আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলকায়েদা-আধুনিক গ্ল্যাডিয়েটর এবং আমেরিকার কথিত গণতন্ত্র

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সিরিয়ার সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে বাশার বিরোধী বিদ্রোহী গ্র“পগুলোর হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট আরো জানায়, দু’সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় অস্ত্রের চালান গিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সরাসরি অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি পরিচালনা করছে।

এছাড়াও তারা বিদ্রোহীদেরকে অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে। সাহায্যের তালিকায় সামরিক অস্ত্রের পাশাপাশি রয়েছে যানবাহন, আধুনিক যোগাযোগ যন্ত্র ও সামরিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। মার্কিন প্রশাসনিক এক কর্মকর্তাদের একজন দাবি করেন, এ অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি ভারসাম্য আনা সম্ভব হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে সিরিয় যুদ্ধে আমেরিকা কাকে সাহায্য করছে? একদিকে ৯/১১ এর পর থেকে চলে আসা কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে এত সমরায়োজন, এত প্রাণহানী, এত ধ্বংসযজ্ঞ, দুই দু’টি দেশকে ধ্বংস ও বেশ কয়েকটি দেশকে পঙ্গু করার মত এত বড় লড়াই যুক্তরাষ্ট্র কার বিরুদ্ধে করেছে? এক কথায় এর উত্তর হবে উগ্রপন্থি আলকায়েদার বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারে আমেরিকা সিরিয়া পরিস্থিতিতে ক্ষেত্রে কার পক্ষ নিলো? এবারের উত্তরও হচ্ছে বাশার আল আসাদ এর বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহী বাহিনীর একটি অংশ আলকায়েদার পক্ষ।

তাহলে প্রশ্ন আসে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বহু অর্থ আর প্রাণহানীর বিনিময়ে চালিয়ে আসা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কি দাম রইলো, কিংবা এত দিন যাদের ধ্বংস করাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল আজ তাদেরকে জাতে উঠানোর এই কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা ন্যায়সঙ্গত? এর উত্তর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় তা বোঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যেখানে কিংবা যে বিষয়ে তার স্বার্থ আছে সেটাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ন্যায়, আর যা কিছু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থপরিপন্থি তাই অন্যায়। কারণ, শক্তি এখন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। শক্তিমান যা বলে তাই ন্যায়, ইংরেজিতে যাকে বলে গরমযঃ রং জরমযঃ. গণতন্ত্র অন্যের জন্য, নিয়মনীতি অন্যের জন্য, জবাবদিহিতা অন্যের জন্য। যুক্তরাষ্ট্র এসবের উর্দ্ধে।

যুক্তরাষ্ট্র এসবকে তোয়াক্কা করে না। আন্তর্জাতিক নীতি হচ্ছে কোন বৈধ কর্তৃপক্ষের সাথেই একটি রাষ্ট্রের যোগাযোগ, চুক্তি সংগঠিত হতে হবে। যে বা যারা কোন স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অধিকারী নয়, কিংবা কোন প্রতিষ্ঠিত সার্বভৌমত্বের অধীনে অবস্থান করে তবে সার্বভৌম শক্তির অনুমতি ছাড়া তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। অথচ সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তা মান্য করেনি। তারা সমস্ত প্রটোকলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্র“পকে অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে শক্তির সমতা আনার চেষ্টা করছে।

এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, এর লক্ষ্য যুদ্ধাবসান নয়, বরং যুদ্ধকে জিইয়ে রাখা। কারণ যুদ্ধ লাগিয়ে রাখাতেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নিহিত। এক পক্ষ যদি শক্তিতে এগিয়ে থাকে তাহলে তারা বিজয়ী হবে অতঃপর যুদ্ধের অবসান হবে। তাতে করে যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লীপনার কোন সুযোগ থাকবে না। সুতরাং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের অবসান হোক তা যুক্তরাষ্ট্র এবং মোড়লী মনোভাবাপন্ন শক্তিগুলো চাইবে না।

কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য সন্ত্রাসী গ্র“পের জন্ম দেয়া এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই তাদেরকে আবার দমন করা এসব রাষ্ট্রের একটি রাষ্ট্রীয় নীতি। এই নীতিকে পুঁজি করেই যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বুকে তার দাপট বজায় রাখছে। তাই তারা দীর্ঘ এক যুগ ধরে চলা আলকায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এখন সিরিয়ায় এসে সেই আল কায়েদাকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। পূর্বে এই আলকায়েদার জন্ম হয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের হাত ধরে সিআইয়ের সহযোগিতায় ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। তখন তাদের জন্ম দেওয়া হয়েছিল কম্যুনিস্ট রাশিয়াকে দমনের জন্য।

সেই তারাই যখন সিআইয়ের অস্ত্র-শস্ত্রে শক্তিমান হয়ে আমেরিকার অবাধ্য হোল তখন তারা পূর্ণ শক্তি নিয়ে হামলা করে তাদেরকে দমন করল এবং আফগানিস্তানের উপর নিজেদের প্রভুত্ব কায়েম করলো। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে ইসলামে প্রতিষ্ঠার দাবিদার আল-কায়েদা বার বার একই সাপের গর্তে পা দিচ্ছে এবং বার বার একই সাপের ছোবল খাচ্ছে। আল-কায়েদা রূপ নিয়েছে আধুনিক যুগের গ্ল্যাটিয়টরের (এষধফরধঃড়ৎ) ভূমিকায়। গ্ল্যাডিয়েটরদের ইতিহাস যারা জানেন তারা নিশ্চয় এও জানেন লড়াই করে যাওয়াই একজন গ্ল্যাডিয়েটরের কাজ। মৃত্যু অবধি একজনের পর একজনের সাথে তাদের লড়াই করে যেতে হয়।

তাই যতক্ষণ জীবন আছে ততক্ষণ প্রভুর ঈশারায় তার বিনোদন যোগাতে লড়াই করে যেতে হয়। আধুনিক গ্ল্যাডিয়েটর আল-কায়েদা বর্তমান দুনিয়ার প্রায় প্রতিটি যুদ্ধে, প্রতিটি রণাঙ্গনে সত্যিকার গ্ল্যাডিয়েটরদের মত ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রতারক যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিয়ে বার বার নতুন নতুন খেলা খেলছে। অন্যদিকে প্রতিবারই খেলার বস্তু হচ্ছে আল্-কায়েদা। মাঝখান থেকে তাদের অপকর্মের দোহাই দিয়ে কলুষিত করা হচ্ছে ইসলামকে।

তাই তাদের এ কাজ শতভাগ আন্তরিকতাপূর্ণ হলেও তাদের বোকামীর কারণে তা পরিত্যাজ্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।