কাব্য-দিনের কথাঃ স্পর্শের আগুনে! অন্যদিগন্ত: www.fazleelahi.com
তখনো সবকিছুকে ভালোভাবে বুঝতে শিখিনি। মাত্র মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়েছি, হাফ-প্যান্টও মাঝে মাঝে ভিজিয়ে ফেলি; কাঁথার কথা না হয় বাদই দিলাম। তবে বেশ দৌড়া-দৌড়ি করতে পারি, রৌদ্র-ছায়ায়, শুকোতে দেয়া ধানের উপর দিয়ে, এঘরে ওঘরে আর নানীগুলোর রান্নার আয়োজনে। নানীদের প্রথম নাতি কি না, তাই সসস্ত ভাঙ্গ-চুর মাফ; যদিও খুব একটা ভাঙ্গতে পারিনি। বুড়ো নানী থেকে শুরু করে অবিবাহিত নানীরাও ছিলেন সে দলে।
সবাই কিন্তু নানাবাড়ীর নানী; মরহুম নানাজানের বিয়ে একবারই হয়েছিল।
নববিবাহিতা নানীদের মধ্যে তখন সবচেয়ে বেশী আদর করতেন যাকিয়া নানী। কথায় কথায়ই দৌড় লাগাতাম তার কাছে। জন্মের পর দয়াময় প্রতিপালক আল্লাহ্ আমার জন্য যে সুপেয় এবং সর্বপ্রয়োজন সমৃদ্ধ খাবার প্রস্তুত করে রেখেছিলেন মায়ের বুকে; তাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাই কি করে; শিশু মাত্রই ভুলতে পারে না সহজে। তাই সবাই যেন উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে ভুলাতে আর যত্তসব ঝাল-তেতো-টক খাওয়ানোতে।
আমিও কম যাই না; খাবো না তো খাবই না, মিষ্টি পেলে অবশ্য সহজেই ছাড়তে চাইতাম না ।
যাকিয়া নানী-স'বে মাত্র বিয়ে হয়েছে, তাই দুষ্টোমিগুলো ভুলতে পারেননি এখনো-অবশেষে দুষ্টবুদ্ধির আশ্রয় নিলেন; আমাকে ঠকাবেন। তাই প্রতিদিন দুপুরের শেষদিকে যখন তার ভাত রান্না শেষ হতো, তখনি আমাকে ডাক দিতেন- বাতেন সাহেহহহহহহব!!! (ছোটবেলায় বাতেন নামে এক বড় ভাইয়াকে খুব ভাল লাগতো, তাই সবার প্রতি কড়া অর্ডার দিলাম ঃ আমাকে 'বাতেন সাহেব' না বললে তোমাদের এই সব ঝাল-তিতা এক্কেবারেই খাবো না। ) যাকিয়া নানী একটা বাটিতে করে ঢেলে দিতেন ফ্রেশ ফেন; ভাতের ফেন। দেখতে দুধের মত সাদা না হলেও কাছাকাছি, তাই আমাকে বলতেন এই নাও দুধ, যার জন্য তুমি কান্না কর।
তারপর এত্ত হাসতেন, এত্ত হাসতেন যে, তার আনন্দ দেখে আমার মন ভরে যেত। তারপর আমার নানী এসে বকা দিতেন আর মুচকি হেসে আমাকে নিয়ে যেতেন ঘরে।
চোখের সামনে ভাতের পাতিল থেকে ঢেলে দেয়া ফেন দেখেও খেতে শুরু করতাম, খারাপ লাগতো না এক্কেবারে। সবকিছু বুঝতে পেরেও চাইতাম না নানীর আনন্দটুকু ধুলোয় মিশিয়ে দেই; তাই প্রতিদিনই খেতাম ফেন আর ঠক। কিন্তু সেই আড়াই কি তিন বছরেও যে আমি নানীর আনন্দটুকু অনুভব করলাম আর তা নষ্ট হতে না দিয়ে নিজেই ঠকেছি প্রতিদিন; ভাবতেই এখন স্রষ্টার প্রতি মনটা অবনত হয়ে আসে।
ছবির জন্য [link|http://www.rikkyo.ac.jp/~z5000002/tanzania/NYAKYUSA/foods/0508-rice-cooking-9513b.jpg|K
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।