বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা
দেশ কি এিভূজীয় সংকটে পড়েছে? বর্তমান জোট সরকারের তুঘলকী রাজ্যকালের দিন যতো ফুরিয়ে আসছে ততোই সবকিছু লেজেগোবরে হয়ে পড়ছে। জোট সরকারের সব রাজনৈতিক নকশা কোন পূর্বাভাস ছাড়া আসা অশুভ ঝড়ো হাওয়ায় ভেস্তে যেতে নিচ্ছে। তার মধ্যে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দু'জন মন্ত্রী পরপারের ডাকে জোট সরকার ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। বর্তমান সিইসিকে এখন সরকার পক্ষ নিজেই অথর্ব বলে বিবেচনা করছে এবং সরাবার নাটক শুরু করেছে। এরকম হযবরল অবস্থায় দেশ এগিয়ে চলছে বিপজ্জনক গন্তব্যের দিকে।
জনপ্রিয় জোট সরকার নিজ হাতে সবকিছু বিতর্কিত করে এখন এই ধুম্রজাল থেকে বের হওয়ার কোন পথ না পেয়ে সবকিছু ধূসর দেখছে। আগামী ক'মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চ বেশ সরগরম থাকবে বলে মনে হচ্ছে এবং অবসরের আড্ডার রসদ জোগাবে বলে মনে হচ্ছে।
সমকাল জুনের 26 তারিখে বেশ বিশ্ল্লেষণী একটি প্রতিবেদন লিখেছে বর্তমানে দেশের এই সংকট নিয়ে, "জোট সরকার মেয়াদের শেষ সময়ে রাস্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদ নিয়ে কী করতে যাচ্ছে সে প্রশ্ন, আলোচনা ও বিভ্রান্তি সর্বত্র। ঘটনাবলীতে স্পস্ট যে, সরকারের রাজনৈতিক কার্যক্রমের পরিণতিতেই গভীর সংকটে পড়েছে রাস্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের এই তিন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এ কারণে আগামী নির্বাচন কোন পরিস্থিতিতে, কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে বা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় সৃস্টি হচ্ছে।
বর্তমান চারদলীয় সরকার সিইসি পদে বিচারপতি এমএ আজিজকে নিয়োগদানের পর থেকেই সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে অনাস্থা সৃস্টি হয়েছে। বিচারপতি এমএ আজিজ দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই দুই নির্বাচন কমিশনার ও বিরোধী দলের মতামতকে উপেক্ষা করে নতুন ভোটার তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে একের পর এক যখন জটিলতা সৃস্টি করতে থাকেন তখন সরকারের তরফ থেকে তাকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিতই করা হয়। পানি একেবারে ঘোলা হওয়ার পর এখন সরকারের ভেতর থেকেও তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
এর আগে দলীয় কারণে বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাস্ট্র্রপতির পদ থেকে অপসারণের মাধ্যমে রাস্ট্র্রপতির আনুষ্ঠানিক পদটিকে বিতর্কিত করা হয়। একই ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার ধারাবাহিকতায় আবারো রাস্ট্রপতি বদলের তোড়জোড় চলছে।
সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জেআর মোদাচ্ছির তার সাংবিধানিক মতাবলে একক কর্তৃত্বে সুপ্রিম কোর্টে বেঞ্চ গঠনের প্রশাসনিক কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। আইনজীবীরা 'রাজনৈতিক বিবেচনার' অভিযোগ তুলেছেন।
ক্ষমতাসীন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, অসুস্থ রাস্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের ওপর সরকার আর ভরসা করতে পারছে না। তাই ক্ষমতাসীনরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিজেদের হয়ে কাজ করবেন এমন কাউকে রাস্ট্রপতি পদে বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। আর ইতিমধ্যে বিতর্কিত হয়ে ওঠা ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারানো প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এমএ আজিজের দায় সরকার নিতে রাজি নয়।
বরং সিইসি পদে নিজেদের অন্য কোনো সমর্থককে নিয়োগদানের সুযোগ সৃস্টির জন্য বিচারপতি এমএ আজিজকে এখনি পদত্যাগের জন্য চাপ সৃস্টি করা হচ্ছে। কিন্তু সিইসি আজিজ এখনো সেই চাপের মুখে অনড় রয়েছেন। অপরদিকে সরকারের মেয়াদের শেষ মুহুর্তে স্পর্শকাতর মামলায় বিব্রতকর অবস্থা এড়াতে ক্ষমতাসীনরা প্রধান বিচারপতিকে চাপ দিয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন করাচ্ছেন বলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অভিযোগ করেছে। এ ধরনের অভিযোগ দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, রাস্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাস্ট্রপতি থাকলে তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে সমর্থ হবেন কি-না তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
তিনি জোট সরকারের শাসনামলে রাস্ট্রপতির কাজ চালিয়ে যেতে সমর্থ হলেও জোট সরকারের ছায়া উঠে গেলে কতটা দক্ষতার পরিচয় দেবেন তা নিয়ে সংশয় থেকে বর্তমান পরিস্থিতির সৃস্টি। গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার পর তাই তার দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে সৃস্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এমনকি শনিবার তিনি বঙ্গভবনে ফিরে গেলেও রাস্ট্রপতির দায়িত্ব নেননি। জাতীয় সংসদের স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার অস্থায়ী রাস্ট্র্রপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয় তা লক্ষ্য করছে সরকার।
একই সঙ্গে কূটনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়াও দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রাস্ট্রপতিকে স্বপদে রাখা-না রাখা নিয়ে জোট সরকারের মধ্যে এখনো দু'ধরনের মত কাজ করছে। একপক্ষ চাচ্ছে দ্রুত বিষয়টির ফয়সালা করে নতুন রাস্ট্রপতি নির্বাচন করতে। এজন্য চলতি সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের ঢাকায় থাকতে বলা হয়েছে। অন্যপক্ষ চাচ্ছে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে ধীরে চল নীতি অবলম্বন করতে।
তবে রাস্ট্রপতিকে বিদায় যে নিতে হবে সে বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত। কারণ জানতে চাইলে ওই সূএ দাবি করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাস্ট্রপতির হাতে থাকবে। একই সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক চাপের সৃস্টি হবে, যা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জোট সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। এছাড়া আরো কিছু কারণ কাজ করছে বলে জানা যায়। কিছুদিন আগে সাবেক রাস্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী অসুস্থ রাস্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের শারীরিক অবস্থার খবর নেন।
একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতার সঙ্গেও ইয়াজউদ্দিনের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে সরকারের শীর্ষ মহলের কাছে খবর রয়েছে।
অন্যদিকে নতুন একজন রাস্ট্রপতি নির্বাচন করলে তিনি আগামী পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ফিরে না এলেও রাস্ট্রপতি তাদের থাকবেন। সেক্ষেত্রে জোট সরকার এমন রাস্ট্রপতি রেখে যেতে চায় যাতে তিনি নতুন সরকারের নানামুখী চাপ সামলে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তারা বিরোধী দলে গেলেও রাস্ট্রপতি তাদের থাকায় যাতে সুবিধা নিতে পারে।
ইয়াজউদ্দিন আহমেদ শারীরিক অবস্থার কারণে এসব চাপ দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন না।
সরকারের আরেকটি সূত্র জানায়, রাস্ট্রপতিকে এমনভাবে সরানো হবে যাতে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃস্টি না হয়। রাস্ট্রপতির প্রেস সচিব মোখলেসুর রহমান চৌধুরী সমকালকে বলেন, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী রাস্ট্রপতি বিশ্রামে থাকছেন। পনের দিন পর মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে তিনি দায়িত্ব নিতে পারবেন কি-না সিদ্ধান্ত দেবে। সূএ জানায়, সরকার চায় রাস্ট্রপতি তার শারীরিক অক্ষমতার কারণে নিজে থেকে পদত্যাগ করুন।
রাস্ট্রপতির একটি ঘনিষ্ঠ সূএ জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি বিব্রতবোধ করছেন। রাস্ট্রের সর্বোচ্চ পদকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অব্যাহতভাবে লেখালেখি ও সরকারের মনোভাবে তিনি মানসিকভাবে আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়ার চাপ আগে থেকেই ছিল। বিরোধী দল ও কূটনৈতিক মহলের চাপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সর্বশেষ আদালতের রায় অনুযায়ী ভোটার তালিকা তৈরি নিয়ে। তিনি হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ঘরে ঘরে না যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন যা সরকারকে বিব্রত করেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম মুখ খোলেন বিএনপি মহাসচিব এলজিআরডিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার আহ্বান জানান। এর পরপরই আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও একই রকম আহ্বান জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার উল্টো আদালতের রায়ের ব্যাপারে ক্লাস নেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, সিইসি সরকারের আজ্ঞাবহ নয়।
কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। এরপর যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা শুক্রবার এক অর্থে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নীতিনির্ধারক চার মন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিইসির বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব এলজিআরডিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আমিনুল হক।
বৈঠকে তারা সবাই সিইসি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে সিইসির টালবাহানায় সরকারেরও ভাবমূর্তি বিনস্ট হচ্ছে। সিইসি আজিজের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা কঠিন, যাতে বিএনপিও বেকায়দায় পড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান সিইসি পদত্যাগ করলে তখন আর বিএনপি নতুন সিইসি নিয়োগের সুযোগ পাবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগেই বিচারপতি এমএ আজিজকে সরানো গেলে এখনি নিজেদের সমর্থককে সিইসি নিয়োগ করা যাবে।
দলের সিনিয়র মন্ত্রীদের মনোভাবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও একমত পোষণ করেন। তাই এমএ আজিজকে পদত্যাগ করানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই শুক্রবার যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সিইসিকে নিজ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। সূত্র মতে, অন্যান্য মাধ্যমেও সিইসিকে পদত্যাগের জন্য বলা হয়। কিন্তু সাংবিধানিক পদ বিধায় সরাসরি সরকার তাকে পদত্যাগ করতে বলতে পারে না।
আর এই সুযোগে সিইসি এখনো অনড় রয়েছেন পদত্যাগ না করার ব্যাপারে"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।