জয় ইজ ভেরি স্মার্ট বাট ..........
সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনীতিতে অভিষেক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসছেন আবার যেতেও দেরি হয়না। তিনি চাচ্ছেন রাজনীতির মাঠ আয়ত্ত্বে নেয়ার জন্য। রাজনীতিতে চমক দেওয়ার জন্য। তরুণ নেতৃত্ব।
তিনি ইতিমধ্যে তরুণদের নিয়েই বেশি রাজনৈতিক আড্ডা দিয়েছেন। তরুণদের সমর্থন পাওয়ার জন্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও নিয়ে এসেছেন।
এদেশে পরিবার তন্ত্রের কথা বলা হয়। কিন্তু জয় রাজনীতি না করলেই পরিবার তন্ত্রের অবসান হবে এমন কোন কথাও নয়। আবার বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র হিসাবে তিনি রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনও আনতে পারেন।
যেটা তার কথায় বিপ্লব বলা যায়।
তিনি যদি সত্যি এদেশের তরুণদের মনে স্থান করে নিতে পারেন সেটা হলে মন্দ হবে না। কিন্তু তরুণরা কেন তাকে গ্রহণ করবে। এমন কি বিপ্লবের ডাক শুনে তারা তাকে দুহাত তুলে সমর্থন জানাবে। সত্যিকার অর্থে তরুণদের মনে স্থান করে নিতে হলে তাকে এমন কিছু দেখাতে হবে যা আগে কেউ দেখেননি।
কি এমন দেখেননি এদেশের মানুষ। কোন ধরনের সংস্কার বা বিপ্লব। এমন কিছু তিনি দেখাতে পারলে যে কারো পক্ষেই মানুষ থাকবে। সেটা শেখ হাসিনার ছেলে হিসাবে জয়ের জন্য নয়। যে কারো জন্যই তো রাজনীতির মাঠ খোলা।
বরং শেখ হাসিনার ছেলে হিসাবে জয়ের জন্য সুযোগটা বেশি। পরিচয় প্রদানের জায়গা থেকে। কারণ তার জন্য একটা মাঠ তৈরি করা আছে। এমন মাঠে যদি তার সত্যিকার কোন চমক এদেশের মানুষের জন্য থাকে তাহলে জনসমর্থন আদায় করা তার ক্যারিশমারই সফলতা।
এদেশে স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল একটি বিশাল বিপ্লব।
সেটা শুধু ভূখণ্ডগত স্বাধীনতা নয়। সামগ্রিক অর্থে এদেশের মানুষ মুক্তির স্বাধীনতা। মুক্তি চেয়েছিল শোষণ ও দুর্নীতির। যেখান থেকে শুরু হবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। যেখানে ক্ষুধা থাকবে না, দারিদ্রতা থাকবে না।
এদেশের সকল মানুষ সাম্য ও সমতা নিয়ে বেঁচে থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪২ বছরেও সেটা এদেশের মানুষের ভাগ্যে জোটেনি। এটা না জোটার প্রধান কারণ হচ্ছে এদেশে দুর্নীতি। অন্যটি দেশের রাষ্ট্রীয় চেতনা নিয়ে দ্বিধা বিভক্তি।
রাষ্ট্রের চেতনাগত দ্বিধা বিভক্তি দূর করতে হলে এখানে এমন একজন নেতার দরকার যার গায়ে কোন দুর্নীতির ছিটেফোটাও থাকবে না।
এছাড়া সব ধরনের উদ্যোগের ব্যাপারে সন্তোষজনক জবাবদিহি করতে পারবে। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত থাকার পাশাপাশি একজন মোহনীয় ব্যক্তিত্বও হতে হবে। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত ভালোবাসবে। সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি করা। এ বিশ্বাস এদেশে শুধু ৭১ সালে ও তার আগে বঙ্গবন্ধু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
অন্য কেউ পারেনি। এজন্য বার বার ফিরে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে। প্রজ্ঞা বলতে তার ব্যাপক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। যিনি রাজনীতির নাড়ি-নক্ষত্র-ধমনী-শিরা- উপশিরা আত্মস্থ করতে সক্ষম হন। হাজার বছরের বাংলার বহু প্রজ্ঞাবান ও জাদরেল নেতৃত্বকে তিনি পেছনে ফেলে তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন।
বাঙালির জন্য স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে বাঙালিরা হাজার বছর ধরে অন্যের শাসন ও সীমানায় ছিল।
আজকের তরুণ সমাজ কি চায়। আমাদের গতানুগতিক রাজনীতি থেকে তারা কেন বেরিয়ে আসতে চায়। কেন তারা রাজনীতিকে সম্মান করতে চায়না।
এর তো নিশ্চয় একটা কারণ আছে। আমাদের রাজনীতির যে ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে সেটা বহুবিধ কারণেই এ অবস্থার মুখে পড়েছে। এজন্য আওয়ামী লীগ বলবে এক রকম, বিএনপি বলবে আর এক রকম। এই রকমফের থেকে সমস্যাগুলো বাছাই করে আমাদের আসতে হবে দেশের মানুষের মৌলিক চাওয়া পাওয়া ও আস্থার জায়গায়। তার মানে কোন সৎ নেতৃত্ব দেশ পরিচালনায় আসলেই কি দেশের সব মানুষ ওই সৎ মানুষটির পক্ষ হয়ে যাবে।
হ্যাঁ হতে পারে। একটু দেরি হলেও তা সম্ভব। এর একটা সুফল আমরা পাব। একজন সৎ রাজনীতিবিদের কারণে অন্য যারা রাজনীতিতে আসবে তাদেরকেও সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। তাহলে রাজনীতি এমন এক জায়গায় চলে আসবে যেখানে কিছু সৎ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এ সততার মধ্যে তখন দেশের সত্যিকার সমৃদ্ধির প্রতিযোগিতাটা তৈরি হবে।
তাছাড়া এদেশে যে কোন সৎ রাজনীতিবিদ নেই তাও নয়, আছে। কিন্তু তার ডাক এদেশের মানুষের কানে যাচ্ছে না। ডাক শোনানোর ক্যারিশমা নেই।
অথবা বাঙালি শতবার পরিবার তন্ত্রের বিরুদ্ধে বললেও তারা আসলে পরিবার তন্ত্রই চায়।
না হলে জয়ের ডাক শুনলে অন্য অনেকের ডাক কেন তারা শুনবে না। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। তাই সমীকরণ ইকোয়েল না হলে কেবল সৎ, কেবল ক্যারিশমা বা অন্যান্য সব কিছু থাকলেও মানুষের আস্থা অর্জন করা যাবে না। এজন্য মানুষের মৌলিক চাওয়া পাওয়া একত্রিত করতে হবে। অতবা তাদেরই চাওয়া পাওয়ার ধরন পরিবর্তন করতে হবে।
তারা যদি কোন ঘোরের মধ্যে তাকে সেখান থেকে তাদেও বের কওে আনতে হবে।
রাজনীতির এ কাজটা খুব কঠিন নয়। এটার জন্য বেশি স্মার্টনেসও দরকার আছে বলে মনে করিনা। তবে স্মার্টনেসও যদি এর সঙ্গে থাকে তাহলে সেটা বাড়তি যোগ্যতাই বটে। শুধু কিছু সংখ্যক তরুণদের কাছে এ স্মার্টনেস তুলে ধরলে হবে না।
যে তরুণদের সঙ্গে জয় জয় বার বার আড্ডা দিচ্ছেন -তারা দেশের কত শতাংশ। সেসব তরুণরাই কি দেশের একমাত্র তরুণ। স্কুল কলেজগামি বা প্রাইভেট বিশ্বক্ষদ্যালয়মুখী তরুণরা ছাড়া আর কোন তরুণ কি এদেশে নেই। কিন্তু এই প্রাইভেট বিশ্বাবিদ্যালয়মুখী তরুণরা কতটা তারুণ্যময় নাকি তারা কর্পোরেট কালচারে আসক্ত একটি সম্প্রদায়। যাদের দেখলে বেশ চোখ জুড়িয়ে যায়।
কিন্তু অন্যের স্বার্থ পাহাড়া দেয়ার জন্য গোলামি করে। তাদের চোখ ও মুখের দিকে দেখাই কি বাংলা দেশকে দেখা। নাকি আরও বাংলাদেশ আছে। জয় হুট করে দেশে এসেই কর্পোরেট কালচারে আসক্ত কিছু তরুণকে কেন টার্গেট করেছে। তারা জয়ের মুখ থেকে কি শুনতে চায়।
বা যারা ওই আড্ডায় ছিল তারাই কেন আড্ডায় আমন্ত্রিত হল।
যারা ছিল তারাই এদেশের কতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করে। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল স্রোত কিনা। কিংবা আমাদের কালচারটাকে কতটা জানে। না জানার না বোঝার অনেক কারণ থাকতে পারে।
বারাক ওবামার উক্তিতে জয়ের স্মার্টনেসের মত তাদের স্মার্টনেস আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি কতটুকু হজম করতে অভ্যস্থ। অন্য মানুষগুলো থেকে দূরে থেকে অর্থাৎ আনস্মার্ট মানুষগুলো কাছে না টানলে এদের আনস্মার্টনেস নিয়ে অনেকে রাজনীতি করবে। অনেকে রাজনীতি করবে মানে তাদের অশিক্ষা-অজ্ঞতাকে পুঁজি করে অনেকে এদেরকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে পারে। সেই জায়গা থেকে চিন্তা করলে শুধু কনফারেন্স রুমে বসে কর্পোরেট কালচারে আসক্ত কিছু যুবককে দিয়ে বিপ্লব হতে পারেনা। কর্পোরেট কালচারে আসক্ত লোকজন কখনও বিপ্লব করবে না।
এই সুযোগে অন্যরা তখন প্রতি বিপ্লবের সুযোগ নেবে।
জয়ের ব্যাপরে এদেশের মিডিয়ায়ও কিছু কথা এসেছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কথা বলা। হয়ত মিডিয়ায় এসেছে। কিন্তু তিনি যে সবকিছু না জেনে-বুঝেই বলছেন সেটাও ঠিক নয়।
মিডিয়ার সবকিছু যে ঠিকঠাক লিখছে বা বলছে সেটাও তো ঠিক নয়। আর রাজনীতির মাঠে জয় যদি একান্তই থাকতে চান তাহলে নিজের আত্মবিশ্বাসে তা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ডিফারেন্ট কিছু অবশ্যই বলতে ও করতে হবে।
এরপরও জয় দেশে না থেকেও একটা কাজ তো তিনি করেছেন। সেটাতে তিনি সবচেয়ে সফল।
অসফল বলার কোন কারণ নেই। এই জায়গায় এসে বিএনপি সরকারের আমলে ফিরে যেতে হচ্ছে। সেটা হচ্ছে -বিএনপি সরকার যেখানে সাবমেরিন কেবল আনতে গিয়ে তথ্য পাচার জুজুর ভয়ে সাবমেরিন কেবলের মূল লাইন এদেশে আনতে পারেনি- সেটাই। সেই জায়গায় দেশে এখন ডিজিটালের রমরমা। এটা একটা অভাবনীয় বিষয় ছিল এক সময়।
গত ৫ বছরে মানুষ কল্পনা করেনি এত কিছু এদেশে ঘটবে। কিন্তু সত্যি ঘটে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।