এটা এমন একটা বই এই বই সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে এটা পড়ার আগের পাঠক আর পরের পাঠক যদি একই ব্যক্তি থাকে তবে সে হয়ত দানব নতুবা সে মৃত পাঠক। সত্যি আমি মানি পৃথিবীর কয়েকটি মাত্র জীবিত বইয়ের মধ্যে এটি অন্যতম। তলস্তয়ের প্রায় লেখা পড়া আছে। ওয়ার এন্ড পিস, আনা কারেনিনা, রেজারেকশান, হাজি মুরাদ, সহ প্রায় সব ছোট বড় গল্প আর তার বিখ্যাত প্রবন্ধের বই হোয়াট ইজ আর্ট। তার লেখা পড়লে ছোট বেলায় যখন আমাদের বোধের ওপর এত অত্যাচার হয়নি।
তখন পবিত্র ধর্মগ্রন্ত পাঠ কিংবা ইবাদত করে যে একটা নির্মল আনন্দ পেতাম সে ধরনের অনুভুতি হয়। যেন নিজের সমস্ত চিন্তা ভাবনাগুলো এক জায়গায় এসে গ্রন্থিত হয়। তলস্তয়ের লেখাগুলো ব্যক্তিগত ভাবে আমার জন্য ধর্মগ্রন্থের কাজ করে। আঙ্গিক গত ভাবে তার তুলনা হতে পারে কোনো ভাস্করের মত। তার লেখা গুলো ভাস্বর্যের মত।
তাকে আমার মাঝে মাঝে মিকেলেঞ্জেলোর মত মনে হয়। তার ওয়ার এন্ড পিস বাদ দিলে প্রায় উপন্যাসে ঘঠনাবলী সাধারন ভাবে বর্ণিত। কিন্তু প্রত্যেকটা জিনিস ডিটেল দেখার যে চোখ সেটা অনন্য সাধারণ। এ উপন্যাসটাও তেমনি তৎকালীন জমিদারদের জীবনী। নেখলয়ুদভ একজন ধনী ভোগী জমিদার।
প্রাক্তন সেনা অফিসার। পঞ্চায়েতের জুরি। মাসলোভা নামের এক বেশ্যা যে কিনা বিষ প্রয়োগে তার খদ্দেরকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। তার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে মত দিতে গিয়ে নে খলয়ুদভ আবিস্কার করে। এটা আসলে সেই মেয়ে অনেক আগে এক আত্মীয়ের বাসায় সে নিজেই ফুসলিয়ে এই মেয়েটাকে ভোগ করেছিল।
সে মেয়েটাকে সামান্য রুবল দিয়ে ফ্রন্টে চলে গিয়েছিলো। এর পর তার অজান্তে মেয়েটার জীবনে নেমে আসে এক দুর্বিসহ নি য়তি। তারপর তার সন্তান ধারন এবং বেশ্যাবৃত্তি গ্রহন। এবং এই পর্যন্ত। তারপর তার শাস্তি সাইবেরিয়ায় নির্বাসন।
আর নেখলয়ুদভের পুণরুজ্জীবন। সে তার প্রায়শ্চিত্য করতে তার পিছন পিছন চলে সাইবেরিয়ায়। আসলে মানুষের রুপান্তরটা দারুন একটা ব্যাপার। যেন এত দিন পর নেখলয়ুদভ নিজেকে খুজে পেয়েছে। তার কাছে সমস্ত আভিজাত্য খসে পড়ে।
তার জীবনটা বদলে যায়। যদিও মাসলোভা তার প্রতি তেমন একটা আকর্ষন বোধ করেনা। আসলো মাসলোভা তার প্রতি কোন অনুভুতিই আর অন ুভব করেনা। এইতো, কিন্তুএই কাহিনীর হাত ধরে তৎকালীন রাশিয়া এবং তার সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে তলস্তয় যে জঙ্গনামা লিখেন। তার জন্য রাশিয়ান বুর্জোয়ারা জনম জনম ধরে তাকে দোষবে।
কারন বলা হয়ে থাকে বলশেভিকদের তার সমস্ত লেখা অনুপ্রেরণা জোগিয়েছে। হাসান মোরশেদ কে এ লেখাটা উৎসর্গ করছি কারন। আমার উদ্দেশ্য ছিল নতুন নতুন বইগুলো রিভিউ করা। এটা বহু বহু পঠিত একটা জনপ্রিয় বই। তবুও আপনারা ভিন্ন কোনো মন্তব্য দিয়ে কিংবা আমি যা লিখিনি তা লিখে এ লেখাটাকে সমৃদ্ধ করবেন আশা করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।