ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
বিরানপুর ছোট্ট একটি গ্রামের নাম- যা বাংলাদেশের শাশ্বত গ্রামের প্রতীক। প্রতিদিনের অভাব, অনাহার এবং দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করেও বিরানপুর গ্রামের শব্দ-সৈনিকরা লিখে যাচ্ছেন ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা গান। আমার দৃষ্টিতে এইসব শব্দ-সৈনিকরাই বিরানপুরের সহযাত্রী। তাঁরা বেঁচে থাকবেন দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রাণে। কিন্তু অনেকের কাছেই হয়তো থাকবে অজানা অচেনাই তাদের জীবন।
আমার শ্রদ্ধা প্রতিনিয়ত নত হয় সেইসব কবি-সাহিত্যকদের প্রতি। এই পর্বে আমি কবি, সহযাত্রী যুগল দাশের কথা বলবো। ।
উচ্চ শিক্ষার্থে যখন ময়মনসিংহ যাই তখনই পরিচয় ঘটে কবি যুগল দাসের সাথে। আগেও বলেছিলাম- ময়মনসিংহে থাকাকালীনই আমার লেখার পূর্ণতা পায়।
আর এ পূর্ণতার পিছনে ছিলেন আমার সহযাত্রী এক ঝাঁক তরুণ কবি বন্ধু এবং কিছু সিনিয়র কবির বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনাই ছিলো প্রধান। যুগল দাশ ছিলেন সিনিয়র কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি। যুগল দাশ-এর পরিচয় আমার উচ্চশিক্ষার্থেছাত্রাবাসে থাকাকালীন। ডাক বিভাগের পিয়ন ছিলেন তিনি। আমাদের রুমে রুমে চিঠি বিলি করতেন।
চাকরীর সামান্য বেতন, সংসারের অভাব কোনোদিনই তাঁর কাব্য প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এর পরিচয় পেতাম যখন সাহিত্য আসরে তাঁর ক্ষুরধার লেখা কবিতা শুনতাম। অসুস্থ কবিকে একবার দেখতে গিয়েছিরাম তাঁর বাসায়। তাঁর সাংসারিক অবস্থার দৈন্যতা আমাকে কষ্ট দিয়েছিলো। অবশ্য সহযাত্রী কবি বন্ধুদের ভালোবাসায় সেবার সেরে উঠেছিলেন তিনি।
কিছুদিন আগে খবর নিয়ে জানলাম- বয়স হয়েছে, বেঁচে আছেন এবং লিখছেনও তিনি।
কবি যুগল দাশ -এর জন্ম 1364 সালের 22 অগ্রহায়ন, ময়মনসিংহে। সত্তরের মাঝামাঝি থেকেই তিনি লিখছেন। লিটন ম্যাগাজিন, ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায়ও তাঁর লেখা ছাপা হয়; কিন্তু জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ছাপা লেখার সংখ্যা নিতান্তই কম। যুগল দাশ বৈরী সময়ের রুক্ষ প্রতিবেশে দীর্ণ-বিদীর্ণ।
সে পরিচয় শিল্পায়িত তাঁর কবিতার স্বগত উচ্চারণে। এই সময়ের ক্ষয়িত যৌবনকে যুগের কর্কশ চিত্রে রূপ দিয়েছেন তিনি। যুগল দাশ কখনো উচ্চকিত হননি, তাঁর আর্তি কখনো তাল কাটে না, কিন্তু অনুভুতিকে নাড়া দেয় কোমল আঙুলে। কবি, গল্পকার আতা সরকারের ভাষায় তাঁর কবিতা ব্যক্তিগত অনুভূতির বৃত্ত থেকে সমষ্টির পরিমণ্ডলে সোচ্চার হয়ে ওঠে, প্রতিবাদ ভাষা পায় তাঁর পংক্তিমালায়। সমকালীন জীবনযাত্রা নিয়ে উচ্চকিত তাঁর কণ্ঠস্বর থেকে বেরোয়- আমাকে ঝুলিয়ে দাও ফাঁসীর রজ্জুতে/ আমি দুঃশাসনের করাল ফণা;/ আমার বিরুদ্ধে গড়ে তোল সশস্ত্র ব্যারিকেড/ ছুড়ে দাও তুমুল ঘৃণার থুথু/ উচ্চারণ করো নিরস্ত্র ক্যাম্পাসে 'দুঃশাসনের রক্ত চাই'।
1993 সালের জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ ছাড়ার পর আর তাঁর সাথে যোগাযোগ নেই। পেশাগত কাজে ময়মনসিংহের দু'একটা উপজেলায় ভ্রমণ করলেও তাঁর সাথে দেখা নেই এক যুগেরও বেশি সময়। সমপ্রতি কবি-সাহিত্যিক মুজাফফর আলী তালুকদার স্যারের কাছে শুনলাম দু'-তিনটে বই বেরিয়েছে তাঁর। খুব প্রচারবিমুখ কবি যুগল দাশ। আমার শ্রদ্ধা কবি যুগল দাশ -এর প্রতি।
আমার সংগ্রহ থেকে তাঁর একটি কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
[গাঢ়]নদী ছিঁড়ে যায়- যুগল দাশ[/গাঢ়]
নদী ছিঁড়ে যায় স্রোতের ভিতর
নদীর ভেতর নেই কোন জল গান।
চোখে চোখ রেখে বাড়িয়েছি চোখের অসুখ
কর্পূরের মত উবে যায় পারিজাত প্রেম।
ইচ্ছে হোক, ছিন্ন শৈশবের বাঁকা পথ
জটলা করা কুমারী কথার শান বাধা ঘাট;
আমি শুধু শুনে যাবো কোলাহল, উদাস দুপুরে
ছিঁড়ে যাক দম দেয়া গ্রামোফোনে হেমন্তের গান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।