বাবার এত মন খারাপ হল কেন বুঝতে পারলাম না। অবশ্য মন খারাপ না মেজাজ খারাপ তাও ঠিক ধরা যাচ্ছে না। কি যে মুশকিল। এদিকে আজ বিকালে যে থান্ডার-ক্যাটস আছে, সেদিকে কারো খেয়ালই নেই।
সবিতো ঠিকমত করলাম আজকে।
শুক্রবারের ছুটির দিনটায় একটুও গড়াগড়ি না করে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলাম। দাঁত মাজলাম ভাল মত। তারপর বাড়ির কাজ সব শেষ করেছি। ট্রান্সলেশন অবশ্য ভুল হয়েছে দুইটা। কিন্তু গুনগুলোতো সব ঠিক হয়েছে নাকি!
নাস্তা খাওয়ার সময় আলু ভর্তা কম পড়েছিল।
ডিম সিদ্ধটাও দাদার সাথে ভাগ করে নিতে হোলো। ডিমের কুসুমের জন্যে গাইগুই করিনি আজকে মোটেই। ওই থান্ডার-ক্যাটসের কথা চিন্তা করেই না চুপচাপ যত অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছি।
এদিকে আবার চচ্চড়ে রোদে ব্যাগ হাতে বাবার পিছে পিছে টানা দশ মিনিট হেঁটে বাজারে গেলাম। বাবার পিছনে পিছনে বাজার বয়ে বয়ে বেড়ালাম এক ঘন্টা।
আবার দশ মিনিট হেঁটে ঐ জগদ্দল ভারী বাজার বয়ে ফিরতেওতো হবে আমাকেই।
কিছুক্ষণ পরপর বাবা একএকটা দোকানের সামানে দাঁড়ায়, দরদাম করে, আর শুধু ব্যাগের ওজোন বেড়ে যায়। এদিকে ব্যাগটাকে কায়দা করে পিছনে ধরে রাখতে রাখতে আমার যে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে, সেদিকে কি আর কারো খেয়াল আছে!
মাছের বাজারে কিযে গন্ধ। বাবাগো! আরে একি। কুঁচো চিংড়ির ঝুড়ির মধ্যে দেখি একটা পুটি মাছ বেশ নড়াচড়া করছে।
এহহহেরে, মাছটা আস্তে করে তুলে নিতে পারলে বেশ বাল্বের মধ্যে পুষতে পারতাম। অবশ্য মাছওয়ালা চাচাকে বললে এমনিতেই দিয়ে দেবে। কিন্তু তারওতো আবার বিপদ আছে। বাসায় যেয়ে নির্ঘাত একখান ধোলাই খাওয়া লাগবে চেয়ে মাছ নেওয়ার জন্যে। অবশ্য বাজারের মধ্যেই সবার সামনে বকা খাওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে ফেলে দেয়া যাচ্ছে না।
কতদিকে যে খেয়াল রাখা লাগে!
কাল বিকেলেই দাদাকে দেখলাম একশ ওয়াটের একটা বাল্বের পেছনের কালো কাঁচটা ভেঙ্গে ভিতরের জিনিস-পত্তর সব কায়দা করে ফেলে দিচ্ছে। কি না পেপারওয়েট বানাবে। একগাদা খালি ইকোনোডিএক্সের সর্বনাশ করল শুধুশুধু। কলমগুলো পেলে বেশ কটকটি নয় শনপাপড়ি খেতে পারতাম। আর কি কপাল! রোজ রোজ কি আর বাল্ব ফিউজ হয়? বাল্বটাও ঠিক ওর দরকার মতই ফিউজ হোলো।
ওই ছাতার প্লাস্টিকের পেপারওয়েট দিয়ে কি মুন্ডুটা হবে শুনি! তার উপর আবার আমার সব থেকে সুন্দর নীল-নীল ডোরা দেয়া মার্বেল দু’টোই নিয়ে নিল ঐ ঘন্টার পেপারওয়েটের ওজোন বাড়ানোর জন্যে।
শেষমেশ এত সুন্দর বাল্বটা ভেঙ্গে অদ্ধেক গোলমত একটা প্লাস্টিকের গোলা বের হল। মার্বেল দুইটাই গোল্লার ভিতরে না থেকে একেবারে গোল্লার ছাদে ঠেকে গেছে কেন কে জানে। তবে একটু ঘষা দিতেই চলটা উঠে গেলো। এখন ওই মার্বেলের জন্যে আরো বাজে দেখাচ্ছে।
উচিত শাস্তি হয়েছে। যেমন গায়ের জোরে কেঁড়ে নেওয়া!
এত ঘটা করে ওই ঘোড়ারডিমের প্লাস্টিকের কলম গলানো পেপারওয়েট না বানিয়ে বাল্বটা আমাকে দিয়ে দিলে আজকে আমার মার্বেল দু’টো আমার পকেটেই থাকত। কলমগুলো ফিরিওয়ালা চাচাকে দিয়ে বেশ কটকটি খাওয়া যেত, আবার আজকে পুঁটি মাছটা নিশ্চিন্তে চুরি করে বাসায় নিয়ে বাল্বের মধ্যে পুষতে পারতাম। এই সব সহজ সহজ জিনিস এদের মাথায় ঢুকলে তো!
উফফ, বাজারের ব্যাগটা তো বেজায় ভারী হয়ে উঠলো। আর কতক্ষণ পিছনে ধরে রাখা যায়! ওইযে আবার দুইহালি কাঁচা কলা কিনলো।
কোনো মানে হয় এর? পয়সা খরচ করে কেন যে মানুষ কাঁচা কলা খায়! এই যে আবার উচ্ছে বাছা শুরু হোলো। ভাল যন্ত্রণা দেখি!
এই সব আজেবাজে কাঁচকলা বা উচ্ছে কিনে টাকা নষ্ট না করে আমাকে একটা স্প্রিং দেয়া জীপ গাড়ি কিনে দিলেও পারত। ব্যাটারি দেওয়াটা কিনে দিলে বেশি ভাল হত। তবে ওইটার অনেক দাম। তাছাড়া দুইদিন পরপর ব্যাটারি বদলানোর একটা ব্যাপার আবশ্য থেকেই যায়।
নাহহ, ব্যাটারি দেওয়া গাড়ি ভাল হবে না। শেষে দেখা যাবে ব্যাটারির অভাবে খালি গাড়ি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এরচেয়ে স্প্রিং দেওয়াটাই বরং ভালো। একবার কিনে ফেললে আর চিন্তা কি! সারাদিন যত খুশি টেনে টেনে চালাও। অবশ্য দাদার চোখের আড়ালে রাখতে হবে গাড়িটা।
না হলে দাদা খুলে ফেলবে, কিন্তু আর জোড়া দিতে পারবে না।
এই আর এক যন্ত্রণা। আরে বাবা, যদি ঠিক মত জোড়াই দিতে না পারিস, খুলিস কেনো তবে? এই যে আমি গত বৃহস্পতিবারে বাবার রেডিওটা খুলে ভিতরের ধুলো-ময়লা, মাকড়শার ঝুল সব পরিস্কার করে আবার ঠিকঠাক জুড়ে রেখে দিলাম; কই কেউ টের পেল? এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। কেউ কিচ্ছু বুঝতেই পারে নি। খালি বাবা সন্ধ্যে বেলায় বাসায় ফিরে হাত-মুখ ধোয়ার সময় মাকে জিজ্ঞেস করছিল যে স্ক্রুড্রাইভারটা বাথরুমে কেন।
বদ স্ক্রুড্রাইভারটা বালতির তলায় গড়িয়ে গেছিল রেডিওতে কাপড়ের খাপটা পরানোর সময়। কিন্তু রেডিও অন করে যখন বেশ শব্দ শোনা যাচ্ছিল তখন খুশিতে আর ওটার কথা মনেই ছিল না।
এই সেরেছে। এখন জবাবটা কি দিই? প্যান্টের পিছনের ফুটোটা কি আমি করেছি নাকি? এক প্যান্টই সাত আট মাস ধরে পরে বেড়ালে সেটার পিছনে ফুটো না থাকাটাই তো এক আশ্চর্য ঘটনা। আর মানুষে ঐ ফুটো দেখলে যদি কারো মান যায় সেটাতো বাবারই যাবে নাকি? এই যে এত কষ্ট করে কত দিকে চিন্তা ভাবনা করে মাথা খাটিয়ে কত সুন্দর সব কিছু ব্যালান্স করে ব্যাগটা পিছনে ধরে ফুটোটা ঢেকে রেখেছি এতক্ষণ, তারপরেও মুখটা হাড়ি করে ফেলার দরকারটা কি বুঝলাম না।
থান্ডার-ক্যাটসটা আজকে মিসই হোলো শেষ পর্যন্ত। বাজার থেকে ফিরেই বাবা সেইযে হাড়িমুখে শুয়ে পড়ল আর কারু সাথে কোন কথাই বললো না। কালকে স্কুলে সবাই যখন গল্প করবে মজা করে, আমার তখন বসে বসে শুনতে হবে সবটা! কি অবিচার!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।