মুক্ত করো ভয়, সত্য পথে জীবন গড়ো, নিজেরে করো জয় ।
ব্যবহারে চাই সচেতনতা
ডা. সৈয়দ মুহিব্বুল আবরার জাবের
অ্যান্টিবায়োটিক কি?
অ্যান্টিবায়োটিক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা মানব শরীরের কোষসমূহকে অক্ষত রেখে শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সমূহকে ধ্বংস বা তাদের বংশবৃদ্ধির গতিকে নষ্ট করে দেবার মাধ্যমে কাজ করে।
একটি আদর্শ অ্যান্টিবায়োটিকের কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত
* এটির জীবাণুবিরোধী কাজের বিস্তৃতি ব্যাপক হবে।
* জীবাণুর বংশবৃদ্ধির গতি কমানোর চেয়ে জীবাণু বিধ্বংসী ক্ষমতা বেশি থাকবে।
* শরীরে এটির শোষণ, বিতরণ এবং স্বাভাবিকভাবে বর্জ্য রূপে নির্গমিত হবে।
* এর জীবাণুধ্বংসী ক্ষমতা শরীরের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক পদার্থ, প্লাজমা প্রোটিন বা এনজাইম দ্বারা নষ্ট হবে না।
অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার
* ব্যাকটেরিয়ার উপর যথাযথ তথ্যের উপর নির্ভর করে ওই ব্যাকটেরিয়া বিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত।
* একের অধিক অ্যান্টিবায়োটিক সেখানেই ব্যবহার করা উচিত যেখানে একটি অ্যান্টিবায়োটিক অপ্রতুল। অথবা যেখানে একটি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি জীবাণুর প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা থাকে।
* ব্যাপক বিস্তৃতির কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নির্বিচারে ব্যবহার অনুচিত।
* যথাযথ রোগ নির্ণয়ের পর অ্যান্টিবায়োটিক উপযুক্ত মাত্রায় (উঙঝঊ), নির্ধারিত সময় বিরতিতে (ওঘঞঊজঠঅখ) এবং উপযুক্ত সময় পর্যন্ত (উটজঅঞওঙঘ) ব্যবহার করা উচিত।
* যে-সব ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা যায়নি, সে ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ব্যাপক বিস্তৃতির বা একের অধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
*রোগীর অন্যান্য শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত। যেমন: গর্ভাবস্থা, কিডনি ফেইলর (কওউঘঊণ ঋঅওখটজঊ).
অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপব্যবহার
যেখানে রোগের কারণ ব্যাকটেরিয়া (ইঅঈঞঊজওঅ) নয়। যেমন ভাইরাসজনিত জ্বর (ঠওজঅখ ঋঊঠঊজ), মিসেল্স (হাম) চিকেন পক্স, মাম্পস ইত্যাদি।
এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার অবাধে করা অনুচিত ও উদ্বেগজনক।
* অপরিমিত মাত্রা (উঙঝঊ), দীর্ঘ বা অল্প সময়ের বিরতি (ওঘঞঊজঠঅখ), এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করা।
* অনেকে একটু পেট খারাপ, জ্বর-এর জন্য ফার্মেসী থেকে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় অষুধ সেবন করেন এর ব্যবহার বিধি না জেনেই। পরবর্তীতে রোগী ওই সব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ফল নাও পেতে পারেন। কারণ অপরিমিত মাত্রা বা নির্বিচারে সেবনের ফলে ব্যাকটেরিয়া ওই সব অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
একে ইঅঈঞঊজওঅখ জঊঝওঝঞঅঘঈঊ বলা হয়। তাই খুবই সতর্কতার সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত।
কি কি কারণে অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা বিফলে যেতে পারে
* কোন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যদি উপযুক্ত/যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা হয়।
* নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে যদি ব্যাকটেরিয়া ওই জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি আগেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
* অপর্যাপ্ত মাত্রা (উঙঝঊ), বা দুটি মাত্রা গ্রহণের সময় বেশি দীর্ঘ বা অল্প হয়, বা ব্যবহার কাল (উটজঅঞওঙঘ) অপর্যাপ্ত হয়।
যেমন: কোন অ্যান্টিবায়োটিক যদি 500 মি. গ্রাম. করে 8 ঘণ্টা পর পর 7 দিন খেতে হয়, কিন্তু কেউ যদি মাত্রা নির্দিষ্ট সময় পর পর, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন।
* কিছু কিছু শারীরিক অসুখ যেমন: ডায়াবেটিস (উওঅইঊঞওঝ) ব্লাড ক্যান্সার, এইড্স্ বা অ্যান্টিক্যান্সার জাতীয় অষুধ সেবনে অ্যান্টিবায়োটিকের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
* যদি শরীরে সংক্রমিত ঋঙজঊওএঘ ইঙউণ,পূঁজ (চটঝ) বের করে দেয়া না হয়।
পরিশেষে: এটা আমরা জানতে পারলাম কেন, কিভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা উচিত। মানুষ যুগ যুগ ধরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
মানবজাতির ঊষালগ্ন থেকে মানুষের এই নিরন্তর সংগ্রাম। অ্যান্টিবায়োটিক বিজ্ঞানের এক অন্যন্য আবিষ্কার। মানবকল্যাণে এর ভূমিকা প্রশ্নাতীত। আমরা যেন এর সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুফল পেতে পারি সেজন্য একজন চিকিৎসককে অ্যান্টিবায়োটিক-এর চজঊঝঈজওচঞওঙঘ-এর পাশাপাশি এর ব্যবহার বিধি রোগীদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। রোগীদেরও এই অষুধটি গ্রহণে যথেষ্ট সচেতন হবার প্রয়োজন রয়েছে।
ধীরে ধীরে অ্যান্টিবায়োটিক জঊঝওঝঞঅঘঈঊ বেড়েই চলেছে যা অত্যন্ত আশংকাজনক। নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে আমরা এই যুগান্তকারী অষুধটিকে নির্বিষ করে ফেলছি ব্যাকটেরিয়ার জন্য, যা ভয়াবহ অবস্থা বয়ে আনবে আমাদের জন্য। হাতুড়ে ডাক্তারদের মাধ্যমে এই অষুধটির অপব্যবহার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রোগের উপসর্গ কমে এলে অনেক শিক্ষিত লোকও অষুধটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে চান না_অন্যদের কথাতো বলাই বাহুল্য। আসুন, আমরা সচেতনতার সাথে এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে আমাদের নিজেদেরই রক্ষা করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।