আমি সব সময়ই একটু অদ্ভুত ধরনের। কখন যে মন খারাপ হয় আর কখন যে মন ভাল হয় আমি নিজেই বুঝিনা। সবাইকে খুব সহজে বিশ্বাস করি, সবাইকে নিজের মত ভাবি। আর এ কারণে অনেক অনেক কষ্ট পাই। গতকাল শুক্রবারে ঘুম থেকে উঠলাম সকাল ১২ টায়।
রাতে ঘুমাতে পারিনি এক অনাকাঙ্খিত বিরম্ভনারয়। ঘুমাতে না পেরে বাধ্য হয়ে আবার ফেসবুকে বসতে হলো রাত ২ টার সময়। ফেসবুকে এসেই দেখি অনেক রাতজাগা পাখিরা কুহুকুহু ডেকে যাচ্ছে। এদিকে আমার মোবাইলটাও আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে শুরু করেছে। সন্ধ্যায় দেখি দুইটা বাটনে কাজ করছেনা।
রাত ১০টায় দেখলাম ৪টা বাটনে কাজ করছেনা। আর রাত ২ টায় দেখলাম ডিসপ্লে সাদা হয়ে আছে। বুঝতে আর বাকী রইলো না, স্লাইড মোবাইলটার রেবন মিয়া ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ড্রয়ার খুলে ফেলে রাখলাম। ফেসবুকে কথা হলো জাহিদ কবির হিমন ভাই, জুয়েল রানা ভাই, আর মানচিত্র নিউজ এর সম্পাদক এ.এইচ রাসেল ভাইয়ের সাথে।
সবার সঙ্গেই শেয়ার করলাম আমার না ঘুমাতে পারার গল্প। সবাই হাঁসলো। সঙ্গে আমিও । অনেকক্ষণ কথা হলো হিমন ভাইয়ের সাথে। শেষে রাত ৪.৩০ মিনিটে দুইজনেই ঘুমাতে গেলাম।
ঘুম আসলো আরো দেরী করে। সকাল ৯ টার সময় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটালো আমার রুমমেট। অনেকটা রাগ হলো তার ওপর। পরে অবশ্যও আরো কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছি। ঘুম থেকে উঠলাম ১২ টায়।
বাইরে গিয়ে নাস্তা সেরে আবার রুমে। কিন্তু ১১তম ফ্লোরে হেঁটে উঠলাম খুব কষ্টে। উঠেই বুঝলাম পেট খালি হয়ে গেছে। ১১ তলা পায়ে হেটে উঠা অনেক কষ্টের। যাহোক রুমে এসে আবারো ফেসুবকে ।
ফেসবুকে কথা হলো আমার কিছু বন্ধুর সঙ্গে। জুমআর নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। নামাজ পড়লাম বায়তুল মোকাররম মসজিদে। হোটেল থেকে অল্প টাকায় দুপুরের খাবার খেয়ে আবার ১১ তলা পায়ে হেঁটে রুমে আসলাম। এর মধ্যে একবার আমি অর্ণ ভাইকে ফোন করলাম।
কারণ ভাইয়ার সাথে আমার দেখা করার কথা ছিলো ধানমিন্ড লেকে। টাইম ফিক্সড করলাম কথা বলে। কথা হলো ৩.৩০ মিনিটে আসবো। কিন্তু একটা ঝামেলায় পড়ে গেলাম। আমার স্যার ফোন করে বললো এখুনি একটা নিউজ টাইপ করে সব মিডিয়ায় দিতে হবে।
কি আর করার, অগ্যতা তাই করতে হলো। পরে, অবশ্যও এর জন্য কিছু হাদিয়াও পেয়েছি। সব কাজ শেষ করে আবার অর্ণ ভাইকে ফোন করে কিভাবে যাবো ডিরেক্শন নিয়ে নিলাম। কারণ আমি কখনোই ধানমন্ডিত যাইনি।
প্রেস ক্লাব এর সামনে থেকে বাহন বাসে উঠলাম।
১০ টাকা ভাড়া মিটিয়ে বললাম, "মামা আমারে শুক্রবাদ নামাইয়া দিও। আমি চিনিনা। একটু ডাইক্যা দিও। " মাথা নাড়িয়ে জানালো ঠিক আছে। ২০ মিনিটের মধ্যেই মামার ডাক শুনতে পেলাম, বললো মামা সামনেই আফনের শুক্রাবাদ।
বাস থেকে নামলাম্। অর্ণ ভাইকে ফোন করে জানলাম, উনি তখনো বাসায়। আমি লেকের ভিতরে ঢুকে গেলাম। প্রথম দেখলাম ধানমন্ডির লেক আর এর অপার সৌন্দর্য্য। ঢাকা শহরের প্রকৃতির ছোয় পেতে হলে এই জায়গাটি মন্দ না।
একেবেকে গেছে পানির নহর। মাঝে মাঝে ব্রিজ। আর বসার জন্য আছে সান বাঁধানো বসার জায়গা। আমি ব্রিজরে ওপর দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। আর কেমন যেনো বিব্রত হচ্ছি নিজের দিকে তাকিয়ে।
শহরে পোলাপান গুলো কি হ্যান্ডসাম। আর মেয়ে গুলোর তো কথাই নাই। আমি একটু নেড়েচেড়ে বিভিন্ন স্টাইলে দাড়াচ্ছি যেনো আমাকে গ্রাম্য গ্রাম্য না লাগে।
হঠাৎ বাউলা গানের সুর শুনতে পেলাম। ব্রিজ পার হয়ে নিচে নামলাম।
দেখলাম একটা গোলাকার জায়গা। চারপাশে সান বাধানো বসার জায়গা। মাঝখানে একজন বাউল টাইপের লোক প্যান্ট শার্ট পরিহিতো। কোনো বিনিময় ছাড়াই গান গেয়ে যাচ্ছে। দোতারা বাজিয়ে গান পরিবেশন করেছ।
ছোট মাইক আর একটা ৬'' ইঞ্চির ব্যাটারী সামনে। তার কানে একটা স্টাইলিস মাউথপিচ। আমিও বসে গেলাম। আনমনে শুনতে লাগলাম, হলুদিয়া পাখি সোনারী বরন... পাখিটা ছাড়িলো কে..., আমার হার কালা করলামরে.... শনিবার তুই আমারে কেনে কাইন্দাইলি... । এই তিনটি গান শোনার পরেই অর্ণ ভাই এসে গেলো।
অর্ণ ভাইয়ের হাত ধরে ঘুরছি। একবার দেখাতেই মানুষ কাউকে এতোটা আপন করে নিতে পারে, অর্ণ ভাইকে দেখে আমি আশ্চর্যই হলাম। যেনো আমরা দুইজন ইয়ারদোস্ত। হাটছি দু্জনে। ভাইয়া আমাকে ধানমন্ডির বিভিন্ন লোকেশনের বর্ণনা দিতে লাগলো।
যেনো একজন পুরোদস্ত্তুর টুরিস্ট গাইড। হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম একটা অতি পরিচিত ব্রিজ। মানে বেশ কয়েকবার দেখেছি। ভাবছি এটা কোন জায়গায় যেনো দেখেছি... হঠাতই মনে হলো .. হ্যা দেখেছি একটা ছবিতে। ছবিটা ছিলো আমার একজন প্রিয় ব্যক্তি ফরিদা ফারহানা আপুর।
নর্ন ভাইকে বললাম, ভাই এখানে ফারহানা আপু একটা ছবি তুলেছে। .. অর্ণ ভাই বলতে শুরু করলো.. হ... ও তো এখানেই থাকে সারাক্ষণ।
অর্ন ভাই আমার কাছে জানতে চাইলো আমি কিভাবে শহরে আসলাম, কিভাবে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার শিখলাম ইত্যাদি। আমি অকপটে বলে গেলাম সব। হাটতে হাটতে এসে গেলাম রবীন্দ্র সরোবরের কাছে।
ভাই বললো এটা রবীন্দ্র সরোবর। আমিও মনে করলাম, অনেকবার পেপারে দেখেছি নামটা। আজ চোখে দেখবো। আমরা দেখলাম, রবীণ্দ্র সরোবরে পিঠা মেলা হচ্ছে। স্পন্সর ছিলো মোজো।
স্লোগান হলো.. Eat পিঠা, Be মিঠা। ভাইয়া বলো চলো, একটু মিঠা হয়ে আসি। বলেই ঢুকতে চাইলাম। বাট কেউ ঢুকতে দিচ্ছেনা। বুঝতে পারলাম লাইন ধরে ঢুকতে হবে।
আস্তে আস্তে পিছনের দিকে পথ ধরলাম। অনেক লম্বা লাইন। ভাইয়া বললো আসো মাঝখানে ঢুকে যাই। ঢুকতে যাচ্ছি এর মধ্যে এক তরূণীর ধমক। ভাই কি হচ্ছে এসব।
পিছনে যান। কি আর করার সবার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম। অনেক ঠেলাঠেলি সহ্য করে ঢুকলাম রবীণ্দ্র সরোবরে। দেখতে লাগলাম পিঠার প্রদর্শনী। দুউজনে হাত ধরে আছি।
কিন্তু মানুষের চাপে বারবার ছুটে গেছি। ভাই একবার আমাকে মনে করে এক মেয়ের হাত ধরেই ফেলোছিলো প্রায়...স্টল গুলোর নাম ছিলো চোখে পড়ার মতো। ... নায়রী পিঠা ঘর, নোয়াখাইল্যা পিঠাপুলি, বরিশাইল্যা পিঠাপুলি, পিঠার সম্ভার, মায়র হাতে পিঠা, নকশি পিঠার ঘর, খাইলেই দিল খুশ ইত্যাদি নানান মজার নাম। পিঠার নাম গুলো ছিলো আরো আকর্ষনীয়। ... গোলাপ কলি, কঁড়ি পিঠা, পাটিসাপটা, সরে ভাজা, আর মনে নেই...।
যাহোক কয়েকটা স্টল ঘুরে এসে নায়রী পিঠার মাঠ থেকে পিঠা কিনলাম, কড়িপিঠা। বাহ এই পিঠা দেখতে ঠিক যেনো সামুদ্রিক কড়ি। খেতেও কড়ির মতোই শক্ত। এতো শক্ত যে দাঁত বাবাজি আর খাওয়ার জন্য ভুলেও বলবেনা। তবে স্বাদ ছিলো যথেষ্ট।
পরে আরো দুইরকমের পিঠা খেলাম। আমি এমনিতেই মিঠা কম খাই। তবুও কাল অনেক মিষ্টি পিঠা খেলাম। ভাইয়া আমার জন্য ঝাল পিঠা খুজতে লাগলো। পেয়েও গেলো।
খেলাম। কিন্তু ঝাল বলতে কিছু পেলামনা।
দুজনে এক স্থানে বসে কিছুক্ষণ পাসোর্নাল কথা বললাম। পরে আবার আসলাম রবীন্দ্র সরোবরে। ভাবলাম আসলামই যখন মাগনা মাগনা দুই তিনটে গান শুনলে ক্ষতি কি।
এই ভেবে আবার ভিড় ঠেলে ঢুকে গেলাম মানুষের ভিড়ে। একটু উচু হয়ে দেখার চেষ্টা করলাম শিল্পিকে। গ্রামের সেই হারানো দিনদিনের গান করছিলো সে। খুব ভালোই লাগলো প্রতিটা গান। এখানে শুনলাম... আমি কুলহারা কলংকিনি... মালা গাথিরে সখি.. আরো বেশ কিছু লালনগীতি।
খুবই ভালো লাগলো প্রতিটি গান।
অর্ণ ভাই অনেক আনন্দ পেলো গানগুলো শুনে। আমার কাছেও অসম্ভব ভালো লাগলো। তবে গানগুলো ছিলো হৃদয়ছোয়া। তাই বিশেষ কারণেই কষ্টের কারণ হলো আমার জন্য।
বেরিয়ে আসলাম ধানমন্ডি লেক থেকে। রাস্তায় এসে অর্ন ভাইয়া আমাকে ধানমন্ডির নামকরা ভবন, স্কুল কলেজ ভার্সিটি গুলো চিনিয়ে দিলো। আর জানতে পারলাম এখানেই নাকি বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতিময় বাড়িটি। তবে দেখার সময় ছিলোনা। একটা টিকেট কেটে দিয়ে অর্ণ ভাই আমাকে বাসে তুলে দিলো।
আর হলো আবার আমরা আগামী ধানমন্ডি লেকে সময় কাটাবো। আমি বাসে উঠে রবীণ্দ্র সরোবরের মুহুর্তগুলি মনে করতে থাকলাম। খুব ভালো লাগলো। বারবার মনে হলো অর্ণ ভাইয়ের অমায়িক ব্যবহার গুলো। আসলেই মধুপুরের সবাই খুব আন্তরিক।
মধুপুরের সবার মাঝেই মধুর ব্যবহার পাওয়া যায়। আমি অভিভুত মধুপুরের কয়েকজন ভাইকে পেয়ে। সব মিলিয়ে আমার গত শুক্রবার ছিলো খুবই আনন্দঘন, আর ভালো লাগার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।