মরুভূমিতে কাশফুল একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকে। সেখানে কারো কাছে নিজের সুখ-দুঃখের কোনটাই শেয়ার করতে পারেনা। এই একাকী থাকা বলতে সবার মাঝখানে থেকেও একা থাকা। আর আশপাশে যারা আছে তাদের তারুন্য অনেক আগেই মরে গেছে। এমতাবস্থায় সে খুঁজতে থাকে নতুন ঠিকানা যেখানে গেলে কিছুটা হলেও সুখ-দুঃখগুলো ভাগাভাগি করতে পারবে।
হঠাৎ একদিন কাশফুল খুব দূর থেকে একটা বাড়ি দেখতে পায়। চারিদিকে অন্ধকারের মাঝে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত বাড়িটা দেখে আনন্দে ভরে ওঠে তার মন। দৌড়ে ছুটে যায় বাড়িটার কাছে। মনে মনে ভাবে এরকম একটা ঠিকানাই তো সে খুঁজছিল যেখানে থাকবে নিজ মাতৃভূমির নানান রংয়ের মানুষ আর নানান রংয়ের কথা।
চারিদিকে হৈ চৈ আর কোলাহল মুখরিত বাড়িটা দেখেই মনের মাঝে তাথৈ তাথৈ ঢেউ শুরু করে দেয় তার।
বাড়ির প্রধান ফটক বলতে কিছুই নেই কারণ বাড়িটা সবার জন্য উন্মুক্ত। কাশফুল আস্তে আস্তে ঢোকে বাড়ির ভেতরে। তার মনে প্রশ্ন জাগে সবাই কি গ্রহন করবে তাকে?
প্রথমেই দেখা হল বাড়ির মালিক পক্ষের সাথে। কাশফুলকে স্বাগত জানিয়ে বাড়ির মালিক এ বাড়িতে থাকার নিয়মাবলী জানিয়ে দিল এবং তার হাতে একটি চাবি ধরিয়ে দিল নিজের ঘরটি সুরক্ষিত রাখার জন্য। ঠিক একইভাবে বাড়িতে কোন নতুন সদস্য এলেই মালিক পক্ষ একই কাজটি করে থাকে।
তবে এ বাড়ির যে কোন সদস্যই অন্য সদস্যদের ঘরে যখন তখন ঢু মারতে পারে। কিন্তু কারো ঘর থেকে মূল্যবান জিনিস চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনা ( তবুও মাঝে মাঝে আমাদের চোর ভাই ট্রাই মারে ) । এখানে একটা জিনিস চুরি করা যায় তা হলো সবার হৃদয় নিংরানো নিঃশ্বার্থ ভালোবাসা। অর্জন করা যায় নানান অভিজ্ঞতা। কারণ এ বাড়ির লোকগুলো সবাইকে খুব অল্প সময়ে একান্ত আপন করে নেয়।
বিলিয়ে দেয় নিজেদের মূল্যবান সময়টুকু বাড়ির অন্য সদস্যদের মাঝে একটু আনন্দ দেবার জন্যে।
বাড়ির মালিকদের সাথে সাক্ষাতের পর আরেকটু ভেতরে ঢুকতেই কাশফুল দেখতে পায় সেই হৈ চৈ করা সব লোকগুলো নিজ নিজ ঘর থেকে দৌড়ে ছুটে আসছে বৈঠকখানার দিকে তাকে গ্রহন করার জন্য। কাশফুল তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় । সবাই তাকে এভাবে গ্রহন করবে তা সে কখনই ভাবেনি। কাশফুলকে পেয়ে আবার হৈ চৈ এ মেতে ওঠে সবাই।
সেই হীরক লস্কর থেকে শুরু করে আজকের এই আমি সবার সাথেই সে পরিচিত হয়ে যায় খুব অল্প সময়ে।
সবাই যার যার অভিজ্ঞতা, মনের ভাবনা এবং সুখ-দুঃখগুলোকে এ বাড়িতে এসে খানিকটা শেয়ার করে বাড়ির অন্য সদস্যদের সাথে। আর যখন কেউ তার ভাবনাগুলোকে শেয়ার করতে চায় তখন তার ভাবনার আংশিক শিরোনাম বৈঠকখানায় গিয়ে বলে আসে। শিরোনামটা যখন সবার নজর কাড়ে তখন দৌড়ে ছুটে যায় তার ঘরে। সমালোচনা, উপদেশ, পরামর্শ, তর্ক-বিতর্ক ও আড্ডায় মেতে উঠে সবাই।
একদিন হঠাৎ এ বাড়িতে অমি পিয়ালের কোলে চড়ে আগমন ঘটে প্রাপ্তি নামের ফুটফুটে সুন্দর শিশুটির। পিয়াল, সাদিক ভাই ও প্রাপ্তির পু'র কাছে প্রাপ্তির সমস্যার কথা শুনে বাড়ির অধিকাংশ সদস্য সেদিন একত্রিত হয় সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে। এ নিয়ে অনেক বৈঠকও হয় বাড়ির সদস্যদের সাথে। তারপর শেষ পর্যন্ত সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করে এই নিষ্পাপ শিশুটিকে দূরারোগ্য ব্যধি থেকে সারিয়ে তুলতে। খুশির খবর হলো আমাদের সাজুনিবুড়ি প্রাপ্তিমনি আস্তে আস্তে সেরে উঠছে।
কাশফুল ঘুড়ে বেড়ায় এক ঘর থেকে আর এক ঘরে। কেউ এ বাড়িতে আড্ডায় ঝড়ো হাওয়া বইয়ে দেয়, আবার কেউ বলে ছড়িতা, কেউ বলে কবিতা, আবার কারো ঘড়ে ঢুকলে দেখা যায় শুধু বিড়ালের ছবি, আবার কেউ কেউ রান্না শিখায়, কেউ ভালো পথের সন্ধান বলে দেয়, আবার কেউ বলে বাস্তব জীবনের গল্প । এসব কিছুই কাশফুল উপভোগ করে। এ বাড়িতে কাশফুলের ভাই-বোনের সংখ্যা এখন অনেক হয়ে গেছে। তাদের কাছে কাশফুল শেয়ার করে তার সকল সুখ-দুঃখ এবং তার মন অনেকটা ভালো হয়ে যায় এ বাড়িতে এলে।
আজ বাড়িটা কেমন জানি চুপ হয়ে গেছে। সেই আগের মত এখন আর বাড়ির সদস্যরা উল্লাসে ফেটে পড়েনা। কোথায় গেল তারা ? কাশফুল তাদের ঘরে উকি মারে কিন্তু তাদেরকে দেখতে পায়না। তবুও কাশফুল আশাহত হয়না। সবাই হয়ত আবার উপস্থিত হবে এই বাড়িতে আনন্দে মেতে উঠবে সারা বাড়ি।
এই আশায় তাদের পথ পানে চেয়ে থাকে কাশফুল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।