আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্ক-ছিনতাই কারীর খপ্পরে

----------------ছবি নিজস্ব খুব বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছে আজ। এদিকে ভুল গড়ীতে ওঠার মাশুল দিতে হচ্ছে। পল্লবী থেকে চৌদ্দনম্বর যাওয়া লাগবে । রাতের আধারে সব আরো বেশি অচেনা । এতরাত জায়গায় জায়গায় কয়েকজনের কুন্ডলি পাকানো।

তারা দাড়িয়ে হাসছে । মানুষ হাসতে দেখলে অর্ক সাহেবের ভয় লাগে এখন। কান্না নিরাপদ । রাতের আধারে খোলা আকাশের নিছে দাঁড়িয়ে অজানা একদল লোক হাসা মানেই রেড সিগনাল। একটা ছোট দল মনে হয় তার পিছু নিয়েছে।

ভিতরে অজানা আশংকা। গত রাতে বাজে স্বপ্ন দেখেছে । স্বপ্নে দেখলো তার চুল অর্ধেকটা পেকে গেছে। স্বপ্নেই ভাবছে বিয়ে হয়েছেতো ? না হয়ে থাকলে এই পাকাচুল ওয়ালাকে কে বিয়ে করবে?সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙে যায়। এই স্বপ্নের ভালো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে অর্ক ।

স্বপ্নের ভালো ব্যাখ্যা মনে সাহস যোগায় এবং মঙ্গল বয়ে আনে । তার স্বপ্নের ব্যখ্যা হলো যেহেতু তার মাথার চুল পাকে নাই বললেই চলে সবগুলোর অর্ধেক পাকতে সময় লাগবে কম করে হলেও পনের বছর । তাহলে আরো ১৫ বছর হায়াত আছে। তার মানে সে আজ মরছেনা। এখন বেঁচে থাকা মানেই ভালো থাকা।

যদিও যমদূত তার পিছু নিয়েছে এটা সে আচ করতে পেরেছে । ৬/৭ জন মানুষ হাতে ধারালো অস্ত্র আছে । ওদের সাথে টেক্কা দিতে গেলে নির্ঘাত বিশজিৎ হওয়ালাগবে। ২/৩ জন হলে অর্কের জিতার চান্স থাকতো। সেমি মার্শাল আর্ট কম কি এমনও তো হতে পারে ছিনতাইকারী বলে পিটানো শুরু করলে বাকিরা এসে যোগ দিলে গনপিটুনিতে মরতে হবে ।

মারা যাওয়ার পর পরিচয়পত্র পাওয়ার পর বলবে চিনতে পারে নাই । ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়েছে। পুলিশকে কিছু দিলেই খালাশ । পরের দিন দৈনিক পত্রিকায় খবর ছাপবে একজন মেধাবী গবেষক ছিনতাইকারী সন্দেহে গনপিটুনিতে নিহত। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৩ বৎসর।

তিনি তরুণ গবেষকদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবৃতি দিবেন অর্ক সাহেব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিক ব্যক্তি ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বিরুধীদল তাকে পরিকল্পিত ভাবে তাদের পোষা গুন্ডা দিয়ে হত্যা করেছে। আগামী নির্বাচনে এই দেশের জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে এই হত্যার প্রতিশোধ নিবে। বিরুধী দলের মহাসচিবকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হবে।

তাদের কাছে তার সম্পৃক্ততার সুস্পষ্ট আলামত আছে। বিরুধীদল বিবৃতি দিবেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকান্ড হয়েছে। এর প্রতিবাদে আগামীকাল সকালসন্ধ্যা হরতাল সারাদেশে । অর্কের জীবন বৃথা যেতে পারে না । অবিলম্বে তার হত্যাকরীদের গ্রেফতার ও বিচার না করা হলে তারা সামনে আরও কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল। এই বিপদের সময় এইসব আজে বাজে চিন্তা কেন আসছে? পিছন থেকে একজন ডাকলেন এই যে ভাই দাড়ান । অর্ক না শুনার ভান করে জোরে হাটতে থাকে। এই ব্যাটা দাড়া । অর্ক পিছনে খেয়াল করে তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র।

সৌভাগ্যক্রমে ঐ্ সময় একটা চলন্ত গাড়ী দেখে । প্রচন্ড বেগে দৌড়াতে থাকে। তারাও তাকে ধাওয়া করে। একজন চাকু ছুড়ে মারে। সে অল্পের জন্য বেঁচে যায়।

ইতিমধ্যে সে গাড়ীতে ওঠে যায় । গাড়ী হয়তো তার অপেক্ষায় ছিল সে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেটি আরও দ্রুত চলতে থাকে। বলতে গেলে গুলি কানের পাশ দিয়ে গেল। গড়ীতে ওঠে সে একটি সীটে বসে হাপাতে থাকে। শীতের মধ্যে ঘাম দিয়ে টেনশন রিলিজ হয় ।

বাস সবচেয়ে নিরাপদ যানবাহন । তারপরও মনে আশঙ্কা থাকে গোন্ডাগুলো পিছু নিলো কিনা? মাকে কল দেয়া লাগবে। অনেক রাত হয়েছে। মোবাইলে কল দিতে গিয়ে দেখে মোবাইল বন্ধ। চার্জ নাই।

অতিগুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে মোবাইল বন্ধ । প্রচন্ড গা জ্বালা করে । মাকে অন্তত ফোন করা দরকার ছিল করা যাচ্ছে না। মোবাইল তার কাছে ঘুড়ির নাটাই। পরাধীনতার মূর্ত প্রতীক ।

বসের কড়া নির্দেশ হোক কিংবা প্রেমিকার প্রেম আলাপই হোক। কিংবা কারো কোন আব্দারই হোক। মোবাইল অব্যর্থভাবে তা পৌছে দিবে। যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমন বিড়ম্বনার বস্তু ও বটে । মানুষের স্বাধীনতা বিনষ্টে এর ভূমিকা অপরিসীম।

নিরবে নিভৃতে একা থাকার প্রতিবন্ধক। উভয় সঙ্কট সৃষ্টিতেও এর ভূমিকা অতুলনীয়। কোন বিরক্তিকর কল এড়াতে মোবাইল সাইলেন্ট রাখবেন দেখবেন কোন গুরুত্বপূর্ণ কল মিস হয়ে গেছে । কিংবা একটি কল চলছে এর মধ্যে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কল চলে আসলো । একাধিক মোবাইল রাখবেন ? সারদিন খবর নাই ।

অথচ যখন কল আসে একসঙ্গে আসে । আপনি বাথরুমে ঢুকলেন কল আসলো বেড়িয়ে আসতে আসতে কল শেষ আর আপনার মোবা্ইল ব্যালান্স শূণ্য। কিংবা কল করতে গেলেন মোবাইলে চার্জ শেষ । অর্ক এখন এই শেষ ধরণের বিড়ম্বনায় পরেছেন। বাইরে গিয়ে কল করবেন সেই সুযোগও নাই।

লোকগুলো যদি তার পিছু নিয়ে থাকে?অর্ক সাহেব দ্রুত উত্তরার গাড়ীতে ওঠলেন । মার কথা ভাবছেন। মা টেনশনে না আবার অসুস্থ হয়ে পরে । বছর দুয়েক আগে মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন। ফুটবল খেলতে গিয়ে হাটুতে ব্যথা পেয়েছেন।

হাটু ফুলে হাতির পায়ের মতো হয়েছে । ডাক্তার হাটু ধরে মোচড় দিলে অর্ক সহেব ব্যথায় কাকিয়ে ওঠেন। সেটা দেখে মা কান্না শুরু করলেন। পরের বার আরো জোরে মোচর দিলে ব্যথায় জীবন যায় যায় অবস্থা তবু একটু শব্দও করেন নি। মা বললেন খোকা অনেক কষ্ট হজম করলি।

মাকে কষ্ট না দেয়ার জন্য তার এই ব্যথা হজম কর্মসূচী। মাকে কষ্ট দেয়া আল্লাহ সহ্য করেন না। আজ মার জন্য খুব টেনশন হচ্ছে এতক্ষণে তিনি হয়তো কান্না জুড়ে দিয়েছেন । নয়াবাড়ীর প্রত্যেকটা ফ্যামিলি হয়ত জড়ো হয়ে গেছে । আর মা খোকা খোকা বলে চিৎকার করছে ।

অর্ক সাহেবের মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো । মনে হচ্ছে আছাড় দিয়ে মোবইল ভেঙে ফেলবেন । একবার ভাবলেন গলা ফাটিয়ে টারজানের মত চিৎকার দিলে কেমন হয় ? তার কোনটাই করা হয় না । মার জন্য মনে মনে শুভকামনা করতে থাকে। গেট মনে হয় বন্ধ ।

নূর আলী নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন তাকে ঘুম থেকে ওঠানো কঠিন কাজ । তাকে ডেকে ওঠাতে গেলে পাশের বাড়ির দারোয়ান জেগে ওঠে । বাড়ীর সবাই জেগে ওঠেন । কিন্তু তার ওঠা হয় না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।