ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না আমি এতদিন মনে করতাম পাশ্চাত্যের ছেলেপুলে সব সময় মাস্তিতে থাকে, gf/bf কে নিয়ে মনের ক্ষুধা,যৌবনজ্বালা প্রশমনে একে অন্যের মাঝে মিশে আদিম কামনা-বাসনায় আত্নহারা হয়ে যায় তাই বুড়ো বাপ-মায়ের যত্ন নেওয়ার মত তাদের হাতে এত সময় কৈ !
ব্রিটিশ আর আমেরিকান ২ হাউজমেটকে দেখে সে ধারনা পাল্টে গেল। আসলে দোষ মূলত তাদের বাপ-মায়ের।
গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দেড় মাসের জন্য আমেরিকান রেসিডেন্ট হাউজমেট তার ফ্যামিলির কাছে লুজিয়ানা স্টেটে বেড়াতে গিয়ে খাবার ডাইজেস্ট প্রবলেমের কারনে অসুস্হ হয়ে হসপিটালে এডমিশন নেয়। প্রবলেমটা নাকি বেশ জটিল ছিল। সে যেহেতু চীনে বৃত্তি নিয়ে পড়ালেখা করছে তাই তার এ্যামেরিকান হেলথ্ ইন্সুরেন্স নেই।
সে ৬ বছর ধরে দেশের বাইরে এজন্য এ্যামেরিকান হেলথ্ ইন্সুরেন্স করার দরকারও হয় নি। ফলশ্রুতিতে হসপিটালে বিল আসছে অনেক, ওষুধের নাকি অনেক দাম, সবমিলিয়ে ১০ হাজার ডলার। এই টাকা পরিশোধ করার জন্য অনলাইনে কাজ খোঁজা শুরু করে, প্রথমে সে উল্লেখ করেছিল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এখন এমএস করতেছে কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না। অবশেষে শ্রেফ একজন লেবার হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরে কোকাকোলার ফ্যাক্টরীতে প্যালেট বানানোর মিস্ত্রি হিসেবে কাজ পায়। ২১ দিন কাজ করার পর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কারন একেতো শরীর পুরোপুরি সুস্হ নয় তার উপর বেশ পরিশ্রম সাধ্য কাজ।
হসপিটালের বিল দিবে তো দূরের কথা নিজে চলার টাকা জোগাড় করতে সপ্তাহে ১দিন করে পরপর ৩ সপ্তাহ রক্তের প্লাজমা বিক্রি করে। ১ প্যাকেট হলুদ রঙের প্লাজমার জন্য ১ঘন্টা ধরে রক্ত দিতে হয় এবং এজন্য ৪০ ডলার পাওয়া যায়। এরকম ৩ সপ্তাহ চলার পর কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি UPS এর লজিস্টিকস্ বিভাগে জব পেয়ে সাড়ে ৪ মাস কাজ করে হসপিটালের বিলের আধেক পরিশোধ করে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসছে। তার আইনজীবি বলেছে যেহেতু সে ছাত্র তাই ৫০% ছাড়ের চেস্টা করবে, যদি কাজ না হয় তাহলে প্রশাসন এটাকে ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা করবে, নেক্সট টাইমে দেশে গেলে পুলিশ পাকড়াও করবে।
তার বাপ-মা হসপিটালের বিল দেওয়া তো দূরের কথা তার হাত খরচও দেয় নি।
এমন না যে তাদের দিন আনতে পানতা ফুরায় অবস্হা। বাপে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, নিকারাগুয়াতে চাকরি করে; মা ইউএসএর লুজিয়ানাতেই জব করে।
আমাদের সমাজের বাপ-মা তাদের সন্তানদের জন্য কিনা করে ! আমাদের গ্রামের এক মেয়ের সিজার করতে হবে, হাসপাতালের গাইনি ডাক্তারদের তো আবার মুখস্ত ডায়ালগ- মা-বাচ্চার অবস্হা খুব খারাপ, সিজার না করলে রোগী বাঁচানো যাবে না! ঐ মেয়ের স্বামী খুবই দরিদ্র, সে হঠাৎ করে ১৪ হাজার টাকা কৈ পায়, তখন তার হতদরিদ্র বাপ ভরা গরু [কয়দিন পর বাচ্চা দিবে/ বিয়াবে] বিক্রি করে দেয়। কত ত্যাগ স্বীকার!
এই আমেরিকান রেসিডেন্ট হাউজমেট যখন হাইস্কুলে পড়ত [আমাদের দেশের হিসেবে কলেজ] তখন অড জব হিসেবে মানুষের বাসায় মিস্ত্রী [টাইলস্ প্লাম্বিং ওয়ারিং বা কারেন্টের মিস্ত্রী] হিসেবে কাজ করত। অথচ আমি চাকরি পাওয়া অবধি বাপ-মার কাছ থেকে তো নিছিই এমনকি চাকরী পাওয়ার পরেও একবার অসুস্হ হয়ে ইবনে সিনাতে এডমিশন নিছিলাম তখন খবর পেয়ে তারা টাংগাইল থেকে ঢাকায় চলে আসছে দেখতে আর হাঁ সাথে নগদ টাকা নিয়ে আসতেও ভুলে নি! আমি যখন এটা চিন্তা করি তখন বাপ-মার উদ্দেশ্যে মাথা এমনিই নত হয়ে যায়।
ইংলিশ হাউজমেট ভেকেশনে ২ মাসের জন্য বাড়ি যাওয়ার সময় বলে- আমি সাথে যে কয় ইউয়ান নিয়ে যাচ্ছি তাতে ১ সপ্তাহ যাবে, এরমধ্যেই একটা জব খুঁজে নিতে হবে নাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। তার বাড়ি oxford শহরে, প্রথম পরিচয়ের দিন তাকে ইংল্যান্ডের কোথা থেকে আসছে জিজ্ঞেস করতে বলেছিল oxford থেকে! উওর শুনে আমি হতবাক হয়ে গেছি! কিরে oxford থেকে ব্যাচেলর করে চীনে আসছে এমএস করতে ! পরে শুনি oxford নাকি একটা শহরের নাম, শহরের নামেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।
বাড়িতে অবস্হানকালীন সময় নিজের খরচ মেটাতে তাকে বাচ্চাদের একটা মুসলিম স্কুলে কাজ করতে হয়! আমাদের সমাজে কি কেউ এটা কল্পনা করতে পারে, ছেলে বিদেশ থেকে এতদিন পরে বাপ-মার কাছে আসছে অথচ খাওয়া খরচের ভারটাও তারা নিতে পারবে না!
সে নাকি যখন স্কুলে পড়ত তখন তার মা সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বলে যেত- তুমি নিজে রান্না করে খেয়ে তারপর স্কুলে যাবা; ঐবয়সে আলস্যের কারনে রান্নাও করত না, সকালে এমনকি টিফিনের সময়ও খেত না। একেবারে স্কুল ছুটি শেষে বন্ধুদের সাথে একত্রে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেত। তার মা ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে সরকারি চাকরি করে আর বাপে wedding photographer.
সে অনেক দেশে বেড়াইছে, এই বেড়ানোর টাকা নাকি সে বিভিন্ন অডজব করে কামাইছে, ফ্যামিলি থেকে দেয় নি।
আমার কাছে বাংলাদেশের সমাজে সন্তানদের জন্য বাপমায়ের আত্নত্যাগের কথা শুনে ওরা খুব, খুবই অবাক হয়। এদের বাপ-মা যে খরচ দেয় না, এজন্য তাদের কোন আফসোস আক্ষেপ নাই, আমার মনে হয়েছে এরা এটা প্রত্যাশাও করে না। তাই তারা যে তাদের বুড়ো বাপ-মায়ের পিছনে খরচ করে না, এর পেছনে যথেস্ট যৌক্তিকতা আছে। তোমরাও আমাদের খোঁজ নেও নাই, আমরাও নেব না।
আমাদের দেশে যদি কোন কারনে বাপে টাকা না দিছে তাইলে সেই মাপের ঝগড়া এমনকি মারামারি শুর হয়; টাকা দিবি না মানে, দিতে হবে, পয়দা করার সময় মনে ছিল না যে সন্তানের যাবতীয় খরচ বাপ-মায়ের বহন করতে হয়।
আমি আগে ভাবতাম ইস্ আমার যদি পাশ্চাত্যের ঐসব দেশে জন্ম হইত! আহ্ তাগো কি আরামের লাইফ! খালি এনজয় আর এনজয়!
রোজার সময় ইফতারের ১৫ মিনিট পরে মসজিদে জামাত শুরু হইত। ইফতার হিসেবে আম্মা বুট/ছোলা সাথে মুড়ি আর মাঝে মাঝে ডালের বড়া করতো, টাকা পয়সার সমস্যার কারনে অন্য কোন আইটেম থাকতো না। একদিন ইফতারের টাইমে আমি বাপরে বলছিলাম মসজিদের হুজুর হুদাই ১৫ মিনিট পরে নামাজ শুরু করে, আমরা খাই ই খালি বুট আর মুড়ি! এটা শুনে খুব মন খারাপ করে বাপ শুধু এটুকু বলছিল- যা পাইতাছস্ তাতেই খুশি থাক্
হাউজমেটদের জীবনী শুনে এখন আমার মনে হয় আমার ভাগ্য অনেক ভাল যে বাংলাদেশে আমার জন্ম হইছে, বাপ-মায়ের টাকা থাকা সত্বেও নিজের খোরাকির জন্য কোনদিন রক্ত বেঁচতে হয় নি, ভেকেশনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি গিয়ে কোনদিন অডজব করতে হয় নি হাত খরচ যোগাতে।
যেহেতু তারা আমার জন্য অনেককিছু করেছে সুতরাং প্রতিদান হিসেবে আমারও উচিত তারা বুড়ো হলে তাদের জন্য কিছু করা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।