আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই ঈদে এমন কিছু করুন যেটা নবী নিজে করতেন

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

মদীনা। ঈদের দিন। ঈদের খুশি তখন চারিদিকে। মদীনার বাতাসে উৎসবের আমেজ। সকালের ঈদের নামাজের জন্য নারী পুরুষ সবাই শহরের প্রান্তের একটা খোলা জায়গা জমায়েত হচ্ছেন।

তাদের সবার প্রিয় মানুষটা আসছে। তিনি নামাজ পড়াবেন। রাসুল নামাজ শেষ করার পরে সবাই সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর যার যার ঘরে ফিরতে ব্যস্ত। নবীও ফিরতে শুরু করলে বাড়ির দিকে। চারিদিকে বেশ উল্লাস।

বিশেষ করে ছোট শিশুগুলো দারুন ফুর্তিতে হইচই, চেঁচামেচিতে ব্যস্ত। শিশুদের উচ্ছাস ভেজা আনন্দ দেখে সৌম্য মানুষটার ভিতরেও সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। আবার হাটতে থাকেন নবী। গভীর চিন্তার ডুবে গিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ পথের পাশে এক শিশুকে চোখে পড়ে। চিন্তায় ডুবে গিয়ে তিনি প্রায় না দেখে চলেই যাচ্ছিলেন।

বাচ্চাটার কান্না তার কানে আসায় সম্বিত ফিরে পান তিনি। কাছে গিয়ে শিশুর করুন মুখটায় চোখ পড়লো। গায়ে মলিন, প্রায় ছেড়া পোশাক, দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন স্নান জোটে নি। ঝুঁেক শিশুটির কাধ স্পর্শ করে নবী বললেন, - 'তুমি কাদছো কেন?'। - 'ছাড়ো আমাকে, যাও!!' ফুপিয়ে বলে উঠলো ছেলেটা, ঘুরে দেখারও আগ্রহ নেই তার।

নবী আলতো করে তার মাথার চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে আবার জানতে চাইলেন ওর কান্নার কারন। এবার বরফ গললো। - 'আমার বাবা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, মা আবার বিয়ে করেছেন। আমার সৎ-বাবা চায়না আমি আর ঐ বাড়িতে থাকি। আজকে ঈদ, সবাই খুশি।

সবাই নতুন জামা পড়ছে, আমি ছাড়া। আমার খাবার কিছু নেই। নিজের কোন ঘরও নেই। ' কথাগুলো নবীকে স্পর্শ করে। তিনি নিজেও এক মার্জিনাল এতিম হিসেবে বড় হয়েছেন।

এই শিশুর কষ্টের তীব্রতা, অভিমান তিনি বোঝেন। তিনি বলতে লাগলেন, 'আমি জানি তোমার ঠিক কেমন লাগছে। আমিও তোমার মতো ছোট্ট থাকতে বাবা, মা দুজনকেই হারিয়েছি'। এবার বালকের অবাক হওয়ার পালা। তার মতোই আরেকজন এতিম তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে শুনে ঘুরে তাকিয়ে নবীকে দেখতে পেয়ে চোখের পলকে দাড়িয়ে যায় সন্মানে।

রাসুল স্বয়ং!!! এমন কেউ নেই এই শহরে যে নবীকে চেনে না। মদীনার প্রতিটি গাছের পাতাও যেন রাসুলকে সন্মান করে, ভালোবাসে। ওর এরকম প্রায় লাফিয়ে দাড়িয়ে পড়ায়, নবী হেসে ফেললেন। বললেন, 'যদি আমি হই তোমার নতুন বাবা, আয়েশা তোমার মা, ফাতিমা তোমার বোন - ক্যামন হয় বলোতো?'। 'সেটা হবে দুনিয়ার সব থেকে সেরা!!' খুশিতে ঝলমল মলিন পোশাকের বালকটার মুখ।

ফুর্তি যেন ধরে না। বিস্ময় তখনও চোখে মুখে। হাত ধরে যখন স্বয়ং নবী তাকে বাড়ির দিকে নিয়ে চলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে গর্বিত আর সুখী এই বালক। যার নাম ছিলো জুহাইর বিন সাগির। -------------------------------------------------- ঘটনা হইলো, এই ধরনের এতিম আমাদের আশে পাশে অভাব নেই।

এতিমরা পৃথিবীর সেই মানুষগুলো যারা খুব আপনজনের স্নেহ বঞ্চিত। আমরা যারা ভাই বোন, বাবা মায়ের সানি্নধ্য পাওয়ার সৌভাগ্যে সৌভাগ্যবান, তাদের জন্য কল্পনা করাটা আসলে খুব কঠিন যে বছরের 365 দিন, বছরের পর বছর কেউ আপন করে কথা বলার, স্নেহ দেওয়ার কেউ নেই। কষ্টে শেয়ার করার কেউ নেই। আবদার পুরন তো দুরে থাক, বলার মতো কেউ নেই। স্বপ্ন বিহীন একটা ধুসর জগৎ।

দিনের পর দিন। যখন ঈদের মতো উৎসব আসে, তখন তাদের ধুসর জগৎটা বাইরের দুনিয়ার তুলনায় আরো খানিকটা মলিন হয়ে আসে। গভীর দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। চান্স খুব কম যে আপনার বা আমার ঈদের নামাজ শেষে ফিরে আসতে গিয়ে জুহাইর বিন সাগিরের মতো কাউকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ হবে। আর খুঁজে পেলেও সাধারনত অবহেলিতদের পাশ কাটিয়ে দ্রুত হাটাটাই আমাদের অভ্যস্ত ভদ্রতা।

সুতরাং এই সম্ভাবনা আরো কম যে এরকম কোন এতিমকে মমতা থেকে আপনি ডেকে আনবেন নিজের বাসায়। প্র্যাক্টিকাল কি হতে পারে চিন্তা করছিলাম। তাই বলি কি, এবারের ঈদের আপনার এলাকার কাছাকাছি যে এতিম খানা আছে, সেখানে কি যাওয়া যায়? কতজন আর এতিম থাকে ওখানে? 30জন, 50 অথবা বড় জোর 100। যদি খুব বেশি হয়, তবে এইজ গ্রুপ টার্গেট করতে পারেন। যেমন 10 বছরের নিচেদের জন্য কিছু উপহার বা খাবার কিনবেন।

ক্যামন হয় যদি সবার জন্য একদম অল্প দামের (অথবা মডারেট, ডিপেন্ড করে সামর্থ্যের উপরে) কিছু কিনে নিয়ে যাওয়া যায়। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না ওরা প্রত্যেকে যদি একটা "পোলার চকবার" আইসক্রিম খেতে পারে - কতখানি খুশি ওরা। কল্পনাও করতে পারবেন না ওরা যদি দুইটা নতুন, সুন্দর লেখার খাতা পায় সেইটা কত যত্ন করে আগলে রাখে। অথবা সবাই মিলে খেলার জন্য বল, ব্যাট। বিশাল সম্ভাবনা যে এই শীতে ফুটফুটে বাচ্চাগুলো ঠান্ডা মাটিতে খালি পায়ে হাটবে, অসুখ বাধাবে, অবহেলায় রোগে ভুগবে।

এতিম তো, ওদের জুতো, স্যান্ডেল কে দিবে বলেন? সরকারী এতিম খানায়ও দুনর্ীতি প্রবল। খুব ছোটদের পায়ের মাপের স্যান্ডেল বা জুতোও হতে পারে ওদের খুশির উৎসব এবং উপকারী জিনিস। অথবা বঙ্গবাজার থেকে লটে কিনতে পারে ছোটদের মাপের গরম কাপড়, শোয়েটার। শীতে কাজে দেবে। খুব বেশি পয়সা যাবে তা না।

(আর গেলেও ঐ টাকায় কি করি আমরা তাতো সবাই জানি। চাইনিজ খেতাম হয়তো এক বেলা। দুটো ফালতু কথা বলার জন্য ফোন কার্ড কেনা। ) যেটাই করেন, আগে এতিম খানায় গিয়ে একটু হোমওয়ার্ক করে আসতে হতে পারে, কতজন আছে ওখানে, কি বয়স রেইঞ্জ। অথোরিটিকেও ইন্টেনশনটা জানানো প্রয়োজন।

আরো এফেক্টিভ হয় যদি সমমনা কয়েকজন বন্ধুরা মিলে সবার কনট্রিবিউশন এক করে কিছু দেওয়া যায়। গতবার দেশে গিয়ে আজিমপুর এতিমখানায়, আমার কিশোর বয়সে না খেয়ে পয়সা জমানো যত সব বই ছিলো সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এতিমখানায় প্রচুর ঐ বয়সের ছেলে মেয়েরা আছে যাদের মনকে খুলে দিতে, কল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, বড় মানুষ হতে ঐ বইগুলো স্বপ্ন দেখাতে পারে। হাবিজাবি বই। তিন গোয়েন্দা, কিশোর ক্লাসিক, ওয়েস্টার্ন, রূপকথা।

কিন্তু আমি জানি ঐ তথাকথিত হাবিজাবি বইগুলোর শক্তি কতখানি। আমি দেখেছিলাম চকচকে বুদ্ধিদৃপ্তি এতিমদের চোখগুলো। এতিমদের জন্য যেকোন কিছু করুন এই ঈদে, যেমনটা নবী থাকলে করতেন। টুপি পরে আতর মেখে মসজিদের নামাজ পড়তে যাওয়া, অথবা ঘরের এসি বা ফ্যান ছেড়ে দিয়ে আরাম করে ফিনি্ন পায়েস খাওয়ার মধ্যে আনন্দ যতখানি, বিশ্বাস করতে পারেন যে আরেকজন এতিমকে খুশি করতে পারার আনন্দ লাখগুন। হয়তো কোটিও।

সত্যি বলতেছি, আমি হিসাবটা ঠিক জানি না। যারা বিদেশে আছেন তারা নিজের দেশের বাসায় কাউকে অনুরোধ করতে পারেন আপনার হয়ে এতিম খানায় কোন খাবার পাঠাতে। সস্তা হোটেলের 30 প্যাকেট বিরানিও ওদের জন্য হোটেল সেরাটনের মেনু্য। কে জানে এটা হয়তো ওদের জীবনের প্রথম চিকেন বিরিয়ানী। আমি তো দিব্যি খাবার টেবিল ঘিরে ওদের চকচকে উত্তেজিত চোখগুলো দেখতে পারছি ।

অল্টারনেটিভাবে কোন চ্যারিটিকে যারা এতিম শিশুদের নিয়ে কাজ করে (যেমন [link|http://www.smallkindness.org/|

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।