সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
আমাদের পাড়ার দুই হাজী সাহেব। বগা হাজী আর ঠেঙ্গু হাজী। দুই ভাই। থুতনিতে ছাগলের দাড়ীর মতো কিছু ঝুলছে, আর মাথায় গোল টুপি। চেহারায় নুরানী আলো, তবে এই আলো যখন কালো হয়, তখন সামনে আসার সাহস কারোই হয়না।
মসজিদে সবসময় ইমাম সাহেবদের পেছনের জায়গাটা এনাদের জন্যে বরাদ্ধ। কেউ ভুল করে দাঁড়ালেও সাথে সাথে খালি করে দেয়। ইমাম সাহেব নিজে সামনে থেকেই কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকেন। তারাবী নামাজের পর 'সালাতুল বেতের' বলে যখন হাঁক ছাড়েন, তখন পিলে চমকে ওঠে অনেকের।
পাড়ায় এদের ভয়ে বাঘে-মোষে একঘাটে পানি খায়।
কারো বাড়ীতে মিলাদ হলে এরা আসেন, কেউ মারা গেলে আসেন, সীমানা নিয়ে কাইজ্জা হলেও আসেন দুই ভাই মিলে, ডাকলেও আসেন, না ডাকলে ডাকা হলোনা কেন, তা জানতে আসেন। পাড়ার পুরো বস্তিবাসীরা তাদের ভাড়াটে। সে জোরে তাদের কব্জি বড়ই শক্ত। এদের ঘাটানোর সাহস হবে কার !
মাঝে মাঝে পাড়াতে হই চই বেঁধে যেতো। সবার মুখ ভয়ে পাংশু।
কেউ ভয়ে ঘর থেকেই বেরোয় না। বাচ্চাদের তো একেবারেই নিষেধ। কারন কি ? কারণটা হলো, এক ভাই আরেক ভাইএর সাথে ঝগড়া করে মদ খেয়েছে। আর তাতেই রাস্তার এক মোড় থেকে আরেক মোড় অবধি হুংকার আর তান্ডব। কয়েকদিন পর আবার পাল্টি ধরে আরেক ভাই।
আর পাড়ার ভালো মন্দ সবাই এই নাটকের সাক্ষী। দেখা গেলো, পরেরদিনই দুই ভাই একসাথে নামাজে। তাদেরকে সালাম দিচ্ছেন ইমাম সাহেব, রায়হান সাহেব, রাব্বী সাহেবদের মতো মানদারী লোক। ঠিক ছেড়ে দেওয়া হলো ইমাম সাহেবের পেছনের লাইনটা।
আমাদের পাড়াতে পুরানো একটা গ্লাস ফ্যাক্টরী আছে।
হাজী সাহেবরাই মালিক। তার পাশে লাগোয়া এক কুড়েঘরে থাকে এক মহিলা। চেহারা সুন্দর, গায়ের রং ফরসা- কেউ কেউ বলে মহিলা নাকি অরিজিন্যালী পাকিস্তানী। তার জীবিকা নির্বাহ কিভাবে চলতো, তা নিয়ে অনেকে ভাবলেও মাথা ঘামাতে সাহস পেতোনা। ওই মহিলা হঠাৎ দেখা গেলো পোয়াতী।
পাড়ার লোকজন দুই হাজী সাহেব ভাইকে নিয়ে কানাঘুষা করে। সুন্দর এক বাচ্চার জন্ম হলো পাড়ায়। মহিলাকে বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় পাড়ার বাড়ীতে বাড়ীতে।
অনেক বছর হলো পাড়াটি ছেড়েছি। হাজী সাহেবরাও নাকি স্বর্গে জায়গা করে নিয়েছেন।
ওনাদের সুযোগ্য স্বীকৃত ছেলেরা এখন পাড়ার মাতবর। একজন প্রায় প্রতিবছরই ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার। প্রতি বছরই দল পাল্টাতে তার জুড়ি কেউ আছে বলে আমার জানা নেই। কথিত পাকিস্তানী মহিলার কি হলো জানিনা। তবে তার ছেলেটা নাকি সন্ত্রাসী দের শীর্ষে বেশ সুনাম করেছে।
এতদিনে হয়তো র্যবের হতে ক্রশফায়ারে ইন্তেকাল করেছে। আমি এই দুই হাজী সাহেব, বগা হাজী আর ঠেঙ্গু হাজী ও তার সন্ত্রাসী ছেলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তবে সে স্বর্গে ওদের স্থান হয়েছে, ওখানে কখনোই যেতে চাইনা আমি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।