আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ ঈদঃ তাকওয়া ও ত্যাগের প্রেক্ষাপটে স্বদেশ (২)

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

পূর্ব পর্ব পড়ুন- @ !@@!339612 !@@!339613 !@@!339614 !@@!339615 !@@!339616 !@@!339617 (1) দ্বিতীয় লক্ষ্যণীয় বিষয়টি হলো ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন অশ্লীল সিনেমা, নাটক বা গানবাজনার মুক্তি দেয়ার প্রবণতা। আগেই উল্লেখ করেছি যে, মুসলমানদের এ উৎসব পবিত্রতা, ত্যাগ, সহমর্মিতা ইত্যাদি নানা ইবাদাতে পরিপূর্ণ, তাই মুসলিম দেশে ইসলামের এই আনন্দপূর্ণ ইবাদাতের দিনে এটা মোটেই শোভনীয় নয় যে, ইসলাম যা নিষেধ করেছে, যেসবের ব্যাপারে অনুৎসাহিত করেছে, সেসবকে এ দিনেই বা এ দিন উপলক্ষেই জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। এসবকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ করা উচিত। পাশর্্ববর্তী হিন্দুদের উৎসব বা উৎসবের দিনের উপাসনাগুলোই হয়ে থাকে গানবাজনা দিয়ে, মুসলমানগণ সেসবেই মূলতঃ বিভ্রান্ত। তদুপরি রয়েছে সাংস্কৃতিক ষড়যন্ত্র এবং শয়তানের কুপ্ররোচনার ফলাফল।

সব মিলিয়ে সকল মুসলিম এবং বাংলাদেশের মত মুসলিম প্রধান দেশের সরকারের বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত ইসলামের পবিত্রতা ও ইসলামী সংস্কৃতি রক্ষায় সোচ্চার হওয়া। সর্বোপরি ঈদুল আযহায় থাকা উচিত ত্যাগের বোধ, কুরবানীর চেতনা। আজকাল আমরা ঈদের দু'একদিন আগেই মাত্র কিনে থাকি কুরবানীর পশু, তাই তাদের সাথে আমাদের আন্তরিকতা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগই থাকে না। বরং উচিত নিজের গৃহপালিত পশুদের মধ্য থেকে সবচেয়ে প্রিয়, সবদিক থেকে উত্তম প্রাণীটিকে কুরবানী করা অথবা কুরবানীর জন্য কয়েক মাস আগে থেকেই পশু কিনে তাকে লালন-পালন করার পর কুরবানী করা; যাতে এ উপলব্ধি আসে যে, একটা প্রিয় বস্তু আল্লাহর জন্য কুরবানী করা হলো। আজকাল অবস্থা তো এমন দাঁড়িয়েছে যে, যেন শুধুই নামযশ ও গোস্ত খাওয়ার জন্যই অধিকাংশ গরু, ছাগল ও উটের গলায় ছুরি চলে মাত্র, তাকওয়া ও ত্যাগ খুব নগন্যই অনুভূত হয়।

উপরে উল্লেখিত কথাগুলো শরীয়তের কোন অবশ্যপালনীয় বিধান নয়; বরং এর দ্বারা তাকওয়া ও ত্যাগের বোধ অর্জন সম্ভব বলেই উল্লেখ করা হলো। অনেক শহুরের পক্ষেই এমনটি হয়তো সম্ভব নয়, তবে দু'একদিনের জন্য হলেও উচিত পশুটির প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করা। তার অন্তরের পরিপূর্ণ মায়া-মমতাকে কুরবানীর মত উপলব্ধির মাধ্যমেই উচিত কুরবানী করা। সম্ভব হলে নিজ হাতে করা, যাতে অনুভূতিটা আরো প্রবল হয় যে, পরবর্তীতে যে কোন সময়ই পরমপ্রিয় আল্লাহর জন্য নিজের মাল-সম্পদ, স্বজন, নিজ প্রাণ ইত্যাদি কুরবানীর সময় এলে যেন তাতে অন্তর না কাঁপে, যেন অটল থাকা যায়, যেন অর্জন করা যায় কঠিন পরীক্ষার মহাসাফল্য। মনেপড়ে, ছেলেবেলায় কুরবানীর গরু কেনা হয়ে গেলে যে কয়দিন বাড়ীতে রাখা হতো, সে কয়দিন থাকতো আমাদের তত্ত্ববধানে।

তাকে ঘাস খাওয়ানো, তাও দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, তার জন্য কচুরিপানা কেটে ভাতের লোকমার মত করে মুখে পুরে পুরে খাওয়াতাম, তাকে গোসল করিয়ে দিতাম, যার হাতের ঘাস বা পানা খেত আমরা ভাবতাম তাকে সে পছন্দ করেছে, তার সাথে তার আন্তরিকতার সৃষ্টি হয়েছে, রাতবিরাতে হারিকেন বা কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে তাকে দেখে আসতাম, মশা উৎপাত করে কিনা বা শীতে কষ্ট পায় কিনা সে জন্য গায়ে ছালা জড়িয়ে দিয়ে আসতাম; সবমিলিয়ে পরিবারের একজনের মতই স্নেহ-মায়া-মমতায় বেঁধে ফেলতে চেষ্টা করতাম আমরা শিশুরা। তারপর ঈদের দিন সকালে, জানতাম না কেন যেন তার দু'চোখ বেয়ে পানি পড়তে দেখতাম, আমরা বলাবলি করতাম যে, রাতে তাকে তার কুরবানী স্বপ্নে দেখানো হয়েছে বলে সে কাঁদছে, এরূপ একান্তই আমাদের শিশু মনের ভাবনাগুলো নিয়ে একটা শংকায় থাকতাম। তারপর যখন চোখের সামনে তার গলায় ছুরি চালানো হতো, তখন বুকটা দুমড়ে মুছড়ে যেত কষ্টে, প্রিয় হারানোর ব্যাথায় কেঁপে উঠতাম, কারো কারো দু'চোখ ভিজে উঠতো জলেও। এখনো ভাবি, কুরবানীর সেই অনুভবগুলো আজো আমাদের জন্য বড়ই প্রয়োজন। এছাড়াও অপচয়, পর্দাহীনতা, ফকীর-মিসকীনদের প্রতি যথাযথ সুব্যবহার না করার মত আরো নানাবিদ অপকারী কর্মকাণ্ডে পরিপূর্ণ আমাদের একালের ঈদ।

তবুও আমরা আনন্দিত হই বছরের এ দু'টি দিনে, কাটাই নানা আয়োজনে, সাক্ষাত করি আত্মীয়-প্রিয়জনদের সাথে, গলায় গলা মিলিয়ে ভুলে যাই সব অতীত গ্লানি-দুঃখ-বেদনাকে। শেষ দিকে বলতে দ্বিধা নেই যে, পরবাসের ঈদ সত্যিই একটা দুঃখ যেন, পরিবার পরিজন ছাড়া ঈদের আনন্দ সালাত আদায় পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে এখানে। এগুলো একান্ত নিজস্ব অনুভূব-অনুভূতি মাত্র, হয়তো অনেক প্রবাসীই একমত হবেন। কিভাবে, কি আনন্দে আর কতটুকু মনোকষ্টে কাটালাম ঈদ বা আমরা প্রবাসীরা কাটাই, তা না হয় নাইবা বললাম। তবে যেভাবেই কাটাই না কেন, আমার এ লেখার সকল পাঠকদের জানাই ঈদের পবিত্র শুভেচ্ছা, মোবারকবাদ, আন্তরিক ভালবাসা।

আর সবার জন্যই সত্যের সন্ধান লাভ, তাতে অটল অবস্থান, কল্যাণার্জনের তৌফিক এবং সুন্দর ও সুস্থ জীবন; সর্বোপরি সুখময় অনন্ত জীবনের প্রার্থনা সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট। আপনাদের দোয়ায়ও আমাকে ভুলবেন না যেন। ০১.০১.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব। ছবির জন্য !@@!340256 যেখানে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।