তারা মুসলমান ভাতৃত্ব খোঁজে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।