আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাফ নদীর তীরে...কিম্বা তীরের পাশেই নাফ নদী....(1)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

চিরটাকালই অনিশ্চিত ভ্রমন পছন্দ আমার। তাই বাসের টিকেট করন ছাড়া আর কোন কিছুই আগের থেইকা বুকিং দেই না। এইবারো টেকনাফ যামু...অনেক রিস্কি যাত্রা...অপরিচিত জায়গা কিন্তু আমি আমার মতোই হুদা চিটাগাং পর্যন্ত টিকেট কাটলাম বাসের। আগে হয়তো এই সব বিষয় মাথায় এক্কেরেই আসতো না, কিন্তু এইবার সাথে মৌসুম...ওর তো আমার মতোন বাউন্ডুলে বাস্তবতা নাই...যদিও জানি, ও আমার এইসব হুদাই বাউন্ডুলেপনা নিয়া খুব বেশি বিরক্ত হয় না। হয়তো আমি ওর এই আচরনের সুবিধাটা নেই।

যাই হোক আমরা রাইত 12টার বাসের টিকেট কাটলাম। ঈদের দিন রাইত 12টায় বাস। আগের দিন বাপ মায়ের সাথে দেখা কইরা আসছি বিধায় ঈদের দিন আর যামুনা বাড়িতে...তাই সকালে ঘুমাইলাম সাড়ে 11টা পর্যন্ত। ঘুম থেইকা উইঠাই চরম ক্ষিদা। বাসায় মাছ ছিলো, কিন্তু রান্না করতে এক্কেরে কোন আগ্রহ পাইতেছিলাম না।

তাই বেলা 12টায় মৌসুম নুডলস রানতে গেলো। আমার মায়ের পরেই মৌসুমের নুডলস রান্নারে আমি রেটিং দেই। সকালের নাস্তা করনের পর থেইকাই দুপুরের খাওন কই খামু সেই বিষয়ে এরে ওরে ফোন দিমু কিনা তা নিয়া ভাবতে শুরু করলাম। শেষ পর্যন্ত মৌসুমের বন্ধু শর্মীরে ফোন দিয়া ওর বাড়ির দাওয়াত নিলাম। যদিও শর্মীগো বাসাতেও গরু কোরবানী দেওয়া হয় নাই...ওর বাপ আওয়ামি নেতা সরদার আমজাদ হোসেন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে চইলা গেছে।

এরমধ্যে আমরা গিয়া উপস্থিত। তারপর আড্ডা শুরু...এই আড্ডা চালাইতে হইবো সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত...এইরম কন্ডিশনে সাধারনতঃ আড্ডা জমে না...কিন্তু আমাগো আড্ডা জমাইলেন আজফার ভাই, তার বৌ মেলিসা ব্রাউনিং আর পিচ্চি মেয়ে সালমা। আজফার ভাই দীর্ঘসময় পর দেশে আসছেন, দেশের রাজনীতি নিয়া তার সাথে আলোচনা...বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃতি চারণ মূলক জাবর কাটা এই সব কইরা সময় যে কেমনে কাটলো টেরও পাই নাই। সাথে শর্মী তার বোন উর্মি বড় ভাই সানিয়াৎ আইসা মাঝে মাঝে যোগ দিলো...রাইত সাড়ে এগারটায় যখন বাইর হইলাম তখন বাইরে প্রায় সুনসান অবস্থা। ট্যাক্সি ক্যাব একটা দাঁড়াইয়া আছে।

ঐটাতেই রওনা। বাস জার্নি যেইরম হয় সেইরমই হইলো...কিন্তু চিটাগাং পৌছাইয়া গেলাম ভোর সাড়ে 4টার মধ্যে। বাস আলারা কইছিলো 6 ঘন্টা লাগবো। কিন্তু বীরের মতো সাড়ে 4 ঘন্টায় পৌছানোতে যে আসলে কোন ক্রেডিট নাই সেইটা তাগো বুঝাইবো কে! আমরা যারা আবার বাস চেইঞ্জ করুম তারা পরলাম বিপদে। 6টা পর্যন্ত এই শীতে বাইরে হাটাহাটি...মৌসুমরে একটা চেয়ারে বসাইয়া দিলাম কাউন্টারেই।

সকাল 6টায় পাইলাম কক্স'স বাজার যাওনের বাস। কক্স'স বাজারে শুনছিলাম এইবার একে ভ্রমণ মৌসুম তার উপর ঈদের ছুটি এই দুই মিলাইয়া সিট পাওনের কোন সম্ভাবণা নাই। কিন্তু আমরা ঠিকই একটা ডাবল রুম পাইয়া গেলাম। তারপর হাত মুখ ধুইয়া একটু বীচের দিকে যাওন, পথি মধ্যে আমার অফিশিয়াল ডিউটি শুরু, রিকসাআলারে জিজ্ঞাস করলাম রোহিঙ্গারা কক্স'স বাজারে আসে কিনা...সে সরাসরি না কইরা দিলো। আমি ভাবলাম আর কোন তথ্য এই খান থেইকা পাওন যাইবোনা।

বীচে গিয়া রিক্সা থেইকা নামনের পর রিক্সাআলা আমারে জিগায় ভাই কিসের লেইগা আমি রোহিঙ্গাগো খবর চাইতেছি। আমি কইলাম এমনেই...কিছুদিন ধইরা রোহিঙ্গাগো লইয়া কিছু পড়ালেখা করতেছি তাই জানতে আগ্রহ হইতেছে। সে আমারে একটু চমকাইয়া দিয়া কয় ভাই আমি নিজেই রোহিঙ্গা। 6 বছর হইছে ক্যাম্প থেইকা পালাইয়া আইসা কক্স'স বাজারে আছি। বাপ মা ভাইবোন সবাই মিলাইয়াই থাকি কলাতলীতে বাসা ভাড়া কইরা।

রিক্সাআলা ফেরদৌস আমারে তথ্য দিলো তারা 15 ঘর রোহিঙ্গা পরিবার থাকে এখন এক বস্তিতেই। এইছাড়াও এইখানে প্রচূর রোহিঙ্গা আছে বাঙালী পরিচয়েই...এখন তারা এই দেশের ভোটার। আমার কাজ ছিলো রোহিঙ্গাগো কনজু্যগাল রিলেশনশীপ আর তরুণগো জীবন যাত্রা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করনের। ফেরদৌস আমারে জানাইলো রোহিঙ্গারা একটু অল্প বয়সেই বিয়া কইরা ফেলে। সে ক্যাম্পে থাকুক কি বাইরে থাকুক।

আর অভাবের কারনে কিছু রোহিঙ্গা মেয়ে পরিবার থেইকা বিচ্ছিন্ন হইয়া বাইছা নেয় আদিতম পেশা...এনজিওরা যারে কয় যৌনকর্মী। সারা দেশেই হয় তো তারা আছে...কক্স'স বাজারে এইসব যৌনকর্মী (?) দাঁড়ায় লাল দিঘীর পাড়ে...কোর্ট বিলডিংয়ের কাছে। এরা সংখ্যায় 100এর বেশি অথবা কাছাকাছি। যাউগ্গা পরের দিন যামু টেকনাফে তাই একটু বিশ্রামের তাড়না পাইলাম। এইবারে তাই শান্ত সমাহিত মৃত(?) সমুদ্রের ধারেকাছে বইসা কাটানের কোন আগ্রহ তৈরী হইলো না একদম।

হোটেলে ফিরা গিয়া স্টার ওয়ার্লডে সোপ সিরিয়াল দেখতে দেখতেই ঘুমে চোখ ভাইঙ্গা আসলো....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।