এলোমেলো
অবরোধে অনেকেরই অনেক কষ্ট হচ্ছে। তার সাথে হয়ত আমার কষ্টের তুলনা কিছুই না। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না, নিজের কাছে নিজের কষ্টই বড়! কাল কষ্ট করেই ক্যাম্পাস থেকে ঢাকায় এলাম। একঘন্টার জায়গায় লাগল পাঁচ ঘন্টা। থার্ড ইয়ার ফাইনাল চলছে।
12 তারিখ এক পরীক্ষা দিতে হলে গিয়ে উঠতে হলো। শেষ পর্যনত্দ পরীক্ষা হলো না। হলে থাকলে দম আমার বন্ধ হয়ে আসে। আমাকে ফিরতেই হবে।
অনেকভাবে অনেক ট্রাই করলাম।
লাভ হলো না। এদিকে 12 তারিখ ক্যাম্পাসের গেটের সামনেই এক বাস পোড়ানো হয়েছে। অবস্থা ভয়াবহ। হাইওয়েতে কোন গাড়ি চলছে না। অবশ্য রোজার মধ্যে একদিনের যে অবরোধ হয়েছিল সে দিনও আমাকে ক্যাম্পাসে আসতে হয়েছিল।
টিউটোরিয়াল ছিল। স্যারকে বললাম আমারটা পরে নিতে। স্যার কয়েক কাসমেটের সামনে বললেন আমার সমস্যা হবে তাতে, তুমি যেভাবে পার দাও। আমার গেল জেদ চেপে। সকাল ছটায় ফার্মগেটে একঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু পেলাম না।
এক টেম্পুতে উঠলাম। মাঝ পথে গিয়ে নামিয়ে দিল। সেদিন ছির বৃষ্টির দিন। পুরো রাসত্দায় মানুষতো দূরের কথা, একটা প্রাণী নেই। হঠাৎ পেলাম এক পুলিশের গাড়ি, এক অফিসার বসা।
তাকে বললাম আমাকে ক্যাম্পাসে পেঁৗছে দিন। তিনি এক ফোর্স কল করে এক সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব দিলেন আমাকে ইউনির্ভাসিটিতে পৌছে দিতে। স্যারতো আমাকে দেখে হতভম্ব।
সেদিন যখন একা আসতে পেরেছি সো আজ যেতেও পারব। তাছাড়া সঙ্গে আছে মুন্নী।
আমার ফ্রেন্ড। দুজনেই রাতে ডিসাইড করলাম, যাই হয় হোক দরকার হয় কাল হেঁটেই ঢাকা যাব। এডভেঞ্চার হবে।
ভোর ছটায় হল ছাড়লাম। শীতে কাঁপতে কাঁপতে হেঁটে ডেইরী গেট এসে দাঁড়িয়ে আছি।
কোন বাস নেই। হঠাৎ একটা এল। উঠলাম। সাভার বাজারের কাছে যেতে না যেতেই রাসত্দার লোকজন হুমকি ধামকি দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দিল। শত শত মানুষ।
পরিস্থিতি থমথমে। যেকোন সময় বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে। এই রোড দিয়ে আর যাওয়াটা সেফ হবে না। কর্ণার দিয়ে হেঁটে হেঁটে বিরম্নলিয়া রোডের মাথায় এসে রিকশা নিলাম। যাব আক্রাইন।
মুন্নী গাইড। ও কয়েক বছর আগে এই রোড দিয়ে একবার এসেছিল।
চারিদিকে সবুজ আর কুয়াশার ধোয়ার মাঝ দিয়ে রিকশা গেল রাসত্দার শেষ পর্যনত্দ। অর্থাৎ খেয়ারঘাট গ্রামে। সেখানে খালের পাড়ে নেমে পড়লাম।
খালে পানি নেই। যেখানে পানি তার উপর অনেক উচু এক সিমেন্টের পুল। বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয়। পুল পার হয়ে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে চললাম। অদ্ভূত কিছু বাড়ি আছে সে গ্রামে।
পুরোন ইটের নকশা করা স্থাপনা। দেখতে দেখতে হাটছি। এদিকে ক্ষুধায় পেটে ঢোল বেজে চলছে। মুন্নীকে বললাম চল কোন বাড়িতে ঢুকে ঘুম থেকে তুলে বলি আমাদের নাসত্দা দিতে। বেচারী মার খাবার ভয়ে কিছুতেই রাজি হল না।
কি করা। মুদির দোকান পেলাম। শুটে যাওয়া বিস্কুট আর ড্রিংকসের বোতল নিয়ে হেটে চলেছি মানুষ কে জিজ্ঞেশ করতে করতে। মুন্নীও কনফিউজড, ঠিক পথে চলছি তো? ঘন্টাদেড়েক হাঁটার পর পেঁৗছে গেলাম বেড়ী বাধের কাছে। আমি জীবনে প্রথম নৌকায় চড়লাম।
খাল থেকে বাঁধ অনেক দূর। বাঁধের উপর দিয়ে কোন গাড়ি চলছে না। হঠাৎ এল এক টেম্পু। কাঁধে ভারী ব্যাগ। তা নিয়েই দিলাম এক দৌড়।
টেম্পুতে উঠে মনে হল এত সুন্দর জায়গা, কিছুক্ষন সময় না কাটিয়ে যাব তা কি করে হয়। কিছুদূর গিয়ে টেম্পু থেকে নেমে পড়লাম। হেঁটে হেঁটে পেলাম এক চায়ের দোকান। সেখানে কিছু র্যাব দাড়িয়ে। চায়ের অর্ডার দিয়ে এগিয়ে গেলাম তীরে।
কিছুক্ষন সেখানে বসে আবার চায়ের দোকানে ফিরলাম। এক র্যাব এগিয়ে এল পরিচয় জানতে। কথায় কথায় প্রশ্ন করেই বসলাম- পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। কিন্তু আমরা কেন পুলিশকে এতো ভয় পাই। পুলিশকে কেন আমরা আমাদের বন্ধু ভাবতে পারিনা।
সে র্যাব অফিসার ভালভাবেই উত্তর দিচ্ছিলেন কিন্তু আরেক জন পাশ থেকে গেলেন আমার উপর মহা ক্ষেপে। কারণ আমি বলে ফেলেছিলাম, পুলিশের উপর আমাদের কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। তার ক্ষেপে যাওয়া দেখে টনক নড়ল। খেয়াল করে দেখি তার চুলের ছাট আর্মির নয়, পুলিশের! তাদের যুক্তি, আইনের কারণে তাদের হাত বাঁধা। আমিও বললাম, আইনের বাইরেও কিছু কর্তব্য থাকে।
একজন মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি সহযোগিতাবোধ, মমত্ববোধ থাকা উচিত। যা পুলিশের ব্যবহারে আমরা পাই না। আমার কথা শুনে ভদ্রলোকের মুখ কঠিন হয়ে গেল।
এরই মধ্যে তাদের এক গাড়ি এল যেখানে আরো অনেক র্যাব। আমাদেরও চা খাওয়া শেষ।
এবার রিকশা নিলাম। মিরপুরের কাছে এসে আবার রিকশা নিলাম এক নাম্বার পর্যনত্দ। তারপর আবার সাড়ে এগার পর্যনত্দ। সেখান থেকে বার নাম্বার। নাহ! কোন বাস নেই।
এবার রিকশা নিলাম আমার বাসা তেঁজগায়ে। পথে আইডিবিতে মুন্নীকে নামিয়ে দিলাম। বাসায় পেঁৗছতে বেলা এগারটা। ঢাকার ভেতর পুরোটা পথই ভয়ে ভয়ে ছিলাম। এতো মানুষ রাসত্দায়।
এতো মিটিং মিছিল। যাই হোক নিরাপদেই পেঁৗছলাম বাসায়।
দরজা খুলতেই আম্মু বলে উঠল, আমার ময়না দেখি কাক হয়ে ফিরেছে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।