আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নটর ডেম সমাচার



আমি পডছি নটর ডেম কলেজে। প্রথম দিন থেকে বুঝে গেছি বাব মা আমাকে কলেজে না দিয়ে জেলখানায় দিয়েছে। এরপর সিদ্বান্ত নিলাম আমি যারা আমার শত্রু আছে তাদেরকে ছলেবলে কৌশলে এখানে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে। . যা হোক যতটা কঠিন ভেবেছিলাম অবস্থা সেরকম না, শুধু কিছু হলেই আইডি নিয়ে টানাটানি করে। আরে যা করার আমারে করেন,আমার আআইডি কি করছে?এমনিতে আমি পড়া চোর,তার উপর নতুন যাদের সাথে পরিচয় হল তারা মহা চোর।

মনে আছে প্রথম পরিচয় হল এলেক্সর সাথে...লম্বা,...নাকে,মুখে (আর ও বিশেষ জায়গা দিয়ে) একসাথে কথা বলে,ওকে দেখে মনে হয় পৃথিবীতে চাপা বলার দায়িত্ব এবং অধিকার কেবল তার। এরপর আসল সানিল,তার বিশেষত্ব হল মাথা গরম (মাঝে মাঝে বাতাস জোরে বইলেও ওর মেজাজ গরম হয়ে যায়)...। এভাবে আমারা কয়েকজন হয়ে গেলাম। সারা জীবন শুনেছি ক্লাসে প্রথম বেঞ্চে বসা নিয়ে মারামারি হয়,আর আমরা পুরো কলেজ লাইফ মারামারি করলাম বেঞ্চের কোনায় বসা নিয়ে। যে আগে আসবে সে বেঞ্চের দখল করি।

যত নিয়ম আর কড়াকড়ি থাকনা কেন আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের কারনে আমরা আমাদের সকল প্রকার চুরির, সকল প্রকার পথ আবিস্কার করে ফেলসি। যত আইন তত ফাঁক। কয়েকদিন এলেক্স ক্লাশ পালাবে,ব্যগ নিয়ে কলেজ গেট পযন্ত চলে গেছে, কিন্তু দারোয়ান কিছুতেই ছাড়বেনা। টাকা দিতে চাইল,কিন্তু দারোয়ান ব্যাটা ঘুষ ও খায় না। তারপর সে পাশে দাঁড়ানো তানভিরকে জড়িয়ে ধরে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কান্না শুরু করল ”ওরে আমার দাদা গেলগারে, ও দাদা দাদারে...” তখন তানভির তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে “দাদা কারও চিরদিন বেঁচে থাকেনা,দাদারা মরে যায়রে”(বাংলা সিনেমার কোণ দৃশ্য মনে করুন) দারোয়ান এর চোখে ও একটু জল চলে আসল।

ভাল ছেলের মত বের হয়ে কলেজ থেকে একটু দূরে আরামবাগের মোড়ে সিগারেট ফুঁকছিল,আর ঠিক তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সেই দারোয়ান। তাকে দেখে সে রীতিমত থ,কারন জিজ্ঞেস করাতে এলেক্স সহজ উত্তর “দাদা মারা গেছিল আমার জন্মের আগে,হঠাৎ মনে পড়ল তাই কাইন্দা দিছি” এরপর আরেক দিনের কথা নিয়ম মত প্রথম ক্লাশ শেষ করে (চোর হলেও আমাদের নীতি হল,প্রথম ক্লাশটা মিস করি না) সবাই মিলে পালানোর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গেটে দারোয়ান মামা আটকে দিয়েজিজ্ঞেস করল” এখন বাজে সকাল৯.৩০,এই সময়তো তোমাদের ক্লাসে থাকার কথা কোথায় যাচ্ছ? সানিল বলল” আসলে আমরা গতকাল সবাই ক্লাশ পালিয়েছিলাম,তাই আজকে আমাদের অভিভাবক ঢেকেছেন,অভিভাবক না আসলে ফাদার আমাদের ক্লাশ করতে দিবেন না,তাই আমরা বাসায় যেয়ে বাবা-মা'র সাথে একবারে সব” বেকুব দারোয়ান মামা কীছুক্ষন ভাবল,তারপর বলল-যাও। আমরা অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে বের হলাম এবং বেইলি রোড গিয়ে আডডা দিলাম। ক্লাশ পালানোর দোহাই দিয়ে ক্লাশ পালানো।

আমাদের কলেজের ক্যন্টিনের মান হল অত্যন্ত খারাপ। তাই আমরা চলে যাই বাইরের হোটেলে পরোটা আর ডাল ভাজি খেতে। আমাদের চাপাবাজ এলেক্স একদিন খোজঁ দিল এজিপি কলনিতে একটা হোটেল রয়েছে, যেখানে খচূড়ি ৩০ টাকা,বিরিয়ানী্র দাম ৩৫ টাকা। শুনে বিশ্বাষ করলাম না। কিন্তু এলেক্স প্রমান দিল।

এই হোটেলে ছোট প্লেটে পরিবেশন করা বিরিয়ানী এবং খিচূড়ি এক কথায় কঠিন। খেলাম এবং তথ্যটা কলেজিকরন(বাজারজাত করন) করে দিসি। আর পায় কে?সবাই মিলে সে হোটেলে যাওয়া শুরু,আর লাল বাত্তি জ্বলতে লাগসে কলেজ ক্যন্টিনের। । যরতাম এবং খেতাম বাজি ধরে।

মইনুল একবার ৪ প্লেট খেয়েছে। খেয়ে আর বের হতে পারছিল না। না শরীর খারাপের কারনে নয়,বিল না দিতে পারার কারনে। সাকিব আমাদের উদ্দেশ্য প্রায় হাদিস দিত। সে হাদিস গুলো বাংলা অনুবাদ করলে যা দাড়াত তা এই রকম “বাসে যদি একদল ছাত্র উঠে তবে তার মধ্যে যে সবচেয়ে মোটা সে বাদে বাকি সবাই বাসের ভাড়া দিবে(সানিল ছিল মোটা)।

’’ “সবাই মিলে যদি এক সাথে খেতে বসে তবে যার জামায় সবচেয়ে পরিস্কার সে বিল দিবে(আমার জামা থাকে স্বাভাবিক ভাবেই ময়লা)। এই রকম হাজার মজায় কেটে যাছ্্ছে আমাদের। সব ঘটনা এক সাথে লিখা আসলেই সম্বভ নয়। সব নিয়মকে ভাঙ্গার পর ও আমরা কিন্তু রেজাল্ট খারাপ করিনা। হয়ত আহামরি কিছু করিনা।

তবে যেটাই করছি সব কলেজের জন্য। বিঃদ্রঃ এই লিখায় শিক্ষনীয় কিছু নাই। শিখতে চাইলে ধ্বংশ নিশ্চিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।