কাব্য-দিনের কথাঃ স্পর্শের আগুনে! অন্যদিগন্ত: www.fazleelahi.com
এখন ব্যস্ত সমস্ত দিন কাটে হৈ চৈ-য়ে, অথচ আমি চলি নিরবে। দিনের মন দিনমান ঘুরেফিরে রাত্তিরে ঘরে ফেরা পাখালীর মত ফিরে আসে; যেন বুকের খাঁচায় মন পাখিটি। শীতের কনকন কখনো কখনো মনে হয় হাড়ে ঠেকে ঠনঠন কাঁপুনি শোনায় আজকালের মৌসুমে এখানে। তবুও মেতে উঠে শেষ রাতের চারদিক, দিগন্তের সাদা রেখারও অনেক পূর্ব হতে। এবারের মৌসুমে পারছি না, যতটা পেরেছিলাম পূর্বেকার তিনটে বছরে।
মদীনার হজ্জের দিনগুলো অনেকেরই কাটে অনেক রকমভাবে। ব্যবসায়ীরা অতিব্যস্ত থাকে উপার্জনে। চাকুরেরা শর্ত আদায়ে। কিন্তু আমি সবসময়ই নিজের জন্য পছন্দ করতাম এমন কোন কাজ, যার দ্বারা অর্থ এবং পূণ্য দু'টোই অর্জন সম্ভব। কত কাজই তো পৃথিবীজোড়া, কি এমন ক্ষতি যদি আমি পেয়ে যাই এমন কোন কাজ যার জন্য আমি নিজের সর্বোচ্চ সাধনাকে লাগাতে পারবো এবং পরিমাণে অল্পবেশী যাই জাগতিক পাই না কেন, যেন মরণের ওপারে বসেও পেয়ে যাই তার কিছু না কিছু।
সত্যিই কি কারো এমন কিছু ক্ষতি হয়ে যাবে তাতে? অবশ্য নিয়তের পরিশুদ্ধতা ও ব্যাপকতা থাকলে সকল ভাল কাজের মধ্য থেকেই এমন কল্যাণ লাভ সম্ভব। কিন্তু কে চায় না যে সে অল্প সাধনাতেই ধনী হয়ে যাক? তারউপর 'ধন' যদি হয় অর্থ এবং পূণ্য; দু'টোই।
অনেক বড় একটা সেবামূলক মানসিকতা নিয়েই যোগদান করেছিলাম হজ্জমিশনের মৌসুমী কর্মকাণ্ডে। কিন্তু গতানুগতিকতার ধারায় শেষ পর্যন্ত তা পর্যবসিত হলো নিছক একটা চাকুরীতে। এবারে আর যাওয়া হলো না হজ্জ মিশনে।
মনে পড়ে, আমার প্রতি আদেশ ছিল শুধুমাত্র হোটেলের রিসিপশনে বসে থাকা এবং হাজীদের সুবিধা-অসুবিধা শুনে সম্ভব হলে সমাধান করা অন্যথায় মিশনে তথ্য সরবরাহ করা। কিন্তু মন ভরতো না, হাজীদের প্রতিটি রুমে রুমে গিয়ে জানতে চাইতামঃ কেমন আছেন তারা। কেউ কেউ খুব ক্ষেপে যেত বিভিন্ন অসুবিধার কথা বলে, কিন্তু অধিকাংশই এতটাই খুশী হতেন যে, মনে হতো দিনের মজুরী কত তুচ্ছ এর তুলনায়। এবারে এই তো সেদিন অপেক্ষমান ছিলাম এশার সালাতান্তে হারামের পাশে। তিনজন হাজীর সাথে সালাম বিনিময় ও অন্যান্য খোঁজখবর দেয়ানেয়ার পর বিদায়ের সময় বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
আল্লাহর মেহমানদের এইটুকু খোঁজখবর নেয়ার বিনিময়ে এত অসাধারণ ভালবাসার তুলনা আর কিছুর সাথে মেলাতে পারলাম না।
পরিচিতদের মাঝে এবার স্বদেশ থেকে দু'জন চাচা-চাচী এবং বিদেশ থেকে দু'জন চাচা-চাচী এসেছেন। আরো আসবেন একজন বড় মাপের স্যার, হজ্জের পরে। মজার ব্যাপার হলো এর আগে কখনো আমি ওনাদের কাউকেই দেখিনি এবং ওনারাও আমাকে দেখেননি; এটাই প্রথম সাক্ষাত। মন তো চায় সারাটি ক্ষণই থাকি তাদের সাথে, খেদমতে, কল্যাণের ছায়ায়।
কিন্তু কি করি, জীবনের অর্থনৈতিক জলাশয়ে রোদের ছোঁয়া দিতে না পারলে যে সব ক'টি জিয়ানো মাছই ক্ষুধার অন্ধকারে মারা পড়বে অকালে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান আর অসংখ্য জাগতিকতায় যে আমাদের প্রতিজনই দারুন ক্ষুধাতুর।
২৬.১২.২০০৬, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।
ছবির জন্য [link|http://www.hajjinfo.org/images/madina.gif|K
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।