আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই চিরন্তন চাপাবাজের আত্মসমর্পণ

[অন্যর দোষ না খুঁজে আগে যদি সবাই নজের দোষটা খুঁজত তাহলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত]............... [পথের শেষ নেই, আমার শেষ আছে, তাইত দ্বন্দ্ব] http://mamunma.blogspot.com/

ঘটনার শুরু সেই শতবর্ষ পূর্বের সেই রাতে। আমার সহস্রতলা কুড়ে ঘরের ছাদে দাঁড়িয়ে সূর্যের আলো ভক্ষণ করছিলাম। হঠাৎ আঁধার আকাশ থেকে একখানা মই নেমে এল। মই বেয়ে আমার সম্মুখে উপনিত হলো একটা প্রাণী। অবিকল আমার মত দেখতে।

জিজ্ঞাস কররাম, কে তুমি? উত্তর এল, 'আমি চিরন্তন চাপাবাজ। ' ঃ কি চাও? ঃ তোমার সঙ্গ। .........আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে প্রবেশ করল আমার মাঝে। পরদিন সকাল থেকে পরিচিত আঙ্গিনায় আমার নাম হয়ে গেল চাপাবাজ। আজ 2006 সালে এসেও সেই নামের বদহজমে অতিষ্ঠ।

সেই ঘটনার পরে দ্রুত আমার সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি, যা বলেন, দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেক সমাজকর্তারাই আমাকে ডাকতেন তাদের আত্ম অভিলাষ আমার চাপাবাজির জোড়ে বিস্তুত করতে । সেই 1947 সনে দেশ বিভাজনের কালে ইংরেজ গভর্নর মাউন্টব্যাটেন সাহেবও আমাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মূল কাজ ছিল জনগনকে দ্বিজাতি তত্ত্ব বোঝানো। যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম সর্বচাপাবাজি প্রচেষ্টায়।

1971সন, মার্চ মাস। পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে শোষনের আগ্রাসন। ভীষণ অশান্তি। ইয়াহইয়া খান ডাকলেন, বোঝাতে বললেন পূর্ব পাকিস্তানীদের জন্য শান্তির ব্যবস্থা হবে, সভা , সম্মেলন হবে। আমাকে দিয় চাপাবাজী করাতে করাতেই ওই বেটা 25 শে মার্চ রাতে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম ধ্বংসযজ্ঞ চালালেন।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিররীহ পূর্ব পাকিস্তানীরা যুদ্ধে নেমে গেল। সত্যের জয় হলো। বাংলাদেশ নাম নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলো। স্বাধনি এ দেশটিতে আটকা পড়ে গেলাম । চাপার জোড়ে বাংগালী এবং বাংলাদেশী হতে সময় লাগলনা।

নব্য দেশে কচি প্রাণে উঠতি অনেক সমাজকর্তাই আমাকে খুঁজে বের করলেন। নানা মতাবলম্বী লোকই আমাকে তখন ডাকেন। পেটের দায়ে আর ভিতরের সেই অ্যালিয়েনের প্ররোচনায় সবার কাজই করে দেই। এরকম এক বিশেষ দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে গোপনে বোঝালাম সকল যুদ্ধাপোরাধীদের ক্ষমা করে দিতে। উনি দিলেন।

চাপার জোড়ে আমাকে সময় সময় পাঠানো হয়েছে ওনাকে অনেক কছিু বুঝিয়ে সুবিধা আদায়ের জন্য । উনি অবশ্য আমাকে খুব একটা কাছে ঘেষতে দিতেন না। 1975, আগষ্টে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পর রেডিওতে ডাকল কিছু দু'মুখো শয়তান। দেশ রক্ষা হয়েছে, শত্রু নিধন শেষ..., এ ধরনের বক্তব্য জনগনকে শোনানো হলো আমার চাপাবাজী ধার করে। উত্তেজনা পূর্ণ দেশে কাজের অভাব হয়না চাপাবাজের।

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সাহেব ক্ষমতা অধিগ্রহন করে ডেকে পাঠালেন। ভয় আমি আর্মিদের বরাবরই পাই। 25শে মার্চে ইয়াহইয়া যে ভয়টাই না দেখিয়েছিলেন, পিলে চমকে ওঠে ভাবলে। জিয়া সাহেবের কথায় স্টেজে স্টেজে উঠি, বলি আকার ইঙ্গিতে আকাশের চাঁদ এনে দেব জনগনের হাতে। এদিকে চাঁদের কন্টাক্ট নম্বর এত চাইলাম নীল ভাইজানের কাছে।

বিশ্বাসই করেনা আমাকে। করবে কি করে আমি যে তার চন্দ্র অভিযানের বিপক্ষে এক যুক্তিময় চাপাকাহিনী বানিয়েছিলাম একদা সোভিয়েত এর কথায়। সে কাহিনী আরেক দিন শোনাব । সময় গড়াল। হু. ম এরশাদ ক্ষমতায় এলেন।

একই ভয়ে আবর উঠলাম স্টেজে। চাঁদ সূর্য সব এন দিলাম জনগনের সীমানায়। চিৎকার করে বললাম, জনদরদী এরশাদ সাহেব একজন সুকবিও বটে। হ্যাঁ/না ভোটের পরে বলে দিলাম সুষ্ঠ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শেষ মুহুর্তে পালালাম।

আন্দোলনের নেতাদের কাতারে দাঁড়িয়ে বললাম, স্বৈরাচার নিপাত যাক। নিপাত গেল। চাপাবাজি এক সত্য হলো। ভোটে জয়ী হয়ে 1991 সনে ম্যাডাম ডাকলেন, ওনার হয়ে বললাম, সুষ্ঠ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। তৎকালীন বিরাধী দলের নেত্রীও আমাকে 90 এর গনআন্দোলনের সময় বেশ চিনেছিলেন।

উনিও ডাকলেন। সুবিধাবাদী হলাম। মুখোশ পরে অন্যপাশে গিয়েও বললাম, ভোট কারচুপী। মানিনা। মানবনা... এতদিনে মনে হলো সত্যিকারের বাংগালী হয়েছি।

দু'দলের মাঝেই অবাধ যাতায়াত। 1996 সনে পরপর দু'টো ভোট দেখে আর এক দলের আরেক দলের নামে দেশ বিক্রেতার বদনাম এর ফুলঝুরি দেখ মাথা ঘুরে গেল। মানুষের পেটে ভাত জোটেনা আর নেতারা করেন ভোটবিলাসী খেলাধূলা। গরীবের ঘোড়া রোগের দেশ। নিরীহ জনগনের কাতারে একটু উঁকি মারতেই ধরা খেয়ে গেলাম।

মনে হলো জনগনও চাপাবাজি ধরতে শিখেছে। পরে বুঝেছি ওটা ভুল ধারনা ছিল। আসলে জনগনও আমাকেই খুঁজছিল। এ িদকে দলগুলোর ভীষণ টানাহেঁচড়া। ভয়ে আকাশে উঠে মুখ লুকালাম।

সেদিনই ভীষণ ঝড় বৃষ্টি। বন্যাও হলো। সারাদেশের মানুষ ভিজল। আমার ভেতরের সেই আকাশী চাপাবাজ অ্যালিয়েন বৃষ্টির জলে মিশে ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। এর পর থেকে সবার মুখে মুখে শোনা যেত লাগল অদ্ভুত অদ্ভুত বক্তব্য।

সমাজ কর্তাদের মুখে একটু বেশী। উদাহরণ সরূপ, ক্ষমতাবান একজন বললেন, সন্ত্রাসী মাটির নিচে থাকলেও তাকে খুঁজে বের করা হবে ......, ...............................আমরা বিরোধী দলে গেলে কখনও হরতাল করবনা। সময় গড়াল। নিরীহ পথিক হয়ে জনগনের কাতারে সহ্যের আগুনে পুড়ে মিশে আছি। স্বধীনতার বিরোধী শক্তি সহযোগে নতুন জোট সরকার এর 2001 সনে।

উত্থান হলো নতুন নতুন চাপাবাজের এক মন্ত্রী বললেন, বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি..., অন্য একজন, ' আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন। ' বোমবাজীর নিদারুন সব অঘটনের পর সরকার বলে বিরোধী দলের কান্ড আর বিরোধী দল বলে সরকারের। আর আমি শুনি নিরবে কাদের যেন হাসি, যাদের অনেকের সাথে অনেক অপকর্মে চাপাবাজী করেছি কতকাল। টিভি খুললেই শুনি ক্রসফায়ার নামে এক ইউনিভার্সাল গল্পগাঁথা। যে কাহিনীর বুনট একই কেবল চরিত্র গুলো বদলায় প্রতিদিন।

দিন চলছিল পক্ষ বিপক্ষ নামে দু'দলের বিষ নিঃশ্বাসের মাঝে। একই দেশে কিসের পক্ষ কিসের বিপক্ষ বুঝিনা আজকাল । তবে জানি পূর্ব পাশেও তারা পশ্চিম পাশেও তারা। মাঝে আমি পলাতক পাপী। একদিন চাপাবাজীর এক সভায় চাপাবাজী শুনতে গিয়ে বোমার আঘাতে হাসপাতালে পেঁৗছালাম।

এক নেতা চিনে ফেলল। বনানীর বাতাসীয় এক ভবনে চাকুরীর অফার পেলাম চাপাবাজীর গবেষক হিসেবে। । কিন্তু আমার মাঝে সেই চাপাবাজ অ্যালিয়েন যে আর নেই। সে এখন সবার মাঝে মাঝে ছড়িয়ে।

অনেক কষ্টে পালিয়ে তাইতো এসেছি ব্লগের পাতায় আত্ম যন্ত্রনায় জীবনের প্রথম সত্যবাজী করতে, চাপাবাজি ছেড়ে। (c) mamunmaziz 2006

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।