আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড. ইউনূসের ক্যাম্পাস জীবন

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

ছাটবেলায় আমার ভাইটি বড় দুরন- ছিল। তখন কে জানত এই দুরন- ছেলেটি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে। এ কথাগুলো বলছিলেন নোবেল শান-ি পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বড় বোন মমতাজ বেগম। ছোট ভাইয়ের (ড. ইউনূস) শৈশব ও কৈশোর দিনগুলো তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ভাইটি আমার অসাধারণ মেধাবী ছিল।

সে সবাইকে হাসাতো কিন' নিজে হাসত না। মা-বাবার কাছে ছিল খুব আদরের। শৈশবের কথা মনে করে তাঁর চাচী জাহানারা বেগম বলেন, ইউনূস ছোটবেলায় যেমন দুষ্টু ছিল তেমনি ছিল মিশুক। তখন কেউ চিন-া করেনি আমাদের সবার আদরের সন-ান ইউনূস বাংলাদেশকে এমন উচ্চ শিখরে নিয়ে যাবে। তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন চট্টগ্রামে।

এরমধ্যে শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী নজুমিয়া হাটের ফোরক মঞ্জিলে। সাত ভাই এবং দুই বোনের কেউই এখন গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। শনিবার ড. ইউনূসের স্মৃতি বিজড়িত গ্রামের বাড়িতে গেলে এলাকাবাসীর মধ্যে বর্ণিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। শুক্রবার বিকালে ড. ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির খবরে পুরো গ্রাম আনন্দে ভেসেছে। ওইদিন দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

দিনমজুর জসিম উদ্দিন জানান, তিনি প্রতি ঈদে বাড়িতে যান। বাড়ির প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর নেন। হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্ম। সেটা 1940 সাল। শৈশব কেটেছে সেখানেই।

মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে, গাছের ফল পেরে, পুকুরে সাঁতার কেটে আর পাঠশালার নামতা পড়ে। ড. ইউনূসের বাবা হাজী দুলা মিয়া সওদাগর অষ্টম শ্রেণী পর্যন- পড়েছিলেন আর মা সুফিয়া খাতুন চতুর্থ শ্রেণী পর্যন-। কিন' পড়াশোনার প্রতি গভীর টান ছিল তাদের। তাই তারা সাত সন-ানকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। 1945 সালের দিকে ড. ইউনূস গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন।

স্কুলটির নাম মহাজন ফকিরের স্কুল। সেই স্কুলেই গ্রামের আর দশটা ছেলেমেয়ের সঙ্গে হুটোপুটি করতে করতে পড়ালেখা। এমনি করেই দুই বছর কেটে গেল। হাজী দুলা মিয়া সওদাগর তার পরিবারকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে এলেন। তার দোকানের পেছনেই পরিবারের থাকার ব্যবস্থা।

এটা ছিল খাতুনগঞ্জ। এখানেই লামাবাজার প্রাইমারি স্কুলে তার প্রাইমারি শিক্ষা জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু। এরপর 1951 সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হলেন। নামকরা স্কুল, শিক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত। তার মধ্যে এখানে স্কাউটিং ছিল।

বিশ্ব জয়ের নেশা-পৃথিবীকে জানার নেশা হয়তো তখন থেকেই ছিল এ মানুষটির। কারণ তখনই তিনি স্কাউটিংয়ে ভর্তি হলেন। ক্লাস এইটের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে 270 জনের বিশাল বহরের সঙ্গে ট্রেনে পাকিস-ান জাম্বুরি। সারা পশ্চিম পাকিস-ান ঘুরে ফেরার পথে কলকাতাও ঘুরে এলেন। কলেজিয়েট স্কুল থেকেই তিনি ম্যাট্রিকে স্ট্যান্ড করলেন।

সারা দেশের 39 হাজার ছেলেমেয়ের মধ্যে 16তম। এরই মধ্যে তিনি সুযোগ পেলেন বিশ্ব জাম্বুরিতে যাওয়ার। এ ছিল তার জন্য আরেকটি নতুন পথের যাত্রা। কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাছে জাম্বুরি। 1955 সালে যাত্রা শুরু করলেন তারা।

প্রথমে করাচি, সেখান থেকে প্লেনে ইংল্যান্ড। 1940 থেকে 1955 মাত্র 15 বছরের ব্যবধানে বথুয়া গ্রামের কিশোর ছেলেটি ঘুরে এলেন নিউইয়র্ক, নায়াগ্রা জলপ্রপাত, লন্ডন, জার্মানি, যুগোস্লাভিয়া, হল্যান্ড, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, তুরস্ক, লেবানন, সিরিয়া ও ইরাক। ছয় মাস এভাবেই কেটে গেল। দেশে ফিরে চিটাগাং কলেজে ভর্তি হলেন। এখানে তিনি পড়াশোনার বাইরেও নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে গেলেন।

নাটক করতেন। পত্রিকাও বের করেছিলেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি_ সব ছিল তাতে। এখানে তিনি সহকমর্ী হিসেবে পান আবদুস শাকুরকে (সাহিত্যিক)। তার মধ্যেই তিনি দৈনিক আজাদীতেও লিখতে শুরু করেন।

কলাম লিখতেন তিনি_ কলামের নাম ছিল হিংটিং ছট। 1957 সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ভর্তি হন ঢাকা ইউনিভার্সিটির অর্থনৈতিক বিভাগে। তিনি এসএম হলে থাকতেন। এখানে তিনি সহপাঠী হিসেবে পান ফখরুদ্দীন আহমদ (সাঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর), মির্জা আজিজ (সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান), সৈয়দ আহমেদ (সাবেক সচিব), মুশফিকুর রহমান (সাবেক সচিব)সহ আরও অনেক প্রতিভান সহপাঠিকে।

এ সময় তিনি উত্তরণ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। পরে বু্যরো অব ইকোনোমিকসে কিছুদিন কাজ করলেন। এর মধ্যেই পড়াশোনার পাঠ শেষ এবং অল্পদিনের মধ্যেই চিটাগাং কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান। অধ্যাপনা করতে করতেই পড়াশোনার দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হল। ফুলব্রাইট স্কলার শিপ নিয়ে আমেরিকা চলে গেলেন।

এটা 1965 সাল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলের টেনিনিতে ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হলেন। সেখানে প্রথমে মাস্টার্স এবং পরে আবারও স্কলারশিপ পেয়ে 1965 সালে পিএইচডিতে ফুল ব্রাইট ফেলোশিপ অর্জন করেন। এরপর তিনি 1972 সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। **যুগান্তর***


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।