আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
সরকারের চার বছরের শাসন আমলে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সাতটি খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এগুলো হচ্ছে সরকারী বিনেয়োগ, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রেমিটেন্স আয়, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। তবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের চলমান প্রবৃদ্ধির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকারের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে খ্যাত এ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের চার বছরে অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত রয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামঞ্জস্যপূর্ণ মুদ্রানীতি গ্রহণ করলে মূল্যস্ফীতির এ ক্রমবর্ধমান হার নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলোতে সরকারের বিনিয়োগ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। যখন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে (২০০৮-০৯) অর্থবছরে সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা।
সেখানে বর্তমান অর্থবছরে (২০১২-১৩) বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকায়। এটি টাকার অঙ্কে সর্বকালের সর্বোচ্চ এডিপি। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে গত ৫ বছরের উন্নয়ন বাজেটের প্রবৃদ্ধির হার ১৩৯ শতাংশ বা গড়ে প্রতিবছর বেড়েছে ২৮ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ১ ভাগ। সেটি চলতি অর্থবছরে এসে হয়েছে জিডিপির ৫ দশমিক ২৮ ভাগ।
শুধু বরাদ্দের ক্ষেত্রেই নয় এডিপি বাস্তবায়নও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এ ক্ষেত্রে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৮৬ শতাংশ, পরবর্তী বছরগুলোতে যা যথাক্রমে হয়েছে ৯১, ৯২ এবং ৯২ শতাংশ।
রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল রফতানি আয় এবং সর্বশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় হয়েছিল। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।
গত চার বছরে রফতানি খাতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারের দায়িত্ব নেয়া অর্থবছরে মোট রফতানি আয় ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ভাগ। যা ২০১১-১২ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৫০ ভাগে।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার দাত্বিগ্রহণের পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা রাজনৈতিকভাবে অস্থির থাকা সত্ত্বেও সরকারের সমন্বিত প্রয়াসের ফলে চার বছরে ২২ লাখ ৮ হাজার শ্রমিক বিদেশ গেছে।
শুধু ২০১১-১২ অর্থবছরেই ৬ লাখ ৯১ হাজার ৪০২ জনের বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতি এক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ২ লাখ ৫০ হাজার দেশীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় গত চার অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬২ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
রেমিটেন্স আয়ের অংশে বলা হয়েছে, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের অর্থবছরে (২০০৮-০৯) রেমিটেন্স আয় হয়েছিল ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা পরের অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনের মাইলফলকে পৌঁছে যায়।
এ অর্থবছরে রেমিটেন্স আয় হয় ১০ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ধারাবাহিকতায় ২০১০-১১ অর্থবছরে আয় হয় ১১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং তার পরের অর্থবছরে আয় হয় ১২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত চার বছরে রেমিটেন্স আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। রেমিটেন্স আয়ের এ প্রবৃদ্ধি হিসাব ভারসাম্য ধনাত্মক রাখতে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ কমাতে এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক অবদান রাখছে।
দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর শতকরা পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতিবছর দারিদ্র্য কমছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হারে। এ হিসেবে ২০১২ সালে দারিদ্র্যের প্রাক্কলিত হার হবে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই সাথে আয় বৈষম্য না বেড়ে কিছুটা নিম্নমুখী রয়েছে।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, গত চার বছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ খাতে প্রতিবছর গড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল ৩১ দশমিক ৩২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে এসে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৮০ মিলিয়ন মেট্রিক টনে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
যথাসময়ে কৃষি উপকরণ সহায়তা, উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় অ-জৈব সারের পাশাপাশি জৈব সারের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি, বর্ধিত কৃষি ঋণ বিতরণ, নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন এবং কৃষি জমির আওতা বৃদ্ধির কারণে কৃষি খাতে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের আটটি গোলের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগিয়েছে বাংলাদেশ। যেমন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা আনয়ন, চরম দারিদ্র ও ক্ষুধা নির্মূলকরণ, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমানো, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার কমিয়ে আনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন হয়েছে। তবে অন্য লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে গেলে আরও জোরালো প্রচেষ্টা হাতে নিতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।