অন্য রকম একটা জীবনের স্বপ্ন আমার আজও গেল না..............
(একেবারেই নিজস্ব বিক্ষিপ্ত চিন্তা-ভাবনা, স্মৃতিচারণ। কারো পড়ার মত কিছু নেই)
বই পড়তে পড়তে রাত পার হয়ে গেছে এমন দিন কম না। সেই রুশ রূপকথার অনুবাদগুলো দিয়ে পড়া শুরু। দারুন ছবি ওয়ালা কভারে অদ্ভুত সুন্দর ছিল সেই বইগুলো। রঙিন মোটা পাতা।
কি সুন্দর সব ছবি। আর বই খুললেই কি অপূর্ব সুঘ্রান। আজও আছে বুকসেল্ফে ওই বইগুলো। তারপর চাচা চৌধুরী, ফ্যান্টম, নন্টে-ফন্টে। বাসার সবাই বই পড়ত কম-বেশি।
তাই প্রাথমিক অবস্থায় কিনে বই পড়তে হয়নি। একটু বড় হবার পর ভাইয়া পড়তে দিল ওর তিন গোয়েন্দাগুলো। ও ততদিনে মাসুদ রানায় নিজেকে প্রমোশন দিয়েছে। তিন গোয়েন্দার এডভেঞ্চার যেন চোখের সামনে দেখতে পেতাম। স্কুলে থাকতে টিফিনের টাকা জমিয়ে বই কেনা, পড়ার বইয়ের ফাঁকে রেখে, শীত কালে লেপের নিচে চার্জার লাইট জ্বালিয়ে সেই বই পড়া।
বাথরুমে গেলে বেরোতে আমার বরাবরই দেরী হত। কারণ সন্ধ্যা ৭ টা- ১০ টা পর্যন্ত বই পড়ার একটাই উপায় ছিল, তা হলো বাথরুমে যেয়ে। কিন্তু টিফিনের পয়সা জমিয়ে বই আর কত কেনা যায়? অবশ্য ফাইনাল পরীক্ষার পর আম্মু একটা সমগ্র কিনে দিত প্রতি বছর। ততদিনে ভাইয়ার মাসুদ রানার কালেকশন বেশ মনোহর আকৃতি ধারণ করেছে। বইয়ের অভাব, প্রচ্ছদে অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে, পিস্তলের ছবি আর ভাইয়ার নিষেধ অমান্য করার অমোঘ আকর্ষণ ক্লাস সেভেনের এই আমার পক্ষে এড়ানো সম্ভব হয়নি।
প্রথম মাসুদ রানার বই পড়ি খাটের নিচে লুকিয়ে। ওহ কি কাহিনী। আজ মনে আছে প্রথম পড়া বইটার নাম। রত্নদ্বীপ। এরপর মাসুদ রানার ভালবাসা থেকে নিজেকে ছুটাই সেই সাধ্য আমার কই? খাটের নিচে আর বাথরুমে লম্বা সময় কাটাতে লাগলাম।
আমার মনে আছে আরামে বই পড়ার জন্য ফ্রিজের লম্বা বাক্স শুয়িয়ে আমি তিন গোয়েন্দার হেড কোয়াটারের মত একটা গোপন আস্তানা বানিয়েছিলাম ভাইয়ারই খাটের নিচে। ওইখানে এমনকি এক প্যাকেট বিস্কুট পর্যন্ত রাখতাম। এরপর আস্তে আস্তে হাতে এলো সেবার ওয়েস্টার্ন, ক্লাসিক, অনুবাদ। বই পড়ার অভ্যাস আর বইয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরী করেছিল সেবা প্রকাশনী। তারপর হুমায়ুন আহমেদ, সত্যজিত, সমরেশ, সুনীল, জাফর ইকবাল, বুদ্ধদেব গুহ কত কি।
উত্তরাধিকার সুত্রে আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে পেয়েছিলাম বিমল কর, আকবর হোসেন, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, শরতচন্দ্রের বই। বই পড়ার আমার সর্বগ্রাসী লোলুপ আকাংখা সেগুলোকে শেষ করতে বেশিদিন নেয়নি।
ততদিনে কলেজে উঠে গেছি। সিগারেট ধরিয়ে মাস্তান ভাব নেবার কারণে তখন বই কেনার টাকায় টান পরা শুরু হয়েছে। তাই বলে কি বই পড়া বন্ধ থাকবে? আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার জেনারেশনের কিছু ছেলের, বন্ধুর বই পড়ার অভ্যাস তখনও ছিল।
এছাড়া পাড়ায় তিন টাকায় বই ভাড়া দেবার দোকানও তখন পর্যন্ত বিলুপ্তির মুখ দেখেনি। ঐগুলো দিয়ে কোনো মতে চালিয়ে নিচ্ছিলাম এমন সময় আগমন ঘটল ই-বুকের। আহা বিনে পয়সায় কম্পিউটারের স্ক্রিনে কি সুন্দর বই পড়া যায়। যে সব বইয়ের দিকে তাকালেই শূন্য পকেট হাহাকার করে উঠত সেগুলো পড়তে পারতাম আয়েশ করে। বাসায় কম্পিউটার থাকলেও ইন্টারনেট ছিল না।
যাদের বাসায় ইন্টারনেট থাকত তারা বই ডাউনলোড করার সাইট জানত না। বেশিরভাগ বই যে ডাউনলোড করা যায় তাই জানত না। এই অবস্থায় স্বর্গের দেবদূত হিসাবে হাজির হয় বন্ধু নাবিল। ইন্টারনেট সম্পর্কে আমার জ্ঞান যখন প্রাঘঐতিহাসিক যুগে তখন এই ব্যাটা রীতিমত জাদুকর। হেন কোনো সাইট নাই যা বান্দা জানে না।
আর বন্ধুদের মধ্যে ওর ইন্টারনেট এর স্পিডই ছিল সবচেয়ে বেশি। জিপ এর লাইন ছিল। আমার হাই ৫ আর প্রথম ফেসবুক প্রোফাইলও এর দ্বারাই খোলা। শুক্রবার ওর বাসায় চলে যেতাম বিকালে, আসতাম রাত্রে। এরমধ্যে ওর গোল্ডলিফের প্যাকেট, নাস্তা, চা সব হজম করে ব্যাপক সময়ের জন্য ওর পি.সি. দখল করে রাখতাম।
এমনে মাসখানেক পর ব্যাটা আমার ফোন ধরতেই সম্ভবত ভয় পেত শুক্রবার। কিন্তু তাতে কি আমাকে ঠেকানো যায়? সোজা বাসায় হাজির হয়ে যেতাম। বই নেয়া নিয়ে কথা। এছাড়া ওরও বই পড়ার ব্যাপক অভ্যাস থাকায় সত্যিকারের বইও পাওয়া যেত ওর কাছে। এখন একা থাকি।
রাত জেগে বই পড়লে বকা দেয়ার কেউ নেই। হাই স্পিড ইন্টারনেট, নিজের ল্যাপটপ। অনেক বইয়ের সাইট ব্রাউজারে বুকমার্ক করে রাখা। শুধু ডাউনলোড করা হয় না, পড়া হয় না। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো বইয়ের মধ্যে দুটো অনুবাদ এখনো পড়া বাকি।
কাজের পর এসে কেন জানি আর পড়তে ভাল্লাগে না। রান্না, খাওয়া, দেশে কথা বলা এইত, সময় শেষ। ভাইয়ার খাটের নিচে আমার বানানো ফ্রিজের বক্সের গোপন আস্তানায় ঢুকে বই পড়তে ইচ্ছা করে……....................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।