জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
সত্য পৃথিবীর অনেক সুন্দরের মধ্যে একটি সর্বোত্তম সুন্দর। সত্যের বসবাস অন্তর থেকে অন্তরে। কি মানুষ কি পশু-পাখি-পতঙ্গরাজি, অন্তর মানেই সত্যের গৃহ-সুন্দর। সে গৃহসমূহের সবক'টিতেই সবটুকু উজ্জ্বলতা নিয়ে বিরাজ করছে সত্যের আলো; এটাই এখানে অসত্য, অসম্ভব, অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্ধকারের প্রভাবেই আলো এত উজ্জ্বল, মিথ্যার অশান্তির মাঝেই তো তাই সত্যে এত প্রশান্তি।
কিন্তু সত্যের জন্মস্থান, বেড়ে উঠা, পরিপক্কতা এবং মৃতু্যও ঘটে এই অন্তরের পৃথিবীতেই; যা আমাদের দৃষ্টি-সীমানায় অদৃশ্য, কিন্তু জ্ঞানের চিরন্তন দাবী সত্য সত্যই এবং বাস্তব। সত্যের প্রকাশ-সৌন্দর্য আমরা অবলোকন করি কথায় এবং কাজে। মানুষ ভিন্ন অন্য প্রাণগুলোর ভাষা বুঝার সাধ্য আমাদেরকে দেননি স্রষ্টা, তাই আচরণে আর কাজেই হয় তাদের সাথে আমাদের কথপোকথন। বলতে লজ্জা নেই যে, এক্ষেত্রে তারা অনেকাংশে, সত্যি বলতে কি প্রায় সর্বাংশেই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তারা বলে বুঝাতে পারে না; কিন্তু আচরণে বুঝিয়ে দেয়- আমি সত্যবাদী আর আচরনের সত্যবাদীতায় নির্ভরতা বাক-সত্যবাদীতার চাইতে প্রবল, নিঃসন্দেহ।
ভাষার সৌন্দর্যে সৃষ্টির মাঝে মানুষই সেরা, যেমনটি সেরা আকৃতিতে, গঠনে। কিন্তু মানুষের এই সেরা পদবীটি নির্ভর করছে আরেকটি সৌন্দর্যের পূর্ণাঙ্গতায়; আর তা হলো সত্যবাদীতা। কারণ, সত্যবাদীতাই জন্ম দেয় সদালাপ, সততা, সৎকাজ, সত্যাশ্রয়ী অন্তরের, যা কিনা আমাদের এই পৃথিবী নামক পরিবারের বা রাষ্ট্রের একজন সুযোগ্য সদস্য, সফল নাগরিক হওয়ার জন্য একান্ত অপরিহার্য এবং যার ব্যাপারে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সুস্থ বিবেকবান একমত। একারণেই সুদর্শনের অপব্যবহারের চাইতে কুশ্রীর মিষ্টালাপই আমাদের মন ছোঁয়, বন্ধুত্ব আনে, ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় করে। উল্লেখ্য যে, কপট মিথু্যকের মিষ্টাভিনয় মঞ্চে পালা চলতে থাকা পর্যন্তই, মঞ্চ ভাঙ্গলো তো তার ভিতও ভাঙ্গলো।
ঐন্দ্রজালের সূতো বড়ই দুর্বল!
বাকী রইলো যোগ্যতার প্রশ্ন, স্বল্প-বিস্তর যোগ্যতার সমন্বয়ই মানুষের জীবন, সৃজন। হোক তা ভাল কিংবা হোক মন্দ, যোগ্যতা যোগ্যতাই। পার্থক্য সূচিত হয় ব্যবহারে; সত্যাশ্রয়ী যোগ্যতার সাথে মেশাবে তার সত্যবাদীতা, যার ফলাফল সর্বদাই কল্যাণকর হয় আর মিথ্যাশ্রয়ী যোগ্যতার সাথে মিথ্যার বিষ-দ্রবণ তৈরীতে ব্রত নিরন্তর। ইতিহাস তখন কথা বলে- মিথ্যাই সকল পাপের জননী, পৃথিবীর সকল ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা কোন না কোন যোগ্য মিথ্যাবাদীর চিন্তায়, কর্মে; সত্যবাদী তখন হয়ে যায় অবস্থার শিকার, যার পরিণাম শুধুই অপ-মরণ কিংবা মহাজীবন লাভ।
মানব-অন্তরের অধিকাংশই সত্যের পক্ষে, অজ্ঞানতা-পরিবেশ-সবলে ভয়, জানা-অজানায় এসবই তাকে বাধ্য করে তার যোগ্যতার সাথে মিথ্যার সুসম্পর্ক ঘটাতে।
যোগ্যতার স্রষ্টা সর্বদাই সুন্দর পছন্দ করেন, তাইতো আমরা যেমন চলার পথে দেখতে পাই বিস্তর সরল-সহজ-পরিচ্ছন্ন পথের এখানে-ওখানে পড়ে থাকে দু'একটি কাঁটা, কিছু আবর্জনা, কিছু শুকনো-ঠুনকো ডাল-পালা, তেমনি পৃথিবীবাসীর অধিকাংশ জ্ঞান আর দিব্যদৃষ্টি আমাদের প্রতিনিয়ত একথাই বলে দিচ্ছে যে, এই সুন্দর-সুশৃংখল-পরিপাটি পৃথিবী-পথ তোমাদের সত্যাশ্রয়ী-সৌন্দর্যসেবীদের জন্য, যে যোগ্যতা তোমাদের দেয়া হয়েছে, তার পরিচয় দান কর, মূল্য পরিশোধ কর এখানেই, আপনাপন যোগ্যতাবলে সচেষ্ট হও তোমাদের পৃথিবীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে। আমরা শ্লোগান শুনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সাদা-কালো নির্বিশেষে- 'যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, শান্তি দাও'। অপরপক্ষে, মিথ্যাই অসুন্দর, তাই মিথ্যাশ্রয়ীরা বিস্তৃত পরিচ্ছন্ন পথের এখানে-সেখানে পড়ে থাকা কাঁটা-আবর্জনার মতই, মানুষ ভালবাসা-ঘৃণা উভয়টি দিয়েই সচেষ্ট হয় তাদেরকে পৃথিবী গড়ার কাজে লাগাতে, প্রচেষ্টার ব্যর্থতায় তাই আমরা দেখতে পাই পৃথিবীর আদালত সোচ্ছার হয়, এসব কাঁটা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হয় অধিকাংশ মানুষের চলার পথ পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে, কখনো কারাগারে, কখনো কবরে। কল্যাণের ঘাঁটিতে অকল্যাণের পাওনা এটাই কি সঠিক নয়?
ইচ্ছা-অনিচ্ছায় একটা সত্যই পারে মানুষকে সমূহবিপদ থেকে পরিত্রাণ দিতে কিংবা পারে জীবনের সঠিক মূল্য পরিশোধ করতে। কখনো কখনো আপাতঃদৃষ্টি সত্যাশ্রয়ে বিপদ-অকল্যাণের কালোমেঘ দেখতে পায়; বস্তুবাদী তখন ঝড় উঠার আগেই আপন মনে ভেঙ্গে-চুরে নিঃশেষ, বিশেষজ্ঞগণ বলে থাকেন- মৃতু্যর আগেই তাদের হাজারো মরণ আসে অহরহ; বস্তুতঃ তা এভাবেই কারণ, জ্ঞানেন্দ্রিয় আর অন্তদর্ৃষ্টিই শুধু দেখতে পায় ঐ কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সোনালী সূর্যকে।
বুকটান সাহসী সত্যাশ্রয়ী স্বীয় সত্যবাদীতায় অটল পর্বত, কে আছে সাধ্যশালী টলায় তাকে? ধ্বংসযজ্ঞীরা ভেঙ্গে ফেলে তার হাড়-গোড়, কবর পায় না তার প্রাণহীন দেহ, খুঁজে পাওয়া যায় না তার দেহাবশেষ, কিন্তু ইতিহাসের পরিবারে সে হয়ে থাকে চির অমর সদস্য। যদি হতো পৃথিবী চিরন্তন, তো ছিল ভাবনায় হার-জিতের প্রশ্ন। কিন্তু হতর পিছু পিছুই আমরা ছুটতে দেখি হন্তারককে; কখনো অস্ত্র হাতে, কখনো অস্ত্রাঘাতেই। কি নিদারুন এই পথচলা! সত্যাশ্রয়ী তোমাদের জানাই সাধুবাদ, জীবনে-মরণে তোমরাই সফল, আমাকেও রেখো তোমাদের দলে- এইটুকু চাওয়া রাখি আমরণ, দেবে তো?
পাপের জননী পাপের জন্ম দিয়ে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তথাপি কি হলো বিবেকগুলোর যে, একটা পাপ করেই আশ্রয় নেয় মিথ্যার, জন্ম নেয় আরেকটি পাপ এবং সম্পাদিত হয়, এভাবেই চলতে থাকে বংশবিস্তার।
অপরাধ অথবা হত্যার সূত্রপাত যেভাবেই হোক না কেন, প্রথম শুরু মিথ্যাশ্রয় থেকে, যে দেখলো তাকেও শেষ করা হয়ে উঠে অনিবার্য, হলো দ্বিতীয় পাপ, এখানেও থেকে গেল কিছু নিদর্শন, সুতরাং তাকে নিঃশেষ কর, এই ধ্বংসলীলা চলতে থাকে তখন বংশ পরম্পরার মতই। দক্ষ মিথু্যক হওয়ার সাধনায় মেতে উঠে যোগ্য অন্তরের অনেকগুলো, কেউ কেউ উতরে যায়, কেউ হয় বিফল, অবশেষে বলে- হয়তো সত্যই ভাল। এখনো আহ্বান রাখি- ফিরে এসো, বেরিয়ে এসো লোভ, হিংসা, মিথ্যা-চক্রান্তের নিশ্চিদ্র অন্ধকার গূহা থেকে, আলোকিত পৃথিবীতে এখনো সূর্য উঠে, জোৎস্না হাসে, মানুষ মানুষকে ভালবাসে, সত্যের পথে-প্রান্তরে।
[প্রেরণা জাগানোতে ধন্যবাদের কিয়দাংশ পাওনা- 'অতিদক্ষ মিথু্যক না হলে সত্যবাদীতা উৎকৃষ্ট পন্থা'-এর]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।