মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় প্রস্তাবিত গার্মেন্টপল্লী বাস্তবায়ন হলে ১০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করেন দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য পোশাক খাতের শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম।
তার মতে, ওই ১০ লাখের ৮০ শতাংশই হবে নারীশ্রমিক। আর এ প্রকল্পে পোশাকশিল্প মালিকরা ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন। ফলে গার্মেন্টপল্লীর মাধ্যমে বছরে রপ্তানি হবে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাকপণ্য। এর মধ্য দিয়ে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব পাবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা।মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় প্রস্তাবিত এই গার্মেন্টপল্লী সম্পর্কে বিজিএমইএ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মো. শহীদুল্লাহ আজিম এসব কথা বলেন।
গার্মেন্টপল্লীর বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করে শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন মেঘনা নদীঘেঁষা বাউশিয়ায় ৫৩০ দশমিক ৭৮ একর জমিতে এ গার্মেন্টপল্লী স্থাপন করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসন দ্রুতগতিতে জমি অধিগ্রহণের কাজ করছে। এ জমির ৩০ শতাংশে হবে রাস্তঘাটসহ অন্যান্য দরকারি অবকাঠামো। ২০১৬ সালের মধ্যে গার্মেন্টপল্লীর নির্মাণকাজ শেষ হবে উল্লেখ করে বিজিএমইএর সহসভাপতি বলেন, এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে প্লট পেতে আবেদন করেছেন ২৩০০ পোশাক কারখানার মালিক।
কিন্তু ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের ৫৭৭টি কারখানা এখানে স্থাপন করা হবে। তবে এখানে শুধু গার্মেন্ট কারখানাই নয়, স্থাপন করা হবে এর সঙ্গে যুক্ত ও সহযোগী আরও বেশ কিছু শিল্প। ফলে পুরো প্রকল্পে গার্মেন্টশিল্প সংশ্লিষ্ট সব সেবা পাওয়া যাবে। এ প্রকল্পে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ পোশাক কারখানাসমূহ অগ্রাধিকার পাবে বলে তিনি জানান। গার্মেন্টপল্লীর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে বিজিএমইএর এই সহসভাপতি বলেন, প্রকল্পটি হবে প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো-সুবিধা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের একটি শিল্পপার্ক।
প্রকল্পে প্রতিটি কারখানা মালিকের চাহিদা অনুযায়ী এক বিঘা, তিন বিঘা ও পাঁচ বিঘা আয়তনের শিল্পপ্লট বরাদ্দ করা হবে। প্রতিটি কারখানার জন্য জমির বিঘাপ্রতি মূল্য নেওয়া হবে ৬৫ লাখ টাকা। আর এখানে থাকবে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস-সুবিধা। এ জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর সঙ্গে আরও থাকবে ব্যাংক, বীমা, কাস্টমস, টেলিযোগাযোগ, ক্যান্টিন, তথ্যপ্রযুক্তি সেন্টার, ডাকঘরসহ অন্যান্য সুবিধা।
প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য সেখানে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ স্টেশন থাকবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে থাকবে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, ডে-কেয়ার সেন্টার, ডে-কেয়ার ইউনিট, শিশুপার্ক, মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়-সংক্রান্ত সুবিধা। প্রকল্প এলাকাজুড়ে দৃষ্টিনন্দন প্রশস্ত লেক ও বনায়ন করা হবে। পরিবেশদূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পুরো প্রকল্পে থাকবে কেন্দ্রীয় ইটিপি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা। যে কোনো প্রয়োজনে জরুরি অবতরণের জন্য নির্মাণ করা হবে দুটি হেলিপ্যাড।
প্রকল্পে শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে কি না, জানতে চাইলে মো. শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, গার্মেন্টপল্লীর ভেতরে শ্রমিকদের জন্য কোনো আবাসন ব্যবস্থা করা হবে না। তবে প্রকল্প এলাকা ঘিরে একটি উপশহরের মতো গড়ে উঠবে। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের আবাসনে সমস্যা হবে না। সেখানে শ্রমিকরা যে যার মতো কাজ করতে পারবেন। প্রকল্পে অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি নির্মাণে সরকারি কোনো অর্থ ব্যয় হবে না।
পুরো প্রকল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এটি দেবেন পোশাকশিল্প মালিকরা। তবে মালিকদের ঝুঁকি কমাতে চীন থেকে একটি ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চায়না ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট প্রতিটি পোশাকশিল্প মালিককে তার মোট খরচের ৫০ শতাংশ ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাকি ৫০ শতাংশ ওই কারখানার মালিক যে কোনো প্রক্রিয়ায় জোগান দিতে পারবেন।
তবে ওই ঋণের সুদ হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। এমন গার্মেন্টপল্লী গড়ার আরও পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নে বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, সরকার যদি প্রয়োজনীয় সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে দেয়, সব বিভাগে একটি করে গার্মেন্টপল্লী গড়ে তোলা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।