জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, শোষিত, মজলুম মানবতার আত্মচিৎকারে আমার অলস-ক্লান্ত আত্মার ঘুম ভেঙ্গে যায়! প্রতিনিয়ত কর্ণ হতে মস্তিষ্কের পথ ধরে করাঘাত করে যায় হৃদপিণ্ডে, মানবতার করুণ বিলাপ ধ্বনি। মূহুর্তে টগবগিয়ে ফুটে উঠে নেতিয়ে পড়া সব জমাট রক্তকণা। শোণিত ফোটা অনিদ্রিত লাল চক্ষু হতে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়তে চায় ইনসাফের বুকে প্রজ্জ্বলিত দাউ দাউ দহনকুণ্ডে।
বিবেকের শ্রেষ্ঠত্ব আর পশুত্ব পন্থার এই বিরাট ব্যবধান, কোথাও কোটি টাকার পাষাণ স্তুপ উলুবনে পরিণত হচ্ছে, অথচ সম্মুখে খচিত বাঁকানো পিতলের ময়লা বাটিতে সভ্যতার অকথ্য কলংক পাঁচটি পয়সার চারকোণা বাঁচার দীর্ঘশ্বাসটুকুও ছুঁড়ে পড়ছে না।
এক আশ্চর্য বেদনার বিষবাষ্প বুকের গভীর হতে ফেনিয়ে উঠে রুদ্ধ করে প্রতিরোধের বুক ফাটা আত্মচিৎকার; যখন দেখি শহরের পঁচা ময়লার স্তুপের শক্ত মধ্যখানে ছেঁড়া বস্তার প্রাসাদে মধুর বাসর গড়ে- সত্যপ্রেম, আর তারই কোল ঘেঁষে নিরব দাঁড়িয়ে দেখছে কোটি টাকার স্তুপাকার পাষাণ অট্টালিকা, নিকৃষ্ট নাকে-মুখে সুগন্ধী রুমাল চেপে মার্সিডিসের নরম গদিতে ঠেস দিয়ে, লক্ষ টাকার চেক মুঠিতে পুরে ভ্রষ্টার মাংসল উরুর সন্ধানে বেরিয়েছে পশু সাহেব।
প্রতিবাদী আত্মাকে বুক থেকে টেনে বের করে দিতে চাই, যখন দেখি আমার মায়ের ছিন্ন বস্ত্রে কটাক্ষের কলংক লেপিত হচ্ছে, যৌবনের দাহে বোনের সতীত্বের কালো দাগ মুছে দিতে যাচ্ছে ধানক্ষেত, পাটক্ষেতের আড়ালে, নিদ অনন্তে কিংবা শক্ত দড়ির মালা পরে কিংবা মানবতার বিপরীত প্রিয় সুধা পান করে, কন্যাদায়ের যৌতুক পিটুনিতে যখন বৃদ্ধ কৃষক পিতার গুণে পাওয়া বুকের ক'খানা হাড়ের উপর দিয়ে উষ্ণ ধারা প্রবাহিত হতে দেখি।
ক্ষুধার্ত সন্তানের ভুবুক্ষ ফ্যাকাসে মুখে দু'মুঠো অন্ন তুলে দিতে না পারার অপরাধে দম্পতি ক্ষুধার্ত পেটের অনল চাহিদা চিরতরে মিটালো আত্মহত্যা করে। অথচ এ লজ্জা কোথায় রাখি যে, মৃতু্যর পূর্বাপর তাদের চারদিক ঘিরে ছিল উদরপূর্তি শৃগালের দল।
যখন দেখি ভাই আমার বুকের রক্ত ঘর্মে বিসর্জন দিয়ে সিক্ত পদে সত্য মায়ার পুরীর পানে ছুটে যাচ্ছে, তখন ধারালো ছোরা কিংবা পিস্তলের নল কেড়ে নিচ্ছে তার রক্তের বিনিময়, কখনো জীবনের বিনিময়। বেকারত্বের হতাশার অন্ধকুপে কুরে কুরে জীবন দিচ্ছে মানবতার মুক্তি-সোপান।
ব্যর্থতা আর বাঁচার অধিকারচু্যত বন্ধুর দীর্ঘশ্বাসে ভরা হাহাকারগুলো বেদনার নীল খামের হতে ছুটে বেরিয়ে এসে চাপটাঘাত করে জ্যাম বাঁধা এই কঠোর বুকে।
আর তখনি বেরিয়ে আসে চিৎকার; এই পৃথিবী ছেড়ে ঐ মহাকাশোপারের উদ্দেশ্যে-
'আমাকে আমা'হতে টেনে বের করে দাও
হে জাব্বার!
আমি তব প্রিয় ঝাণ্ডা হাতে
জন্ম নিতে চাই আরেকবার। '
ডেকে যাই প্রাণান্ত ডেকে যাওয়ায়-
'নয় বিস্ময় যদি ঝান্ডা উঁচু করে
বিশ্ব শ্রেষ্ঠ বিবেকের,
ওহে স্বর্গপিয়াসী!
তোরই পাংসু-তলায় দলিত পদ্ম-ডগা
যাহা তোকে ভর করি
মুক্তি সাধিতে পারে
বিশ্ব মানবতার।
জাগিস্ যদি...।
কিন্তু কেউ কি আমায় এ নিশ্চয়তা দিতে পারে যে, আমার এ ক্ষীণ আর্তনাদ অথচ বিশ্বজয়ী তাকবীর হাঁক পেঁৗছে দিতে পারে সেই সব কুম্ভকর্ণের কর্ণকুহরে, যারা ছ'মাসের বিপরীতে আমরণ মানব মুক্তির চিরবিজয়ী দুর্দম তাজীকে অন্ধকোঠায় বন্দী করে চাবি গিলে ঘুমিয়ে আছে বেঘোর নেশায়...।
-------------------------------------------------------------------------------------
ত্রিভুজের সাথে ইয়াহুতে সাক্ষাত ও কথা বলতে গিয়ে এই লেখাটির কথা মনে পড়ে গেল খুব। পুরোনো খাতাগুলো বের করে টাইপ করতে আরম্ভ করলাম, হঠাৎ করেই মনটা ভারী হয়ে উঠলো। লেখাটি যখন লিখি, তখন আমি সৌদি আরবের উমলেজ নামক স্থানে কর্মপোলক্ষে অববস্থান করছিলাম।
সময়টা - 04.09.1997 - 27.06.2006 = - 23.09.08 অর্থাৎ, আট বছর ন'মাস তেইশ দিন পূর্বের লেখা। প্রিয় বন্ধুর চিঠিটি পেয়ে মনটা এতই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল সেদিন, তারপর এই লেখাটি বেরুনোর পর কিছুটা শান্ত হলো।
ছবিটির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে : http://www.texasarrowheads.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।