সময়টা আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। কিণ্ডারগার্টেনের বৃত্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তো পরীক্ষা শুরু হল। বাংলা পরীক্ষার দিন বাগধারা থেকে উত্তর করতে হত ৪ টি প্রশ্নের। দ্বিতীয় শ্রেণীতে বাগধারা,আমার মত অনেকের কাছেই কঠিন লাগত।
সবার কাছে আতেল নামে পরিচিত থাকলেও উচ্চমার্গীয় পর্যায়ে ছিলাম না। তো একটা প্রশ্ন ছিল গোল্লায় যাওয়া,কোন ধারনা না থাকায় উত্তর করলাম রসগোল্লা খেতে যাওয়া এই রকম একটা। বাসায় আসলাম মামুনিকে গদগদ করে সব উত্তর দেয়া শুরু করলাম। কিন্তু সেই গোল্লায় গিয়ে প্যাচ খেয়ে গেলাম। তৎক্ষণে পরীক্ষায় খাতায় আমি হয়তো গোল্লা পেয়েই গিয়েছিলাম আর মামুনির কাছে জানলাম গোল্লায় যাওয়া মানে উচ্ছনে যাওয়া।
যাই হোক একটা গল্প লিখি। দূর-দূরান্তের এক দেশ,হীরক রাজ্য। দেশটির রাজ্য সভায় একটা পদ ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নামে। এই নামটা শুনলে জনসাধারণ শুধু হাসত,আর হাসতেই থাকত। থামার কোন নামই ছিল না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বচনসুধা ছিল সবার জন্য তামাশার খোরাক। এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে আরেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসে কিন্তু যে লাউ সেই কদু। কথামালার আশ্বাসে তাদের নাই কোন যোগ্য উত্তারাধিকার। তারাই শুরু তারাই শেষ। একেবারে যেন খতমে নবুয়ত।
তো নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,উনি আবার আগের জনের চেয়ে একটু বেশি সরেস। বচনই তার হাতিয়ার, বচনই ভরসা, বচনই নিয়েই তার কারবার। যার বাণীগুচ্ছ একসঙ্গে রাখলে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের থেকেও খাসা লাগে।
হীরক রাজ্যের পাশ্ববর্তী দেশ কণক রাজ্য। কণক রাজ্যের সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনী শুধু পাখির মত করে হীরক রাজ্যের মানুষ মারত।
এর কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি হাসির বোম ফাটায় দেন,তিনি বলেন- আত্নরক্ষার তাগিদে কণক রাজ্যের বাহিনী গুলি চালায় অন্য কারণে না। আর যাদের উপর গুলি চালানো হয়েছে তারা কণকরাজ্যের। তাই এটা কণক রাজ্যের অভ্যন্তরীন ব্যাপার। তার কিছুদিন পর রাজ্যের পণ্ডিতরা সবাই মিলে আন্দোলন করা শুরু করল দাবী আদায়ের জন্য । রাজ্যের সেপাইরা সে সময় পণ্ডিতদের উপর মরিচ স্প্রে করা শুরু করল।
এতে করে এক পণ্ডিত মারা পড়ল। রাজ্যমন্ত্রীকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি তার বচন ছাড়েন এভাবে- “আগে থেকে কোনো ব্যক্তির রোগ না থাকে,তাহলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর কোনো সম্ভাবনা নেই। যে পণ্ডিতের কথা বলা হচ্ছে, ওই পণ্ডিতের মৃত্যুর পর যদি ময়নাতদন্ত করা হতো তা হলে নিশ্চিত হওয়া যেতো”। রাজ্যমন্ত্রীর বচনসুধা এভাবে বাড়তেই লাগত।
কাল রাতে একটা গান শুনতেছিলাম পান্থ কানাইয়ের ব্যাচেলর ছবি থেকে- “গোল্লায় নিয়ে যাচ্ছে আমায়”।
একটা কথা আছে গানটিতে ‘গোল্লায় নেই রাজনীতি/কিন্তু রাজা আছে//রাজাদের কাজ ঝুলে থাকা/বাদর ঝোলার গাছে’। আবার ঐ সময়টাটেই দ্বিতীয় শ্রেণীর বাগধারার কথাও মনে পড়েছিল। সেই সময় মাথা থেকে একটা বুদ্ধি এসেছিল- আমরা যদি হীরক রাজ্য থেকে গোল্লায় যাওয়া রাজ্যমন্ত্রীদের গোল্লায় পাঠিয়ে দিতে পারি তাহলে তারা বাদরের মত ঝুলতে থাকবে আর বচনসুধা নি:সরণ করবে। কত সুন্দরই না হবে তখন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।