জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
বসন্তের বনে বনে আম্রমুকুল আর নতুন পাতাদের আগমনী দিনে পাখালীরা যেমন উচ্ছাসিত হয়, তেমনি করেই যেন প্রতিটি বছর আনন্দে, আয়োজনে, সাদরে, সম্ভাসনে আলোড়িত হয় মক্কা-মদীনাসহ ইসলামী বিশ্বের এ পূণ্যভূমি। স্বাগতিক দেশের অধিবাসীদের পাশাপাশি প্রবাসীরাও এ পূণ্য মৌসুমের একটা বিরাট অংশের সম্পাদক। তাই জাতি, বর্ণ, ভৌগলিক সীমারেখার সকল ব্যবধান ভুলে এক মহা উৎসবের আয়োজন যেন মৌসুমী মক্কা ও মদীনায়। কি কালো, কি ধলো, কি শ্যামল বর্ণ; আত্মাগুলো এখানে এসে মিলে মিশে যায় এক পরিবারে। ঐ যে আযানের ধ্বনি শুনে মসজিদুন্ নববীর পানে ছুটে যায় আফ্রিকার অধিবাসী, সে যেন আমারই আত্মার আত্মীয়।
যে এশিয়ান চলে ইতিহাসের পথ ধরে ওহুদ প্রান্তরে, সে তো এ অন্তরেরই আরেকটি টুকরো। কুবা মসজিদের পাশ ঘেঁষে কোন্ ইউরো-আমেরিকান কাফেলা ঐ দরূদ পড়তে পড়তে প্রবেশ করছে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শহরে, সে তো এই মেজবান মনের পরমাত্মীয়েরাই। যখন এ প্রিয় ভাই-বোনদের মৃতু্যবাহী দুঃসংবাদ ছুটে আসে শংকিত কর্ণে, তখন শোকে নীল হয় আমাদের গোলাপী আত্মারা। এভাবেই অনুভবি আমরা মদীনাবাসীরা আমাদের দ্বীনের সম্বন্ধিত ভাই-বোন মেহমানদের।
মদীনার বাতাসে এখন একটা পবিত্র সুগন্ধ অনুভূত হয় নিশিদিন।
কান পাতলে শোন যায় অসংখ্য অজানা ভাষার সদালাপ, শোনা যায় কল্যাণের আহ্বান, শোনা যায় পরম প্রিয় প্রতিপালকের মহত্ব, শোনা যায় প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের উচ্চমর্যাদার পরিচায়ক দরূদ ও সালাম, সাহাবাদের জন্য উচ্চমর্যাদার প্রার্থনা এবং সকল মুসলমানের জন্য দো'আ আর শুভকামনা। কি সোবহে সাদিকে, কি প্রভাতে, সকাল, দুপুর, বিকেলে, কি সন্ধ্যায় অথবা রাতের প্রহরগুলোয়; প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ কল্যাণাকাংখী বিশ্ববাসী, কে পাবে মসজিদুন্ নববীর প্রথম কাতারে স্থান, কে পারবে নিশ্চিত করতে রিয়াদুল জান্নাহ্ বা জান্নাতের বাগানের কোথায় নিজের অবস্থান, কারুর লক্ষ্য পবিত্র নিদর্শনাবলী রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বার, আসহাবে সুফ্ফা অথবা যতটা অগ্রগামী হওয়া যায় ততটা। এমন কল্যাণ পিয়াসীদের দেখলে দু'চোখ প্রশান্ত হয়, তাদের সাথে কথা বলতে পারলে হৃদয় উদ্বেলিত হয় কল্যাণার্জনার্থে, তাদের সাথে বুকে বুক মেলাতে পারলে মন থেকে মনে যেন পবিত্রতার আদান-প্রদান হয়, তাদের কিঞ্চিত সেবা করতে পারলে যেন দয়াময় আল্লাহর দয়াদ্র দৃষ্টি লাভ হয়; কেননা তারা যে তাঁর মেহমান।
মদীনার অধিবাসীরা আনন্দিত, উৎফুল্লিত, আত্মহারা এইসব মেহমানদের পেয়ে। এইতো সেদিন ফিরছিলাম মসজিদ থেকে সালাতুল আসর সমাপনান্তে।
মধ্যএশিয়া থেকে আগত মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র পথ আটকালো, পৃথিবীর কত প্রান্ত সীমান্ত থেকে এসেছেন আল্লাহর মেহমান হাজীগণ, সে চায় ভাষা না জানলেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী হাজীদের সাথে তার অন্তরের সৌহার্দতা বিনিময় করতে। তাই হাজীদের প্রতি তার সুস্বাগতম, আন্তরিক দো'আ এবং সুস্থতা ও স্বদেশে নিরাপদে ফিরে যাবার শুভকামনাগুলো আমার কণ্ঠ দিয়ে আমার ভাষা বাংলায় আমার ভাষাভাষী ভাই-বোনদেরকে জানাতে চায় বলে তার মোবাইলে রেকর্ড করে নিল মনের কথাগুলো; তারপর হাজীদের সাথে সাক্ষাত করে শোনাবে তা তাদেরে। বিভিন্ন দাওয়াহ্ সংস্থাগুলো ব্যস্ত এখন হাজীদের হজ্জ কর্মকাণ্ডকে শুদ্ধ-সঠিক, শির্ক-বিদ'আত মুক্ত এবং শান্তিপূর্ণভাবে পালনের দিকনির্দেশনা দানে। উৎসব এখানে এখন প্রতিটি মুহূর্ত ব্যাপী, পবিত্রতা সকল হৃদয় ছোঁয়া, পূণ্য এখানে বার মাসের মৌসুমী ফসল। তবুও যেন হজ্জের এ অফুরন্ত পূণ্যসময়ে পূণ্যের সঞ্চয় কারুরই শেষ হয় না।
এ কি শেষ হবার মত?
বিশ্ব মুসলিমের এ মহা সম্মিলনে, কল্যাণের এ চিরন্তন সন্ধিক্ষণে, আল্লাহর সকাশে হাজিরা দানের এ মহা আয়োজনে আসুন আমরা সকলেই দো'আ করি- সম্মানিত হাজী সাহেবগণ যেন তাদের সারা জীবনের ইবাদাত পবিত্র হজ্জ পালনে সকল প্রকার শির্ক-বিদ'আত, ভুল-ত্রুটি, দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ থেকে হেফাযতে থেকে নিরাপদে আপনাপন পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে যেতে পারেন। আমীন।
ছবির জন্য !@@!282605 যেখানে। ছবিটি নিজের তোলা (চলন্ত গাড়ী থেকে, তাই ভাল উঠেনি)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।