ভালোবাসার ঊর্বশী বুকে লেখা আছে এক নাম- সে আমার দেশ, আলগ্ন সুন্দর ভূমি- বিমূর্ত অঙ্গনে প্রতিদিন প্রতিরাত জেগে ওঠে তার উদ্ভাসিত মুখ
এই সব লোহা লক্করের মুখ/ আমি দেখতে চাই না/ ওদের মুখের দিকে তাকালে আমার/ মনে হয় অ-আ-ক-খ শেখার দরকার ছিলো নাতো/ এই সব মুখ দেখলে আমার গলায়/ গন্ডারের আওয়াজ ওঠে-/ কেরেল্লা বালুতে দা' ঘষার শব্দ উঠে/ ওদের মুখের দিকে তাকালে আমার/ জিভ উপড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে/ এই সব লোহা লক্করের মুখ/ আমি দেখতে চাই না। ..এ শব্দগুলো এবারকার বিরানপুরের সহযাত্রী শব্দ-সৈনিক কবি শামসুল ফয়েজ-এর।
বিরানপুর ছোট্ট একটি গ্রামের নাম- যা বাংলাদেশের শাশ্বত গ্রামের প্রতীক। প্রতিদিনের অভাব, অনাহার এবং দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করেও বিরানপুর গ্রামের শব্দ-সৈনিকরা লিখে যাচ্ছেন ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা গান। আমার দৃষ্টিতে এইসব শব্দ-সৈনিকরাই বিরানপুরের সহযাত্রী।
তাঁরা বেঁচে থাকবেন দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রাণে। কিন্তু অনেকের কাছেই হয়তো থাকবে অজানা অচেনাই তাদের জীবন। আমার শ্রদ্ধা প্রতিনিয়ত নত হয় সেইসব কবি-সাহিত্যকদের প্রতি। এই পর্বে আমি আমার শ্রদ্ধেয় কবি, বন্ধু এবং দীক্ষাগুরু শামসুল ফয়েজের কথা বলবো। ।
উচ্চ শিক্ষার্থে যখন ময়মনসিংহ যাই তখনই পরিচয় ঘটে কবি শামসুল ফয়েজের সাথে। আমার এক বন্ধুর ভাগি্নকে বিয়ে করার সূত্রে তিনি আমাকে মামু ডাকতেন এবং আমিও মামু ডাকতাম। তবে সবচেয়ে বড়ো পরিচিয় হলো- তিনি ছিলেন আমার কবি-বন্ধু এবং দীক্ষা-গুরু। দীক্ষা-গুরু কথাটা বলার একটাই কারণ- ময়মনসিংহে থাকাকালীনই আমার লেখার পূর্ণতা পায়। এ পূর্ণতার পিছনে ছিলেন আমার সহযাত্রী এক ঝাঁক তরুণ কবি বন্ধু এবং কিছু সিনিয়র কবির বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনাই ছিলো প্রধান।
উনি ছিলেন সিনিয়র কবিদের মধ্যে অন্যতম প্রধান কবি।
কবি শামসুল ফয়েজ-এর জন্ম 1953 সালের 11ই ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে। সত্তরের শুরু থেকেই তিনি লিখছেন। মূলতঃ লিটন ম্যাগাজিনেই তাঁর সব লেখা প্রকাশিত। মাঝে মাঝে জাতীয় পত্র-পত্রিকায়ও তাঁর লেখা ছাপা হয়; কিন্তু সে সংখ্যা নিতান্তই কম।
কাব্যের আঙ্গিক ও শৈল্পিক সুষমা সম্পর্কে তাঁর রয়েছে স্বতঃস্ফুর্ততা। সমকালীন সময়ের নির্মম আঘাতে রক্তাক্ত এই কবি। এ লেখার শুরুতে তাঁর কবিতার উদ্ধৃতি এর প্রমাণই বহন করে। তাঁর কবিতায় ঘটেছে মননশীলতা ও হৃদয়ার্তির এক বিরল সমন্বয়। তাঁর কোনো কোনো কবিতার নৈব্যক্তিক প্রকাশভঙ্গিমা ও চিরন্তন আবেদন আশ্চর্য নিপূণতায় ভরা।
অনেক সমালোচক তাঁর বেশিরভাগ কবিতাকে নেতিবাচক বললেও আমি এ নেতির আড়ালেই ইতিবাচক আশার ঈঙ্গিত খুঁজে পাই। যুবকদের উদ্দেশ্যে তাঁরই কণ্ঠে উচ্চারিত হতে দেখি- তোমার জমিনে আত্মার অঙ্কুরোদ্গম হোক।
হঁ্যা, শুরুতেই বলছিলাম- উনি ছিলেন আমার সিনিয়র কবি, বন্ধু এবং দীক্ষা-গুরু। নিয়মিত যাতায়াত করতাম ওনার বাসায় এবং শ্বশুরালয়ে। তাছাড়া নিয়মিত কবিতা পাঠে, আলোচনায় বা আড্ডা তো দেখা হতোই।
মাঝে মাঝে বুঝে নিতাম কবিতা বা গান লেখার আঙ্গিক। লিখে আগে তাঁকে শুনাতাম কেমন হলো- তারপর পড়তাম কোনো আসরে। এভাবেই আমার প্রিয় কবি হয়ে যান তিনি। আর সেটা শধু ব্যক্তিগত যোগাযোগ নয়। তাঁর লেখনীও ছিলো ুরধার।
1993 সালের জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ ছাড়ার পর আর তাঁর সাথে যোগাযোগ নেই। পেশাগত কাজে ময়মনসিংহের দু'একটা উপজেলায় ভ্রমণ করলেও তাঁর সাথে দেখা নেই এক যুগেরও বেশি সময়। তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে ফোন করে শুনলাম দু'-তিনটে বই বেরিয়েছে তাঁর। খুব অভিমানী এবং প্রচারবিমুখ কবি শামসুল ফয়েজ। আমার শ্রদ্ধা কবি শামসুল ফয়েজ-এর প্রতি।
আমার সংগ্রহ থেকে তাঁর একটি কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
[গাঢ়]সময়ের ধ্রুপদ[/গাঢ়]
একে একে সবাইতো শত্রু হবে একদিন,
-এমন কি তুমিও আমার
-এমন কি আমিই আমার।
একদিন তুমি হবে ফ্যাকাশে নিমের মতো তিতে,
একদিন তুমি হবে দুধ সাগর চালের ভিতরে
ধূসর কাঁকড়ের মতো নিরস ও রু,
একদিন আমি হবো আমারই পাষাণভার,
-আমি হবো আমারই কাল-কেউটে
শরীর দাঁড়ালে বেঁকে।
একদিন থু থু দেবে কামিনী-মাধবী,
শরশয্যা হবে দুর্বা-র কোমল
মখমলের গালিচা,
হাওয়ায় উঁচিয়ে শুড় দৌড়ে আসবে
অযূত হাতীর যুথ;
চোষট্টি কলায় লীলা করলো যে আকাশ
সেও কসাইয়ের চেয়ে নির্দ্বিধায় ছুরি বসাবে গলায়।
একে একে সবাইতো শত্রু হবে-
তুব এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড়ো সত্য
তোমার আমার রক্তের দ্বৈত সঙ্গীত-
সর্বগ্রাসী সময়ের মাঝে
এই এক অনন্ত ধ্রুপদ।
15.08.2006
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।