শৈশব পেড়োনো এক সদ্য কিশোর। সবেমাত্র টুকটাক পাড়ার ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করেছে। স্কুল আর ঘরের বাহিরেও যে একটা জীবন আছে সেটা যখন সে জানতে পারল খুব অবাক হল। তাঁর ধারণা ছিল মানুষ যখন বড় হয়ে বিয়ে করে তখনই সে বাহিরের পুরুষদের সাথে মিশতে পারে। তার আগে না।
ছোটরা সারাদিন ঘরেই থাকে। পড়ালেখা করে। ভাই,বোনদের সাথে ঝগড়া করে।
আরো অবাক হল যখন সে দেখতে পেল সপ্তাহখানেকের মধ্যে প্রায় পনের বিশজন নতুন ছেলের সাথে তাঁর পরিচয় হয়ে গেছে। ছেলেগুলো এই গ্রামের।
তাঁরা যে একই গ্রামের তা সে জানতনা। কখনো দেখেও নি। শুধুমাত্র স্কুলের ছেলেদের ছাড়া সে কাউকে চিনেনা। সেই অপরিচিত ছেলেরা যখন তাঁকে "দুস্ত" বলে ডাকে তাঁর খুব লজ্জা লাগে। "দোস্ত" আবার কি? তাঁর একটা নাম আছে।
নাম ধরে ডাকলেইতো হয়। তা ডাকবেনা। । এমন নির্লজ্জ। সেই অপরিচিত ছেলেদের দল তাঁকে "তুই" সম্ভোধন করে।
অল্প পরিচয়ে একজন অন্যজনকে তুই বলতে পারেনা। তুমি করে বলতে হয়। সেটা তাঁরা জানেনা। ওদের সাথে মিশলে সেও ওদের মত হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু করার নেই।
ওদের সাথে মিশতে কিশোরটির খুব ভাল লাগে। যে কয়দিন সে ওদের সাথে মিশেছে সে কয়দিন ওরা যা মজার মজার কাণ্ড করেছে। গাছ থেকে আম চুরি করে খেয়েছে। পাখির বাসা থেকে পাখির ডিম পেড়ে তা ফাটিয়ে দেখেছে ভিতরে কি আছে। সবচেয়ে মজার এবংভয়ংকর কাজটা হল সবাই মিলে একদিন বিড়ি টেনেছে।
তাদের দলের একটা ছেলে একদিন সবাইকে ডেকে গম্ভির মুখে বলল। "আজ আমরা নদীর পাড়ে যাব, কে কে যেতে চাও বল। এখনি বলতে হবে। পরে বললে হবেনা। "
আট-দশজনের দলের মধ্যে মাত্র দুজন রাজি হল নদীর পারে যাবে।
অন্যরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল তাঁরা যাবেনা। নদীর পাড়ে মজা নাই। তারচে বরং গাছের ডালে ঝুলে বানর-বানর খেলাই অনেক আনন্দময়।
যে ছেলেটি নদীর পাড়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছিল তাঁর মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুখের গম্ভিরতা আরো একটু বাড়িয়ে বলল "আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনব, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যাবে নাকি যাবেনা। পরে বললে হবেনা। আমরা সঙ্গে নেবনা।
সে আধা ঘন্টা সময় নিয়ে এক থেকে তিন গোনা শেষ করল। তবুও কারো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলনা।
উপায় না দেখে ছেলেটি পকেট থেকে একটা বিড়ির প্যকেট বের করে সবাইকে দেখাল। সবার চোখে কৌতহল "এটা কোথায় পেয়েছিস?"
"বলা যাবেনা। আমরা দুইজন এখন নদীর পাড়ে গিয়ে এগুলো খাব। "
"আগুন পাবি কোথায়?"
"ম্যচ আছে, রান্নাঘর থেকে চুরি করেছি। "
নিষিদ্ধ কর্মের উত্তেজনায় দশ জনের পুরো দলটাই কাপছে।
সবারই ইচ্ছা করছে জিনিষটা একটু চেখে দেখা। খেতে কেমন। কিন্তু ভয় আর লজ্জায় কিছু বলতেও পারছেনা। এতক্ষন বলেছে যাবেনা, এখন কি করে বলে আমরাও যেতে চাই। একটা লজ্জার ব্যপার না।
বিড়ির প্যকেটের মালিক পকেটে বিড়ির প্যকেট ঢুকিয়ে হাটা শুরু করল। দশজনের দলও তাঁর পিছু নিল।
বিড়ির মালিক বালক বিরক্ত কন্ঠে বলল "কি ব্যপার তোরা কোথায় যাচ্ছিস? এতক্ষনতো বড় বড় কথা, যাবেনা। এখন আসছিস কেন আমাদের পিছু?"
একজন কোমল কন্ঠে বলল "আমরা কি মানা করেছি নাকি যাবনা। এক থেকে তিন বলা পর্যন্ত সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় নাকি।
এক থেকে দশ হলেও একটা কথা ছিল। আবার গোন। "
সবাই মাথা নেড়ে তাতে সম্মতি দিল। বাধ্য হয়ে বিড়িওয়ালা বালক আবারো গুনতে শুরু করল। এক বলার সাথে সাথেই সময় নষ্ট না করে সবাই হাত তুলল।
বালকের দল নদীর পাড়ে গিয়েছিল। নির্জন একটা জায়গাও খোঁজে পেয়েছিল। কিন্তু বিড়ি টানতে পারেনি। নদীর পাড়ে প্রচণ্ড বাতাস। বাতাসের কারণে ম্যাচের সবগুলো কাঠি নষ্ট করেও আগুন ধরাতে পারেনি।
কি আর করা, নদীর পানিতে পায়ের পাতা ডুবিয়ে সদ্য কিশোর দশটা ছেলে আগুন বিহীন বিড়ি টেনে বাড়িতে চলে আসল।
গল্পের মোরালঃ ম্যচ থাকলেই আগুন ধরানো যায়না। বুদ্ধিও লাগে..)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।