জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
প্রতিটি মতবাদকেই প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব অবস্থান থেকে দেখে থাকে। তার ধারণ ক্ষমতা, দৃষ্টির বিস্তৃর্ণতা, মেধার প্রখরতা, সরলতার প্রতি আবেদন, সত্যের পথে চলার আকাংখা এসবের বিচারেই হয়ে থাকে কোন কিছুকে গ্রহণ, বর্জন বা বিশ্লেষণ। আমরা কেউই এই ব্যবধানের বাইরে নই, আবার হয়তো আমরা কেউ কেউ অভিনয়েও অতি দক্ষ শিল্পী। এই প্রেক্ষাপটে হয়তো নিজের মাঝেই দু'জনের বিতর্ক ঘটাই, আবার নিজেই সিদ্ধান্ত দেই, মননের সৌন্দর্যে-কদর্যতায় আমাদের সৃষ্টি সত্যিই অতি বৈচিত্রের।
কথায় আসি, আমাদের ব্লগ বন্ধু শোহেইল মতাহির চৌধুরীর লেখা 'ধমর্ীয় মৌলবাদের চাষাবাদ-6' লেখাটি পড়ে মন্তব্য দিতে গিয়ে এই লেখার জন্ম।
তাই লেখাটি না পড়ে থাকলে এই লিংক থেকে পড়ে নিন অথবা দু'টো জানালা খুলেই দেখুন-
Click This Link
মন্তব্য-পোষ্ট এই প্রথম করলাম, বেশী বড় হয়ে যাওয়াতে। তাহলে শুরু হোক- শোহেইল মতাহির চৌধুরীর উক্ত লেখাটি থেকে যা পেলাম-
1) তিনি বলেছেন 'রাষ্ট্রশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোন মতবাদই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না, ওহাবিজম তার একটা প্রমাণ। ' - তদ্রূপ, ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্যও প্রয়োজন রাষ্ট্রশক্তির, সুতরাং ইসলামের নামে হোক আর ইসলামের আদেশ মেনে হোক ইসলামপন্থীদের রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের লড়াই কোনভাবেই অযৌক্তিক নয়।
2) ওয়াহ্হাবী শব্দের সাথে ইসলামের মিলন ঘটানোর প্রয়াসে বলতে হচ্ছে যে, ওয়াহ্হাবী বলে গালি কিংবা ওয়াহহাবিজম বলে চরমপন্থী ইঙ্গিত দান শুরু হয় ইসলাম বিরোধীদের থেকে, তাই মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব ওয়াহ্হাবী মতবাদ শুরু করেছে এমনটি বলা অযৌক্তিক, তাছাড়া যারা তার অনুসরণ করে তারাও নিজেদের ওয়াহ্হাবী বলে পরিচয় দেয় না; যেমনটি অন্যান্য মতবাদের বেলায় দেখা যায়।
3) মক্কা-মদীনায় মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাবের আক্রমন এবং কবরের উপরে নির্মিত প্রাসাদগুলো ভেঙ্গে দেয়া প্রসঙ্গে- ব্যাপারটা ঠিক যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন তার মদীনায় হিজরতের পূর্বে আলী রাদিয়াল্লাহু 'আনহুকে পাঠিয়ে অর্থাৎ, সমস্ত উঁচু কবরগুলোকে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।
ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব এক্ষেত্রে রাসূলের সত্যিকারের অনুসরণ করে মক্কা ও মদীনার মত ইসলামের পূণ্যভূমিগুলোকে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে এনেছেন মাত্র। তিনি নিজে এবং মুসলমানদেরকে ইসলামের সত্যিকারের অনুসরণ করতে ও করাতে চেষ্টা করেছেন শুধু; কোন নতুন মতবাদের জন্ম দেননি বা দিতে চাননি।
4) বিদ'আত ও শির্ক শব্দদু'টো ইসলামের জন্য বরফে আগুনের ছোঁয়ার মতই বাস্তব। উল্লেখ্য যে, বিদ'আত হলো ইসলামে ইবাদাত হিসাবে সওয়াবের আশায় নব আবিস্কৃত বিষয়সমূহ আর শির্ক হচ্ছে আল্লাহ্র অস্তিত্বে, গুণাবলীতে, প্রভূত্বে, ইবাদাতে অন্য কাউকে অংশীদার করা। বিদ'আত ইসলামের সত্যতা ও পরিপূর্ণতার উপর একটি আবরণ ফেলে দেয় এবং ধীরে ধীরে ইসলামকে ঢেকে ফেলে অনৈসলাম দিয়ে, তাই বিদ'আতের ধ্বংসকারীতা থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হলে পরিপূর্ণ ইসলামী ইবাদাতসমূহের বাইরের সকল নবাবিস্কৃত বিষয়াদিকে অবশ্যই ছেঁটে ফেলতে হবে।
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব মূলতঃ তাই করেছিলেন। অন্যদিকে শির্ক তো হচ্ছে ইসলামে সবচেয়ে বড় অপরাধ। শির্কের ব্যাপারে কুরআন বলে ঃ "নিশ্চয় শির্ক চরম যুলুম। " [সূরা লোকমান ঃ 13 (শেষাংশ)] আল্লাহ্ আরো বলেন ঃ "নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না; আর তার থেকে ছোট যাবতীয় গোনাহ্ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন, আর যে কেউ আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়। [সূরা আন্-নিসা ঃ 116] মোদ্দাকথা, ইসলামে শির্ক, বিদ'আতের সংজ্ঞা, সীমারেখা, এগুলোর বিধি-বিধান পূর্ব থেকেই পরিস্কার ও পরিপূর্ণ।
কেউ সেসব ভুলে গেলে তাকে তা মনে করিয়ে দেয়াটাকে কোন যুক্তিতেই প্রসারণ বা সমপ্রসারণ বলা যাবে না।
5) শিয়া, সুফীবাদ বা তরিকত যাই বলা হোক না কেন এসব মূলতঃ ইসলামের সরল-সঠিক পথ-যে পথের আবেদন সূরা আল-ফাতেহায় মুমিনগণ করে থাকেন প্রতিনিয়ত-তা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু উপদলমাত্র এবং এদের সংখ্যাও প্রচুর। এসবের অনেকগুলোরই জন্ম হয় ইয়াহূদী-খ্রীষ্টানদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, হিন্দুত্ববাদের প্রভাবে এবং মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞানতার ফলাফল হিসাবে; কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের শিক্ষার সাথে যাদের দূরত্ব ইসলাম-অনৈসলামের মতই ব্যাপক। এসবের প্রতিটি ফেরকা বা দল সম্পর্কে কিছুমাত্র বলতে গেলেও পরিপূর্ণ একটি লেখার দাবী রাখে অন্ততঃ। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে বলার কথা এই যে, ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব এসব জঞ্জাল থেকে ইসলামকে বিশুদ্ধভাবে মুসলমানদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন; তিনি অবশ্যই ইসলামের একটি সঠিক খেদমত করেছেন।
6) আল্লাহ্র কাছে পেঁৗছা বা তাঁর সানি্নধ্য পেতে হলে তিনি যেভাবে বলেছেন, একমাত্র সেভাবেই সম্ভব। অন্য কোন মাধ্যমে সে প্রচেষ্টা করাটা নিতান্তই অযৌক্তিক ও অজ্ঞানতা ছাড়া আর কিছু নয়। এ ব্যাপারে তাঁর বাণী আল-কুরআন ও তাঁর রাসূলের সহীহ্ হাদীসেই সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে, এর বাইরে কেউ কোন পন্থা অবলম্বন করে যদি প্রচার করে বেড়ায় যে, সে তার প্রভূ পর্যন্ত পেঁৗছে গেছে, তাহলে তার এ পেঁৗছানোকে ইবলীসের দরবারে পেঁৗছানো ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে। এছাড়া দুষ্ট জিনদেরও তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষকে নিজেদের গোলাম বানাবার মত শখ থাকতেই পারে।
7) আল্লাহ্র ইবাদাতের সময়ে তো অবশ্যই বরং অন্য সব সময়েও যাবতীয় চাওয়া শুধুমাত্র আল্লাহ্র কাছেই চাইতে হবে, তারপর বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী লেন-দেনে, দেয়া-নেয়া ইত্যাদিতে প্রয়োজন মত মানুষের কাছে যেতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো জুতোর ফিতাটি ছিঁড়ে গেলেও সে ব্যাপারে আল্লাহ্র নিকট আবেদন করতে বলেছেন। সুতরাং ইবাদাতে এবং দো'আয় একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কাছেই মাথা নত করা যাবে না, একত্ববাদের পরিচয় তো এখানেই দিতে হবে।
8) কবর, মাযার ইত্যাদিতে যাওয়ার ব্যাপারেও ইসলামের বিধান সুস্পষ্ট। কবর যিয়ারত করা যাবে শুধুমাত্র আখেরাতকে স্মরণের উদ্দেশ্যে, অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না, কবরবাসীর জন্য দোআ করার জন্য কবরের পাশে যাওয়া শর্ত নয় বা এতে বিশেষ কোন মাহাত্ম্য নেই; বরং ভ্রান্তির সম্ভাবনায় ভরা। এ জন্য যিয়ারতের উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়ার বা সফর করার ব্যাপারে তিনটি স্থানকেই মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ 'তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের দিকে (ইবাদাতের জন্য) সফর করা যাবে না; মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ (মসজিদুন্ নব্বী) ও মসজিদুল আকসা (বায়তুল মোকাদ্দাস)'।
[বুখারী ও মুসলিম] উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র দেখার জন্য যাওয়াটা ভিন্ন ব্যাপার, কারণ তাতে ইবাদাতের উদ্দেশ্য থাকে না।
আরো অনেক কিছু থাকলেও এ বেলা আর ধৈর্য নেই, পরে কখনো এসে যাবে হয়তো, তবে 'ওয়াহ্হাবী' -বিষয়টি নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছা রাখি। বলা প্রয়োজন মনে করছি যে, জনাব শোমচৌ সাহেবের আহলে হাদীস সংগঠন প্রসঙ্গে- মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব যে মেজাজ ও মননের মাধ্যমে ইসলামের সংস্কার প্রচেষ্টা করেছিলেন বর্তমান আহ্লে হাদীসের মধ্যে তা অনুপস্থিত, যার অনেকটা উদাহরণ মিলে যায় তাদেরই কথায় যে, হানাফী মাঝহাবের অনুসারীগণ ইমাম আবু হানিফার সত্যিকারের অনুসরণও করছে না; বরং নিজেদের খেয়াল-খুশী ও মেজাজকেই প্রাধান্য দিচ্ছে বেশী। সর্বোপরি আমাদের স্রষ্টা প্রদত্ত ইসলামের চিরন্তন সরল পথই আমাদের সকলের কাম্য, আল্লাহ্ আমাদেরকে তাঁর সরল-সহজ পথ দেখান এবং তা বুঝার তৌফীক দান করুন ও সে পথে আমৃতু্য অটল-অবিচল রাখুন।
...................................... আমীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।