আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরলিকস,বুষ্ট,মালটোভা,ভিভা ও কমপ্ল্যান (গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন): সবই একচেটিয়া ধান্দাবাজি



বাংলাদেশে যে কয়টা “বোতলবন্দি” শক্তি ও পুষ্টিপণ্য পাওয়া যায় সেগুলো হল-হরলিকস, বুষ্ট, মালটোভা, ভিভা আর কমপ্ল্যান। আপনার মনে হতে পারে এরা একটা আরেকটার বিকল্প/প্রতিদ্বন্ধি পণ্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো কমপ্ল্যান ছাড়া বাকি ৪টি একই কোম্পানির (গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন) প্রস্তুতকৃত পণ্য!!!! বুঝতেই পারছেন “এই প্রতারণার ডোজ” নিয়ে একচেটিয়া মার্কেট (আসলে ধান্দাবাজি) দখল করে রেখেছে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। শুধু হরলিকসই বাজারের ৭৪% দখল করে রেখেছে!!! আর তাইতো মাঝে মধ্যেই ইচ্ছাকৃতভাবে সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিমভাবে চাহিদা বাড়িয়ে নেয় গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। এক-দুই সপ্তাহ পর আবার সাপ্লাই দেয়া শুরু করলেও তা করা হয় দাম ২০/২৫ টাকা বাড়িয়ে।

আসুন দেখে নিই বাংলাদেশের বাজারের এই একচেটিয়া ধান্দাবাজ কোম্পানির বহিঃবিশ্বে অবস্থান কেমন - যুক্তরাষ্ট্রে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের তিন বিলিয়ন ডলার জরিমানা মাসকয়েক প্রতারণার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে তিনশ কোটি ডলার জরিমানা দিয়েছে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। আর এ সংবাদটি প্রথম পাতায় স্থান করে নিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ ও বিবিসির মতো শীর্ষসারির সংবাদমাধ্যমে। বিবি্সিতে আসা নিউজটির কিছুটা অংশ বাংলা রূপান্তর করে দিচ্ছি। ” স্বাস্থ্যসেবা খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতারণার ঘটনাটি ঘটিয়েছে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। আর এ প্রতারণার দায়ে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনকে তিনশ কোটি ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে।

এক সংবাদ বিবৃতিতে জিএসকে নিজেদের ওষুধ প্রেসক্রাইভ করতে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে ডাক্তারদের প্ররোচিত করার দায় স্বীকার করেছে। গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের chief executive Andrew Witty বলেছেন, তাদের বর্তমান ক্যাশ থেকে তারা এ জরিমানা প্রদান করবেন। এ সংবাদটির পুরোটা পড়তে ক্লিক করুন :http://www.guardian.co.uk/business/2012/jul/03/glaxosmithkline-fined-bribing-doctors-pharmaceuticals ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ আসা সংবাদটি আরো বেশি বিস্তারিত এবং আরো বেশি ভয়ঙ্কর… শিশুদের অননুপযোগী ওষুধ antidepressants দিতে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে ডাক্তারদের উদ্ধুদ্ধ করার দায় স্বীকার করলো গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। আর তাই এ প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা গুনতে হচ্ছে তিনশ কোটি ডলার। শুধু তাই নয়, বোষ্টনের একটি জেলা আদালতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের তাদের বাজারজাতকৃত ডায়াবেটিস ওষুধ(Avandia) কতটুকু নিরাপদ-সে তথ্য দিতেও ব্যর্থ হয়েছে।

এ সংবাদটির পুরোটা পড়তে ক্লিক করুন :http://www.guardian.co.uk/business/2012/jul/03/glaxosmithkline-fined-bribing-doctors-pharmaceuticals ডেনমার্কে হরলিকসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ২০১১ সালের মে মাসে হরলিকসকে(এবং হরলিকসের সকল বিপণণকে) নিষিদ্ধ ঘোষিত করা হয়। হরলিকসে কিছু সংখ্যক প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন ও মিনারেল থাকায়(মানে ফরটিফাইড হবার কারণে) ডেনমার্ক সরকার হরলিকস ও ওভালটিনের(বলা বাহুল্য, ওভালটিন ও গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের পণ্য) উপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। (তথ্যসূত্র: Click This Link)। গত ১লা জুলাই মন্ত্রীসভার বৈঠকে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প হিসেবে শিশুখাদ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে সম্মতি দেই সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

এ আইন ভাঙলে কারাদণ্ডের মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। আর জরিমানার পরিমাণ ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের জানান, এ আইনের নাম হবে ‘মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি) আইন, ২০১৩। “এ আইনের আওতায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে মাতৃ-দুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য উৎপাদন ও বিপণন করা যাবে, তবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। ” প্রচার না হলে মাতৃ-দুগ্ধ বিকল্প শিশু খাদ্য কেনা বা ব্যবহারে মা বা পরিবার নিরুৎসাহিত হবে বিবেচনা করেই আইনে এ বিধান রাখা হয়েছে বলে সচিব জানান।

আইনটি পাস হলে নিবন্ধন ছাড়া বিকল্প শিশুখাদ্য উৎপাদন ও বিপণন এবং এ সংক্রান্ত সরঞ্জাম আমদানিও নিষিদ্ধ হবে বলে জানান তিনি। ১৯৮৪ সালের মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য অধ্যাদেশ (The Breast-Milk Substitutes (Regulation of Marketing). Ordinance, 1984) রহিত করে এ আইন করা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, আগে শুধু অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যক্তির শাস্তি হতো। নতুন আইনে প্রতিষ্ঠানকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রথম দফায় শাস্তির পর দ্বিতীয়বারের মতো এ আইন ভাঙলে তার শাস্তি দিগুণ হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও এ ধরনের অপরাধের বিচার করা যাবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

যদিও, বাজারে কিংবা মিডিয়াতে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলোতে এখনো এই আইনের প্রভাব লক্ষ্যনীয় নয়। তাই, অভিভাবকগণকেই এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে সবচেয়ে বেশি। নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যকেও সচেতন করা জরূরী এসব বিকল্প সাপ্লিমেন্ট নামের বিষ খাওয়া থেকে নয়তো এর পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। আর, সরকারের উচিত শুধুমাত্র আইন পাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে এই কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নিয়মিত নজরদারীর পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচার চালাতে হবে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে।

Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।