আমার ভিতর তুমি থাকো আমি কোথায় রই, আমি না থাকিলে তোমার থাকার জায়গা কই?
[গাঢ়]ডেটলাইন 4 অক্টোবর[/গাঢ়]
সকাল 10টায় প্রিয় বন্ধুর সেল ফোন কলে ঘুম ভাঙ্গলো। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো, [গাঢ়]দোস্ত,আমার বোধহয় বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। [/গাঢ়] অবাক হলাম না তার কথায়। কারন ঘটনা কি আমি জানি। বললাম, [গাঢ়]আমার সঙ্গে আবেগী কথা বলবিনা।
কী করতে হবে বল। [/গাঢ়] ও বললো-তোকে আজকেই কুমিল্লা আসতে হবে। তোকে দিয়ে আমার বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।
বুঝতেই পারছেন পাঠক, প্রেম বিষয়ক কেস। দোস্ত একটি মেয়েকে ভালোবাসে।
(আমার কাছে ভালোবাসার মানে হলো গুড হাউজ)। মেয়েটির বাবা ছিলো এক দূনীর্তিবাজ কলেজ প্রিন্সিপাল। তাও আবার আমার গ্রামের বাড়ি এলাকার সরকারী কলেজের। মোটামুটি টাকা পয়সা কামিয়ে এখন কুমিল্লা শহরের নামকরা বড়লোক। মেয়েকে তিনি আমার বন্ধুর সঙ্গে বিয়ে দেবেন না।
যেহেতু এখনো কোনো পারিবারিক প্রস্তাব দেয়া হয়নি তাই আমি চিন্তা করলাম, বন্ধুর জন্য একটা প্রস্তাব নিয়ে যাই। অফিসে আসার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আরো 3 ঘন্টা ঘুমালাম। বেলা 2টায় ঢাকার এক বন্ধুর গাড়ি নিয়ে কুমিল্লা রওয়ানা দিলাম। যাওয়ার আগে বন্ধুর শ্বশুর আব্বার (যদিও বন্ধু এমন দূনীর্তিবাজকে আব্বা বলতে নারাজ) সঙ্গে সেলফোনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে গেলাম যে ইফতারির পর তার সঙ্গে আমি দেখা করবো কুমিল্লা তার নিজ বাড়িতে। কুমিল্লা পোঁছে ইফতারির আগে ফোন দিলে শ্বশুর সাহেব নাখোশ।
তিনি আমার সঙ্গে দেখা করবেন না। তার সময় নেই। তিনি আবার আগের কাতারে দাড়িয়ে নামাজ পড়েন। তাই তারাবী পড়ার জন্য ইফতারির পর পর বের হেয় যাবেন। গাড়ি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়।
গিয়ে ধরলাম তাকে। দেখলাম বাড়ির গেটে দাড়িয়ে শ্বশুর সাহেব। পরিচয় দিতেই চিনলো আমাকে। শুধু তাই নয় আমার বাবাকেও চিনেন তিনি। পড়লাম এবার বিপদে কিভাবে প্রস্তাব দেবো।
ভনিতা না করে সোজাসুজি প্রস্তাব দিলাম তাকে বন্ধুর ব্যাপারে। তিনিও সরাসরি প্রথম কথাতেই না করে দিলেন। শিক্ষক ছিলেন তাই আমাকে উদাহরন দিলেন বার্নাড শোর কয়েকটি উক্তি দিয়ে যার একটি ছিল ভারসাম্য বিষয়ক। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন আকাশ আর মাটির কখনো মিল হয়না। কথাটি শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে সরাসরি বলেও দিলেন।
কিন্তু শ্বশুর সাহেব জানেন না নিউটনের 3য় সূত্রটি আমারও জানা (প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে)। এরই মধ্যে কয়েকটি ছেলে এসে আমাকে ঘিরে রাখলো। ভয় পেলাম না। কারন কুমিল্লায় আমার যথেষ্ঠ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে।
সঙ্গে বন্ধুর দামী গাড়ি নিয়ে গিয়েলিাম বলে তিনি ভাবলেন ওটা আমারই।
একসময় কথাচ্ছলে বলেও ফেললেন, বাবা আজ যদি তুমি নিজের জন্য এমন প্রস্তাব নিয়ে আসতে তাহলেও আমি চিন্তা করে দেখতাম। শ্বশুর সাহেব মনে হয় গাড়িটি দেখে আমাকে বড়লোক ভেবেছিলেন। ভাগ্যিস বন্ধু আমার সঙ্গে ছিলোনা। তাহলে ওর প্রস্তাব আমার ওপর দিয়ে যাচ্ছে শুনলে আমাকে খুন করে ফেলতো। (হা. হা. হা.) বিদায় নিয়ে হতাশ মনে চলে এলাম।
এসে বন্ধুকে বললাম--নিউটনের 3য় সুত্র মতে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।
কুমিল্লা থেকে বের হওয়ার পরপর আমার তলপেটে নিন্মচাপ শুরু হলো। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। আরে বঙ্গোপসাগরের মতো এতো বিশাল জায়গা থাকতে নিন্মচাপ আমার পেটে ক্যান? আর জায়গা খুজে পায়না। রাত 1টায় ঢাকায় এসে বাসায় ঢুকেই বাথরুম।
লাইট জালানোর সুযোগ পাইনি। অন্ধকারে বসেই......। ততক্ষ ডেটলাইন চেঞ্জ-
10 মিনিট পর
আহ কী পরম শান্তি। ভুলে গেলাম বন্ধুর শ্বশুরের অবহেলা। এবার একটা ঘুম দেবো।
একটু পর আবারতো মোল্লারা জ্বালাতন শুরু করবে।
[গাঢ়] ডেটলাইন 5 অক্টোবর[/গাঢ়]
রাত 1.30 মিনিট
সিগারেটে কয়েকটা টান দিয়ে বিছানায় গিয়ে মাথা এলিয়ে দিলাম। সারাদিনের ভ্রমনের ক্লান্তি। সঙ্গে সঙ্গেই দুচোখ জুড়ে ঘুম। কিন্তু কপাল আমার।
দিনের সন্ধ্যা বেলা অপমান আর রাত গভীরে দরজায় ধাক্কাধাক্কি। কারা যেন দরজায় ধাক্কাধাক্কি করছে। দরজা খুলে বললাম কী চাই। ওরা বললো আমরা র্যাবের লোক। আপনাকে আমাদের সঙ্গে ক্যাম্পে যেতে হবে।
কিন্তু ক্যান? ওখানে গেলে জানতে পারবেন। বললাম, ফাজলামী নাকি? আমি এখন যেতে পারবোনা। অনেক টায়ার্ড। পরে আসেন আপনারা। ওরা তা শুনবেনা জোর করে নিয়ে যাবে আমাকে।
তর্কের এক পর্যর্ায়ে আমার হাত ধরে টান দিতেই দিলাম একজনের গালে কষিয়ে এক থাপ্পড়।
হাতে ব্যথা পেতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। শালা, দেয়ালটা বড় শক্ত। এক গাধা বিরক্ত ঝরে পড়লো র্যাবের উপর। মনে মনে বললাম, শালা সাহস থাকলে বাস্তবে এসে ধরে নিয়ে যাবি, কিন্তু স্বপ্নে এসে বিরক্ত করবিনা।
শেষ বারের মতো সাবধান করে দিয়ে আবারো বালিশে মাথা ঠেকালাম। কিন্তু না ঘুম এবার আমার সঙ্গে বেঈমানী করা শুরু করেছে। ওদিকে আবার মোল্লারা ঈমান শেখানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। ওঠে পড়লাম। সেহরী খেয়ে আবার শুয়ে পড়লাম।
তবে এবার দুকানে হেডফোন লাগিয়ে দিলাম যাতে মোল্লা কিংবা র্যাবের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ আমার কানে না আসে। দশ মিনিটের মধ্যেই ঘুম।
[গাঢ়]ডেটলাইন 5 অক্টোবর[/গাঢ়]
ভোর 6 টা
আবারো সেই সেল ফোনের শব্দ। ঘুম চোখে হাত বাড়িয়ে লাইনটা কেটে দেয়ার চিন্তা করতেই নাম্বারের দিকে চোখ পড়লো। গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার।
আমার সোর্স। ওপাশ থেকে বললো, [গাঢ়]একটা খুন হয়েছে। [/গাঢ়] সঙ্গে সঙ্গে চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেলো। আবার ওপাশের কণ্ঠ-আমার এলাকায় জামাত শিবিরের কমর্ীরা যুবলীগের এক স্থানীয় নেতাকে মেরে ফেলেছে রাতের বেলায়। জানতে চাইলাম তুমি শিউর হলে কিভাবে যে জামাত শিবির কমর্ীরা মেরেছে।
বললো-কয়েকদিন আগে যুবলীগের এই নেতা দুজন শিবির কমর্ীকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। তাই সন্দেহ করছি।
পুলিশ কী জানে?
না। পুলিশ লাশ থানায় নিয়ে গেছে।
ঠিক আছে আমি দেখছি।
ভাবটা এমন দেখালাম যেন আমি এখনই এই খুনের সমাধান করে ফেলবো। শালার কে মরলো তাতে আমার কী? ঘুমটাই জলে ভাসলো আজকে। বসে থাকলাম কিছুক্ষন। সকাল 8টায় এলাকার সাবেক এমপির (আ'লীগ সাবেক হুইপ মুজিবুল হক) ফোন আসলো। দীপু, তুমি নিউজ কিভাবে করছো।
এটা হান্ড্রেড পারসেন্ট শিবিরের কাজ। আমার ছেলেটা নির্দোষ। ঠিক তার 10 মিনিট পর এক জামাত নেতার ফোন। তারও একই কথা, আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।
নিজেই এবার এলাকার রানিং এমপিকে (জামাত-ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের) ফোন দিলাম। বললাম-আপনিও বলবেন কেউ জানে না এ খুনের খবর। তিনি আমার উপর রাগলেন না। ঠাণ্ডা মাথায় বললেন, আপনি কিছু লেখার আগে সত্য জেনে লিখবেন। বললাম , নিজের এলাকা হলেও আমি এ ব্যাপারে কিছুই লিখবোনা।
কারন যে খুন হয়েছে সে আমার পরিচিত একজন। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সোর্স বলছে, খুন হওয়া লোকটির বন্ধুরাই নাকি তাকে শিবিরের কমর্ীদের হাতে তুলে দিয়েছে। এবং অনেকে তা দেখেছে।
এলাকার প্রতিনিধিকে ফোনে জানালাম, আমি সব জানি, আপনি শুধু লিখে পাঠিয়ে দেন, আমি এডিট করে ছাপিয়ে দেবো। এ ব্যাপারে আমি কিছুই লিখতে পারবোনা।
তবে আমিও চাই দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি হোক। এ নিয়ে এলাকায় এখনো চরম উত্তেজনা চলছে। হোক, উত্তেজনা না হলে রাজনীতি হবে কিভাবে!!!
[link|http://amardesh.u46.futurecrafts.com/sub_section.php?sub_section_id=1&issueID=244§ion_id=1|
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।