জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
ঈদ মানেই তো খুশী, আনন্দ। মুসলমানদের জন্য আল্লাহ্ তা'আলা বছরে দু'বার এ আনন্দের ব্যবস্থা করেছেন- ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। গতকাল চলে গেল মক্কা-মদীনাসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং আশপাশের অনেকাঞ্চলেরই ঈদের দিন। পৃথিবীর আর সব জাতির মত মুসলমানেরাও তাদের সংস্কৃতিতে আরো অনেক আনন্দদিন পালন করে থাকে। কিন্তু আনন্দের সাথে যদি যোগ হয় ইবাদাত-পবিত্রতা, যদি আনন্দটাই হয়ে উঠে কল্যাণার্জনের পথ তাহলে সে আনন্দে কতটা ব্যাপকতা, নির্মলতা আর পরিপূর্ণতা থাকে, তার উপলব্ধি প্রতিজন মুমিনের কাছেই অনুভূত।
কেননা, সাধারণতঃ আনন্দের ব্যাপারগুলোর সাথে থাকে মানুষের রিপুর-নফ্সের একটু অতিরিক্ত সহযোগিতা, আর রিপু বা নফ্স কখনোই মানুষকে বৃহত্তর কল্যাণের পথ দেখায় না; বরং দেখায় সাময়িক উত্তেজনা-সুখ-ভাললাগার সরুপথ। তাই ঈদের আনন্দের মূল ব্যাপারগুলো যখন হয় সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে প্রিয়, দয়াময় প্রভু আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাত আদায়, যখন হয় ফিতর এর মত দান, যখন হয় প্রিয় গবাদি পশুকে আল্লাহর নামে তাঁর জন্যে কুরবানীর করার মত ত্যাগ, তখন রিপু বা নফ্সের দৌরাত্ম আর প্রাধান্য পায় না, সেখানে আনন্দের সম্পর্ক স্থাপিত হয় সরাসরি আত্মার সাথে, আর মূলতঃ আত্মার আনন্দই প্রকৃত আনন্দ।
প্রতিটি সভ্যতাই পরিবর্তনশীল, তা হয়ে থাকে সময়ের তালে তাল মেলাতে, জীবনাচারের নব নব ঊৎকর্ষতার প্রেক্ষিতে কিংবা গতানুগতিক ভাললাগা-মন্দলাগার গ্রহণ-বর্জনের ধারাবাহিকতায় অথবা আগ্রাসনের ভিত্তিতে। সংস্কৃতিতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন যখন যেভাবে যেটুকুই হোক না কেন, কোন জাতি যদি এই বিবর্তনে তার মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলে, তাহলে তার অন্তঃসারশূন্যতা অনিবার্য। অর্থাৎ, আকীদা-বিশ্বাস, সে অনুযায়ী মৌলিক ইবাদাতসমূহ, যাবতীয় জাগতিক জীবনাচার এবং রসম-রেওয়াজ-উৎসব ইত্যাদি বিষয়সমূহে কালের বিবর্তনের যা কিছু নব নব নেয়া প্রয়োজন, যা কিছু প্রয়োজন বাদ দেয়া, এক কথায় সবকিছুই গ্রহণ বা বর্জনের মানদণ্ড হিসেবে নিতে হবে মূলধারাকে, শুরুর পরিপূর্ণ অবস্থাকে তথা মৌলিক গ্রন্থাবলীর আলোকে।
এখানে আরেকটি ব্যাপারও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়- সংস্কৃতির যে মৌলিকত্ব বা মূল ধারার কথা বলা হয়েছে এবং যে মানদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, তাও পরিপূর্ণভাবে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন সে জাতির বা সে ধর্মের বিধিবিধানে। সুখের কথা যে, ইসলাম এবং মুসলিম জাতিই এ ব্যাপারে একমাত্র পরিপূর্ণতার দাবী রাখে। যার মধ্যে বিশ্বাস থেকে শুরু করে জীবনের ছোট-বড় সকল দিক ও বিভাগের বিস্তারিত পুঁথিগত ও ব্যবহারিক বিধিবিধান এবং সেসবের ব্যবহারিক উদাহরণও মজুদ রয়েছে। যদিও অঞ্চলভেদে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে কিছু কিছু বৈপরীত্য দেখা যায়, তবুও মূল উৎস থেকে লাভ করা জ্ঞানী বা আলেম সমপ্রদায়ের নিকট তা পরিস্কার এবং সংক্রামিত সেসব অপসংস্কৃতির অপনোদনে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল, আছে এবং থাকবেও ইনশাআল্লাহ্।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আজকাল ঈদের চালচিত্রে যা ঘটছে তার মধ্যে কয়েকটি বর্জনীয় দিক খুবই লক্ষ্যণীয়, যা শুধু ঈদ বলেই নয়; বরং সর্বাবস্থায়ই বর্জনীয়।
তার মধ্যে একটি হলো- 'কুরবানীর প্রচারণা'। কে কত বেশী দামী গরু কুরবানী দিতে পারলো, তা নিয়ে রীতিমত প্রচারণার প্রতিযোগিতা। সৎকাজে আল্লাহ্ভীরুতা নিয়ে প্রতিযোগিতা করা অবশ্যই ভাল, কিন্তু তা করতে হবে যতদূর সম্ভব আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখে। কারণ, প্রচারনা মূলতঃ লোকদেখানোর জন্যই নামান্তর, আর লোকদেখানোর অপরাধকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় 'রিয়া', যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে 'গোপন শির্ক' বা 'ছোট শির্ক বা অংশীবাদ' হিসেবে প্রমাণিত। যার শাস্তি সম্পর্কে মুসলিম শরীফের ১৯০৫ নং হাদীসে তিন জন ব্যক্তির করুণ পরিণতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
যারা হলেন ইসলামের সৎকর্ম ও প্রতিদান বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের- অর্থাৎ, শহীদ, আলেম এবং দাতা। কেয়ামতের দিনের সেই বিচারের পরিণামে তাদের লোক দেখানোর নিয়ত ও সে অনুযায়ী তা বাস্তবায়নের জন্য সকলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (দীর্ঘ হাদীস বলে এখানে উল্লেখ করলাম না, পড়ে নেয়ার অনুরোধ রইল) সুতরাং সর্বাবস্থায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আমাদের কুরবানী আমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের কারণ না হয়ে যায়।
পরের পর্ব পড়ুন-
@ !@@!339592 !@@!339593 !@@!339594 !@@!339595 !@@!339596 !@@!339597 (2)
ছবির জন্য !@@!339600 যেখানে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।