আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

%%- বিশুদ্ধ জাহেলিয়াত!!!

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

যা কিছুই বিজ্ঞানভিত্তিক, তাই সত্য; এর বাইরে আর কোন সত্য নেই -এ এক চিরন্তন মিথ্যা। বিজ্ঞানের সাধারণ একটা দাবী হচ্ছে- বিশেষ জ্ঞান। এই বিশেষ জ্ঞানের পরিধি কতদূর, সেটাই বিবেচ্ছ বিষয়। অনেকেই বলে থাকেন যে, এই বিশ্বজাহান একটি আকস্মিক ঘটনার ফলশ্রুতি মাত্র; এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু এর প্রেক্ষিতে জন্ম নেয়া প্রশ্নটির কি জবাব হবে যে, 'কে ঘটালো এই ঘটনা'? যুক্তিবাদীরা কি জবাব দেবেন এই প্রশ্নের, আমার জানা নাই।

কারণ, এই পৃথিবীর দৃশ্যমান কোন বালুকণা যদি তার অবস্থান থেকে বিন্দু মাত্রও বিচু্যত হয়, তাহলে সেখানেই অন্য কোন বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ একটি যুক্তি নির্ভর সত্য। আমরা যদি নিউটনের সেই সূত্রটাকে উদ্ধৃত করি, যেখানে বলা হয়েছে ঃ 'কোন বস্তু স্থির অবস্থায় থাকলে তা চিরকালই স্থির থাকে, আর গতিশীল অবস্থায় থাকলে তা নির্দিষ্ট গতিতে চলতে থাকে; যদি না কোন বহির্বল এর অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়' -এখানে যদি এ প্রশ্ন এসে যায় যে, কি সে বহির্বলের উৎস যা স্থিরতাকে গতি দেয় বা গতিশীলের গতির পরিবর্তন ঘটায়, তাহলে কি সেটাই হয়ে যাবে ধর্মান্ধতা? হতে পারে সে শক্তি কোন প্রাণীর পক্ষ থেকে কিংবা হতে পারে মহাবিশ্বের অন্য কোন উৎস থেকে, তাহলে সে উৎসেরও কোন উৎস থাকাটাই স্বাভাবিক। জগতের কোন কিছুই এমনি এমনি যদি না ঘটে, তাহলে সুশৃংখল এই বিশ্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এমনটি চিন্তা করার দুঃসাহস ঘটে কি করে? উৎসেরও উৎস থাকবে, এই ধারাবাহিকতায় মানুষের মনে এ প্রশ্নের উদয় হতেই পারে যে, 'তাহলে সমস্ত উৎসের যে মহা উৎস, তার উৎসই বা কি?' কিন্তু এর জবাব খোঁজার পূর্বে আমাদের বিবেচনায় এ কথাটি আনা উচিত যে, যে বিজ্ঞানের উন্নতির স্পর্ধায় এ প্রশ্নের উত্থান, সে বিজ্ঞান কি সেই মহাউৎস পর্যন্ত পেঁৗছুতে পেরেছে? কখনোই নয়। বিজ্ঞানের থিওরী পরিবর্তনশীল; আজ যা কিছু আমাদের জ্ঞান-বিবেচনায় সত্য, এমনও হতে পারে আগত কয়েক শতাব্দী পর সে সত্যের ভেতর থেকেও বেরিয়ে আসবে আরো সূক্ষ্ম কোন সত্য যা বর্তমানকে ম্লান করে দেবে। যেমন, আমরা জেনেছি যে, আগুন এমন এক বস্তু যার মধ্যে কোন প্রাণীই প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে টিকতে পারে না, অথচ বিজ্ঞানীদের গবেষণা আজকাল ভূ-গর্ভের গলিত আগুনের মধ্যেও মৃদু প্রাণের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছেন।

হতে পারে অনাগত বিজ্ঞান-গবেষণা আমাদেরকে একথা শোনাবে যে, আগুনের মাঝেও প্রাণের অস্তিত্ব জীবন্ত ও স্বাভাবিক একটি সত্য। বিজ্ঞানের কথা বাদ দিয়ে যদি সাধারণ কোন মস্তিষ্কের কথায় আসি, তাহলে তো একে নির্ঘাৎ এক অসংলগ্ন ভাবনার ফলাফল বলতে হবে। প্রশ্নকারী কি তার নিজের দেহটি সম্পর্কে অবগত, যেখানে তার মৃত অনুভূত নখের একটা বিরাট অংশকে কেটে ফেললেও কোন ব্যাথা নেই অথচ তার ঠিক উপরের সুতোর মত চামড়ার কোন অংশ ছিঁড়তেও এত ব্যাথা কেন? কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই জ্ঞান এবং অনুভববের তুলনামূলক চিন্তা করে তাহলে সে দেখতে পাবে যে, তার সত্তার অনুভবের সাথে উল্লেখিত চামড়ার যোগসূত্র আছে বলেই তার ব্যবচ্ছেদে এত ব্যাথা, অন্যদিকে মৃত অনুভবের পর্যায়ে পড়া নখের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজ হাতে সাজিয়ে-গুছিয়ে কাটলেও কোন ব্যাথা নেই; বরং আছে এক ধরনের স্বস্তিবোধ। এর থেকে একটু উপরের পর্যায়ে যদি ভাবনাকে নিয়ে যাই তাহলে দেখতে পাব যে, জ্ঞানকে যদি অনুভব দিয়ে অর্জন করতে যাই তাহলে নখাংশের ন্যায় সত্যের মৃত অনুভবই মিলবে শুধু; এর বেশী কিছু নয়। অন্যদিকে যদি অনুভবকে জ্ঞান দ্বারা বিচার করি, তাহলে একথাই প্রতীয়মান হবে যে, মৃত অনুভব নখের সাথে আমার আত্মার মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন বলেই আমি তার ব্যবচ্ছেদে ব্যথিত নই।

আর চামড়ার সুতোরূপ অংশটির সাথে রয়েছে আমার প্রাণের সম্পর্ক, তাই এই ক্ষুদ্রাংশটুকুও মন-প্রাণকে ব্যথিত করে তোলে। যদি এই ধারাবাহিকতায় যুক্তি, অনুভব আর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উৎসকে আমরা মহাসত্যের সন্ধানের একমাত্র উপায় মনে করি এবং এসবের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে বিশ্লেষণের খাতিরেই একমাত্র জ্ঞানকে কাজে লাগাই, তাহলে সত্যোপলব্দির ব্যাথা অন্যকথায় সৃষ্টির স্রষ্টা কোনদিনও আমার অনুভবে অনুভূত হবেন না। কারণ, আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর সৃজনরূপই এমন যে, যা কিছু তার সংস্পর্শে আসবে তার বাহ্যিক অবস্থাটাই সে শুধুমাত্র উপলব্দি করতে পারে, আভ্যন্তরীণ রহস্য সন্ধানে ইন্দ্রিয় একেবারেই অকার্যকর। তদুপরি যদি এই ইন্দ্রিয়সমূহকেই বানানো হয় জ্ঞানের উপর কতর্ৃত্বকারী, তাহলে তো সে ক্ষেত্রে জ্ঞান তার নিজস্ব কক্ষপথে চলার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলবে। এক্ষেত্রে জ্ঞান তখন নিছক কিছু ধারনার জন্ম দিতে পারে মাত্র; এর বেশী নয়।

বিপরীত পক্ষে, জ্ঞানকে যদি সাধারণভাবেও ইন্দ্রিয়সমূহের উপর কতর্ৃত্বশালী করা হয়, তাহলে বিচার বিবেচনায় যেখানে যেটুকু ইন্দ্রিয়শক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন হবে, জ্ঞান তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনেই তা ব্যবহার করে মহাসত্য থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি কাজকে পূর্বাপর নিরীক্ষণ করে সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সফল করে তুলতে সচেষ্ট থাকে সর্বদা। মূলতঃ জগতের তাবৎ সৃষ্টির মধ্যে মানুষের কতর্ৃত্বের আসল রহস্য এখানেই নিহিত। আর জ্ঞানের সাথেই একমাত্র সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে মানুষের স্রষ্টার, সৃষ্টিগতভাবে ইন্দ্রিয় সেক্ষেত্রে নিতান্তই অকার্যকর কিছু বস্তুনিচয়ের সম্মিলিত নাম। তাই সাধারণ কিংবা চিন্তাশীল যে কোন পর্যায়েরই হোক না কেন, স্রষ্টার স্রষ্টা কে এমন প্রশ্ন উত্থাপনকারী ব্যক্তিমাত্রই জেনে কিংবা না জেনে ইন্দ্রিয়বাদ বা বস্তুবাদের অন্ধত্বে নিমজ্জিত; সন্দেহ নেই। কারণ, এ প্রশ্ন তার স্বাধীন-স্বচ্ছ জ্ঞান থেকে নয়; বরং তার ইন্দ্রিয় প্রশাসিত পঙ্গু-পরাধীন জ্ঞানের বিভ্রান্ত ফসল।

এরই আধুনিক রূপ বস্তবাদ; যার আগা-গোড়া পুরোটাই জুড়ে রয়েছে নির্ভেজাল জাহেলিয়াত বা জ্ঞানান্ধতা। এই বস্তুবাদের কয়েকটি ব্যাপার এমন- ক) বিশ্বজাহানের ব্যবস্থাবলী একটি আকস্মিক ঘটনা। খ) এর পরিচালনা ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়। গ) এর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই; থাকলেও তার সাথে মানুষের জীবন ধারার কোন সম্পর্ক নেই। ঘ) মানুষও অন্যান্য প্রাণীকুলের ন্যায় এক ধরণের পশু; তার সৃষ্টি রহস্য খোঁজাটা অপ্রাসংগিক।

ঙ) মানুষ তার মধ্যে স্থিত আশা-আকাংখার পরিপূরণে চারপাশের বস্তুনিচয়কে কাজে লাগাবে; এবং এভাবে জৈব অভাব ও আকাংখা পূরণই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। চ) মানুষের চাইতের বড় আর কোন জ্ঞানের উৎস নেই। ছ) তার চলার পথ সে নিজেই রচনা করে নিবে, এখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ তার কাম্য নয় (সরকার বদলে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস)। জ) সে জবাবদিহি করবে একমাত্র তার নিজের কাছে অথবা তার তৈরী করা কোন বিধানগত ক্ষমতার কাছে। ঝ) এই জীবনের বাইরে আর কোন জীবন নেই, এখানেই শুরু এখানেই শেষ।

বলুন, এরূপ চিন্তা-চেতনা যে ধারণ করতে পারে সে কি করে সন্ধান লাভ করবে মানুষ ও এই বিশ্বভূবনের স্রষ্টার? কারণ, এসবগুলোই হচ্ছে পার্থিব ইন্দ্রিয়-সুখ লাভের যাবতীয় কৌশল, অথচ একটু জ্ঞান খাটালেই্ যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, মানুষের শুরুটাই ছিল পার্থিব বস্তুনিচয় দিয়ে অপার্থিব কলা-কৌশলে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন ঃ "তারপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি 'আলাক-এ(জমাট রক্তে), তারপর 'আলাক্কে পরিণত করি পিণ্ডে এবং পিণ্ডকে পরিণত করি অস্থি-পঞ্জরে; তারপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশ্ত দ্বারা; অবশেষে তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান! এরপর তোমরা অবশ্যই মরবে। তারপর কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে।

" [সূরা আল-মু'মিনূন ঃ 13-16] মানব সৃষ্টির এই রহস্য এখন বৈজ্ঞানিক সত্য; অথচ বিভ্রান্ত মানুষ চৌদ্দশত বছরের পুরোনো (?) কুরআনের এই আয়াতগুলোর প্রথমাংশকে স্বীকার করে এ জন্য যে, বিজ্ঞান একে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর শেষের অংশ মানতে নারাজ এ জন্য যে, বিজ্ঞান এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। তাদের জন্য কি আল্লাহ্র এ আয়াত প্রযোজ্য নয় যে, "তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর আর কিছু অংশকে কর অবিশ্বাস? তাহলে তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ও অপমান এবং কেয়ামতের দিন তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে কঠিনতম শাস্তির দিকে। আর তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে অমনোযোগী নন। " [সূরা আল-বাকারাহ্ ঃ 85(শেষাংষ)] সত্যোপলব্ধিতে সকলের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

(নিজেকেও এর আওতায় রেখে। ) ছবিটির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে ঃ http://www.fortunecity.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।