ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।
[অনেক পুরোনো ভ্রমন কাহিনীর ধারবাহিকতায়]
ইয়োসিমিটি ন্যাশনাল পার্ক নেভাডাতেই অবস্থিত। লাস ভেগাস শহরটা থেকে বেরিয়ে আমরা রওনা দিলাম ইয়োসিমিটি ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশ্যে।
ভীষন লম্বা পথ। পথের মাঝখানে পড়ল ডেথ ভ্যালী নামে একটা জায়গা। চারপাশের পাহাড় ঘিরে একটা চুল্লীর মতন একটা জায়গা তৈরী করেছে।
রোদের তাপ এখানে চারিদিকে প্রতিফলিত হয়ে আগুন গরম করে ফেলে যায়গাটাকে। এখানকার একমাত্র র্যাঞ্চে নেমে আমরা সকালের খাবারটা করে নিলাম। বিভিন্ন ফলমূল দিয়ে ব্রেকফাস্টটা ভালই হল।
তারপর আবার যাত্রা। দুপাশের পাহাড় আর ধুলি ধুসরিত মরুভুমির মধ্যে দিয়ে যেতে ভালই লাগছিল।
কিছুদুর যাবার পর একটা বড় মরুভূমি - স্যান্ড ডিউন চোখে পড়ল। আমরা নেমে বেশ কিছু দুর আগিয়ে গেলাম। মরুভুমি যে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে কিছুটা হলেও তার স্বাদ পেলাম। বালি গুলো যখন ভীতরে ঢুকছিল তখন মনে হচ্ছিল আগুন ঢুকছে। বিভিন্ন যায়গায় সাপের গর্ত দেখতে পাচ্ছিলাম।
গাগান ইতিমধ্যে অসুস্থ বোধ করছিল। তাই তাকে আর ডাকা হয়নি। আমি সহ বেশীরভাগ মরুভুমি থেকে আগে ভাগেই ফিরে এলাম - ভীষন কষ্ট বোধ হচ্ছিল। নীলেশ আর অমিত আরো বেশ অনেকখানি গিয়ে যখন ফিরল তখন তারা প্রায় মৃতপ্রায়।
তারপর আবার যাত্রা।
যাত্রার মাঝখানেই রাস্তাতে একটা যায়গা পড়ল - এখন নাম মনে পড়ছে না - যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জায়গা। সমুদ্র সমতল থেকে কয়েক হাজার ফিট নীচে যায়গাটা। ফলশ্রুতিতে সবার কান বন্ধ হয়ে গেল।
এর মাঝে আমার স্ত্রীর ফোন এল অমিতের মোবাইলে। ওদের কে তো বলে যাইনি।
আমার রুমমেট উজ্জ্বল ভাইকে খালি অমিতের মোবাইল নাম্বার দিয়ে এসেছিলাম। বলেছিলাম একান্ত প্রয়োজন না পড়লে বাসায় না জানাতে। কিন্তু আমার স্ত্রী আন্দাজ করেছিল কোন একটা ঘাপলা আছে, উজ্জ্বল ভাইকে চেপে ধরে ফোন নাম্বার বের করেছে। আমার স্ত্রী ভীষন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আমাকে ফোন করেছে। তাদের ধারনা কোথায় না কোথায় আমি যাচ্ছি, ভীষন বিপদ হতে পারে আমাদের, ইত্যাদি।
কোনমতে তাকে আশ্বস্ত করে ফোন রেখে দিলাম।
মূল পথে যে রাস্তাটা দিয়ে যাবার কথা সে জায়গায় মোড় ঘুরতেই দেখি বড় করে সাইন দেয়া: warning: snow removed occasionally। তো আমরা পাশর্্ববতর্ী একটা দোকানে থেমে কি অবস্থা জানতে গেলাম। দোকানদার জানাল আসলেই এই রাস্তায় গেলে বরফে পথ বন্ধ পাবেন। সুতরাং ঘুরে অন্য একটি রাস্তা দিয়ে যেতে হবে।
আর সেটাতে যেতে প্রায় ঘন্টা চারেক বেশী সময় লাগবে। কি আর করা, তখন বাজে বিকেল চারটার মত। আর চার ঘন্টা মানে রাত আটটা নাগাদ পৌছে যাব ওখানে এটা ভেবে আবার যাত্রা শুরু করলাম আমরা।
কিছুদুর গিয়ে চোখে পড়ল ভীষন সুন্দর একটা লেক। ম্যাপে দেখলাম এর নাম হচ্ছে মনো লেক।
সবার চেঁচামেচিতে গাড়ী থামিয়ে নামলাম মনো লেকে। কিন্তু কাছে যেতেই দেখি সাইনবোর্ডে লেখা এক বিশেষ প্রজাতির মাছির প্রজনন ক্ষেত্র এই লেক। মাছি গুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় - সুতরাং কেউ যেন মাছির ডিম বা লার্ভা ধ্বংস না করে সে ব্যাপারে সর্তক করে দেয়া হয়েছে।
এই মাছির ডিমগুলোর জন্য পুরো লেকের পাড় জুড়ে থকথকে কাদা আর ভীষন দর্ুগন্ধ হয়ে আছে। মনো লেকের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে কোন এক চুনা পাথরের পাহাড়, তাই লেকের পানিতে মিশে আসে চুনা।
সেই চুনা গুলো জমাট বেঁধে সাদা সাদ চুনা পাথরের ক্রিষ্টাল ডিপি তৈরী করে। দূর থেকে দেখে অসাধারন মনে হয়। কিন্তু কাছে এসে বোঝা গেল ধারালো, ভীষন পিচ্ছিল সেগুলো।
সবাই ধুমসে ছবি তুলতে লাগল সেখানে। আশেপাশে কিছু পাখি উড়ছিল।
মানসী নামের মেয়েটি পাখিগুলোকে হাতের চিপস খাওয়াতে খাওয়াতে আশেপাশে পাখির মেলা বসে গেল। সেগুলো রিতীমত আক্রমন করে বসত আরেকটু হলে। আমরা সবাই গিয়ে পাখিগুলোকে তাড়িয়ে মানসীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলাম।
পানি যারা পা ভিজিয়েছিলাম তাদের পায়ে চুনের সাদা আস্তর পড়তে শুরু করেছে দেখলাম। তাই খালি পায়েই গাড়িতে চড়ে বসলাম আমরা।
আবার শুরু হল যাত্রা।
ছবি পরিচিতি:
1। ফারনেস ক্রিক র্যাঞ্চ যেখান টায় সকালের খাবার খেয়েছিলাম
2। সেখানটাতে একটা পুরোনো স্মৃতি কাঠের ট্রেনের বগির সামনে
3। রাস্তায় পৃথিবীর সবচে নীচু জায়গাটার দিকে
4।
স্যান্ড ডিউনে অভয়
5। স্যান্ড ডিউনে আমরা
6। স্যান্ড ডিউন
7। আবার রাস্তা
8। কিছু আউট ল
9।
মনো লেক
10। মনো লেকে শিভা
11। মনো লেকে অভয়
12। মনো লেকে আমি
13। মনো লেকে মানসী পাখিদের চিপস ছুঁড়ে দিচ্ছে
14।
মনো লেকে পাখিদের আক্রমন
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।