ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ব্লগ। ঘর থেকে বের হয়ে গলির মোড়ে আসতেই ফজলু মিয়া চড় খেয়ে মাটিতে বসে পড়লো। ধমক ধামকতো প্রায় সময় হয়-তা সয়ে গেছে। তবে চড় ঘুষি খেলে ঠিকমতো মেনে নিতে পারেনা।
কোনোমতে মাথা তুলে দাঁড়ালো, তারপর চারপাশ থাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী, নিজের স্ত্রী-সন্তান দেখতে পায়নি তার চড় খাওয়ার দৃশ্য। অনেক সময় বয়স্করা ধমক দিলে মেনে নেয়া যায়। তবে সেদিন -ফজলু মিয়ার রিকসা ছিলো প্রচন্ড জ্যামে আটকা, তার সামনে মোটর বাইকে বসা অল্প বয়সী একটা ছেলে আর মেয়ে। হঠাৎ ফজলু মিয়ার রিকসার পেছনে ধাক্কা দিলো এক প্রাইভেট কার। বেচারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাইকের পিছনে লাগিয়ে দিলো।
অল্পই হয়তোবা লেগেছে, কিন্তু হলে কি হবে নিজের সন্তানের সমান বয়সী ছেলেটা এসে ধুম ধাম ঘুষি দিয়ে বসলো। বাপ ডেকেও নিস্তার পায়নি।
ফজলু মিয়া বুঝেছে শুধু বস্তিতে গালিগালাজ হয়না, এ শহরে কত ভদ্রমানুষ কত অবলীলায় যে মাংগীর পোলা, চুদির পোলা ইত্যাদি অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে।
গালিগালাজ এগুলো আরে গায়ে লাগেনা। পেটে লাত্তি না পড়লেই হয়।
সেদিন সারাদিন রিকসা চালিয়ে প্রায় মধ্যরাতে বাড়ি ফিরবো। মালিককে দিতে হবে ভাড়ার ১৩০ টাকা। কয়েকদিন থেকে ছেলেটার ভীষণ জ্বর-মোড়ের
ঔষধের দোকান থেকে কিছু ঔষধ কিনবো। এই জ্বর নিয়েই পোলাটা পরীক্ষা দিচ্ছে। হঠাৎ দুইটা ছেলে জোর করে রিকসায় ওঠে বসলো।
শরীর অবস হয়ে আসছে, পা দিয়ে প্যাডেল ঠিকমতো চাপতে পারছি না। বললাম- বাপগো ,তোমাদের পায়ে পড়ি। আমার ছেলে অসুসস্থ ঘরে যেতে দেও। কিন্তু কোনো কথাই শুনলো না। তারপর গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া দেয়ার পরিবর্তে যা সারাদিনের আয় ছিলো তা নিয়েই কেটে পড়লো।
সেদিনই বুঝলাম এ দুনিয়ায় এভাবে আর বেশীদিন ঠিকা যাবেনা। ভরসা বিষের বোতল।
আজকেও সকালেই গালে জুটেছে চড়, না জানি সারাদিন পুড়া কপালে কি আছে। সন্ধ্যার দিকে ফজলু মিয়া ব্যস্ত সড়কের মোড়ে টিপের জন্য বসে আছে। একটা মেয়ে এসে রিকসায় ওঠলো।
বললো- পুরান সড়কের বেপারি কলোনিতে যেতে। অন্ধকার ঘুপরি গলি ঠিকমতো দেখা ও যায়না, তারপর নাই কারেন্ট, যেই না বামে মোড় নিয়ে ঘুরবো অমনি অন্যদিক থেকে আসা প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা। মেয়েটা ছিটকে পড়েছে। তারপর, গাড়ীর ড্রাইভার নেমে এসে এমন মাইর সাথে জগন্য গালাগালি। আমি বলি, বাপগো-আগে মেয়েটা ভালো আছে কিনা দেখো।
কিন্তু কে শুনে কার কথা।
আজ ফজলু মিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে। বাবুর দোকানে যেয়ে কুত্তা মারার ঔষধ কিনে। পাগলা কুত্তাটা বড় জ্বালাচ্ছে। পেটের ভিতর বসে সারাক্ষণ শুধু
ঘেও ঘেও করে।
একে একবারেই মেরে ফেলতে হবে। নিজের কুত্তাটাতো মারবে সাথে সাথে বউ, বাচ্ছা সবগুলাকেই শেষ করে ফেলবে। ফজলু মিয়া কিছু ভাঁপা পিটে কিনে। তারপর কিনে খাজুরের রস। কয়েকদিন থেকে বউ,পোলা,মাইয়াটা ভাঁপা পিটা খাইতে চাইতেছে।
এরপর খুব সুন্দর করে খাজুরের রসের সাথে পাগলা কুত্তা মারার ঔষধ বিষ মিশায়। তারপর বাড়ীর দিকে রওয়ানা দেয় ফজলু মিয়া।
বাড়ির পাশে এসে দেখে ফজলু মিয়া বেশ কিছু মানুষ। সবাই যেন আনন্দ করছে। ফজলু মিয়ার ছেলে দৌড়ে আসে।
বাপকে জড়িয়ে ধরে বলে -বাপগো আমি পরীক্ষায় পাশ করছি। এ প্লাস পাইছিগো বাপ, এ প্লাস। বস্তির এই স্কুলে আমিই শুধু এ প্লাস পাইছিগো বাপ। ফজলু মিয়া খাজুরের রসের পেকেটে লাত্থি মারে। আর বউ, পোলা আর আদরের মাইয়াটারে নিয়ে পংখীরাজের মতো রিকসায় চড়িয়ে বের হয়ে পড়ে।
আর বলে আল্লাহগো- দুনিয়া এতো সুন্দর কেন গো আল্লাহ, দুনিয়া এতো সুন্দর কেনো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।