shamseerbd@yahoo.com
কোথাও যাওয়া আসার জন্য ৫০০-৬০০ টাকা সিএনজি ভাড়া দেয়া আর বিলাসিতার মাঝে পার্থক্য আসলেই কম,যদিও আমরা এখন এটাতে বাধ্য হয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি । কেউ চাইলেই বলতে পারেন এই বিলাসিতা ত্যাগ করে পাবলিক বাসে ট্রাই করুন। সে চেস্টাও করেছিলাম, নিজে একা যেতে হলে তাই করি, কিন্তু বউ বাচ্চা নিয়ে একদিন করতে গিয়ে করুন পরিস্হিতির মুখোমহুখি হতে হয়েছিল, মানুষ জন মোটামুটি গায়ের উপর এসে পড়ছে,গরমে ছেলে কেঁদে কেটে অস্হির ! তারপর থেকে পরিবার সহ সে চেস্টা বাদ ।
ঢাকা শহরের সব চেয়ে বিলাসী সেবার তালিকায় এই সিএনজি শুরুতেই থাকবে। টাকা দিলেই যে এই সেবা পাওয়া যায় তাও না, সেবাদাতার ইচ্ছার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল আপনি সেবা পাবেন কিনা ।
মাঝে মাঝেত হাতে পায়ে ধরাটাই বাকি থাকে । পৃথিবীর আর কোন দেশে ট্রান্সপোর্ট সেবার জন্য এমন করতে হয় কিনা আমার জানা নেই ।
মিটারে যে ভাড়া ৭০ টাকা আসবে সেটাতে ১৫০ টাকা দিলেও অনেক ড্রাইভারই যেতে রাজি হয়না, নানা অনুনয় বিনয় করতে হয় তাদের সাথে, সিএনিজি ওয়ালাদের কে যত তোয়াজ আমরা করি তা এই দেশে আর কারো সাথে করা হয় বলে মনে হয়না, তাদের মত এত ভাব নিয়ে আর কেউ থাকে বলেও মনে হয়না । মোটামুটি ডাবল ভাড়া গুনতে হয় প্রায় সব গন্তব্যের জন্যই ।
কোথাও যাওয়ার জন্য কেউ রাজি হলে সাথে একটা শর্ত জুড়ে দেয় , পুলিশ ধরলে বলতে হবে মিটারে যাচ্ছি ।
ভাড়াও বেশী দিব আমি, আবার মিথ্যা কথাও বলব আমি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য অগত্যা এই মিথ্যা বলার আব্দার মেনে নেয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই ।
কয়েকদিন আগের ঘটনা, নতুন বাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য, ট্রাফিক পুলিশকে দেখলাম একটা একটা সিএনজি থামিয়ে জানতে চাচ্ছে মিটারে যাচ্ছে কিনা, যাত্রী যদি বলে না তবে ড্রাইভারকে নামিয়ে মামলা দেয়া হচ্ছে, আর যাত্রীকে অন্য সিএনজি মিটারে ঠিক করে দিচ্ছেন। এগিয়ে গিয়ে বললাম, এখন না হয় আপনারা আছেন বলে যাত্রীরা মিটারে যেতে পারছে কিন্তু অন্য সময় হলে কি হবে ? সার্জেন্ট বলল আমাদেরকে কেউ বললে আমরা চেস্টা করি মিটারে সিএনজি ঠিক করে দেয়ার জন্য এর বেশী আর কি করতে পারি বলুন। তিনি দেখলাম বেশ কয়েকজনকে সিএনজি ঠিক ও করে দিচ্ছেন।
যাত্রী হিসেবে আমি নিজেও বেশ কয়েকবার মিথ্যা কথা বলেছি যে মিটারে যাচ্ছি, তাড়া ছিল তাই ঝামেলা এড়ানোর জন্য অন্য উপায় ছিলনা !!!
অদ্ভুত এক সিস্টেমের মাঝ দিয়ে যাচ্ছি আমরা, সিএনজি ড্রাইভারদের কথা হচ্ছে মালিকরা নির্ধারিত জমার চেয়ে বেশী টাকা নেয়, তাই আমরা বাধ্য হয়ে ডাবল ভাড়া নিচ্ছি, মালিকরা বলেন খরচ বেশী, লাইসেন্স নিতে গিয়ে আমাদের অনেক খরচ হয়ে গেছে, তাই বেশী নেয়া ছাড়া উপায় নেই । এই চক্র ভাংগার কোন লক্ষন ও নেই। যার পুরোমাত্রার ভুক্তোভুগী আমরা সাধারন যাত্রীরা । আমাদের কথা শোনার জন্য কেউ নেই। মাঝে মাঝে ভাবি ধরিয়ে দেই , যা ভাড়া চায় রাজি হয়ে যাব, তারপর পথে সার্জেন্ট দেখলে ধরিয়ে দিব।
পরে ভাবি, এটা কোন সমাধান না, মাঝখান দিয়ে পুলিশ কিছু টাকা কামাবে হয়ত, পুলিশের উপর যে আস্হা নেই আমাদের, কিংবা না থাকার হাজারো কারন আছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ইট দিয়ে সামনের গ্লাসটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিই, কপাল ভাল ওদের গ্লীল দিয়ে ঘেরা থাকে নাহলে নিশ্চিত প্রতিদিন বেশ কিছু ড্রাইভার মারধরের শিকার হত ।
পরিবার পরিজন সহ কোথাও যাওয়ার জন্য বের হওয়া রীতিমত আতংকের, সিএনজি পাব কিনা, বাজেটের মাঝে যাবে কিনা । আমাদের মুক্তি নেই, আমরা খালি ভুক্তভুগী হবো এটাই নিয়তি.............মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ইট দিয়ে সামনের গ্লাসটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিই, গ্রীল না থাকলে কয়েকটা ড্রাইভারকে যে পিটাতাম এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি ।
আমাদের ফলে -মাছে ফরমালিন, আমাদের ঔষধে ভেজাল, বাড়ীওয়ালার কাছে নতজানু জীবন, সিএনজি ওয়ালার মুখাপেক্ষী পথচলা, পাবলিক পরিবহনে অস্বাভাবিক অবস্হা, কালোবাজারির হাতে ট্রেনের টিকিট, হাসপাতালে বিশ্বাসহীনতা, সর্বোপরি এক অজানা ভেলায় আমাদের প্রতিদিনের পথ চলা ।
বসবাসের অযোগ্য নগরীতে আমরা সুখের চাদর জড়িয়ে বেঁচে আছি ।
সুখী দেশের তালিকায় নাম দেখে আমরা ভাবি, আরে আমি ছাড়া সবাই মনে হয় সুখে আছে। নিজের চাওয়ার কথা বলতে তাই কুন্ঠা যাগে, কে আবার কখন কি ভাবে, আমি সুখী না পথ চলায়- এটা বলতেও লজ্জায় বাঁধে আমাদের । বিচিত্র- সেলুকাস এগুলো সেকেলে হয়ে গেছে - বিশেষনহীন জীবনের পথ চলা আমাদের, কিংবা বলা যায় একমাত্র বিশেষন হচ্ছে সুখ , আমরা সবাই সুখী ।
সুখ কি এটা মনে হয় আমরা বুঝিইনা, আমরা চাইতেই পারিনা, তাই পাবার আশা করা আমাদের মানায় না ।
নিত্য মিথ্যার মাঝে আমাদের বসবাস, আমরা মুখ ফুটে বলিনা, তাই যারা দায়িত্বে থাকেন তারা আমাদের নিয়ে চিন্তাও করেননা। চাইতে না পারলে পাবার আশা করবো কিভাবে । পথ চলায় সুখের কোন পরশ নেই আমাদের, এই কথা বলতে না পারলে আমরা সুখ পাব কি করে । চাওয়ার কথা বলতে আমরা লজ্জা পাই, তাই আমাদের চাওয়াগুলো পূরন করার দায়িত্ব আমরা যাদের দিয়েছি তারাই সব থেকে সুখে থাকে এই দেশে।
যে দেশে বার বছরে তিনটা সরকার বার হাজার সিএনজি অটোরিক্সা কে কোন নিয়মের মাঝে নিয়ে আসতে পারেনা সে দেশে কোন সরকার যখন নিজেকে সফল দাবী করে তখন আমার হাসি পায়, তাদের সফলতার জন্য কোন কিছু বরাদ্দ করার খুজে পাইনা ..........নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে বলার ও কোন জায়গা নেই আমাদের।
‘’সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে ‘’ - এই গান শুনতে শুনতে কেবল আমরাই বলতে পারি আমরা সুখী । । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।