আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাঈন-আশরাফের রায় যে কোনো দিন

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে যে কোনো দিন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গতকাল বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন। একাত্তরে দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র শাখা আলবদরের নেতা মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বুদ্ধিজীবী হত্যারও অভিযোগ রয়েছে। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ আনা হয়। শুনানিতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে প্রসিকিউশন।

অন্যদিকে নির্দোষ দাবি করে অভিযুক্তদের খালাস চেয়েছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধবিষয়ক আরও একটি মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হলো। আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে ও মাঈনুদ্দিন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। অনুপস্থিতিতেই ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার হয়।

অভিযোগ : অভিযোগে বলা হয়, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যরা হাইকমান্ডের নির্দেশে সরাসরি আলবদর বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

পরিকল্পনা চূড়ান্ত রূপ দিতে একাত্তরের ডিসেম্বরে আলবদর বাহিনীর কিলিং স্কোয়াড গড়ে তোলা হয়। অভিযুক্ত চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ওই বাহিনীর 'অপারেশন ইনচার্জ' এবং আশরাফুজ্জামান খান 'চিফ এক্সিকিউটর' ছিলেন। প্রথম অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১১ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের নির্দেশে সাত-আট জন সশস্ত্র আলবদর সদস্য সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে বাসা থেকে অপহরণ করেন। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হয়। তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১১ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের উপস্থিতিতে আলবদর বাহিনীর আট-দশ সশস্ত্র সদস্য সাংবাদিক সৈয়দ নাজমুল হককে বন্দুকের মুখে বাসা থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করেন।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১১ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের নির্দেশে পাঁচ-ছয় জন সশস্ত্র আলবদর সদস্য সাংবাদিক আ ন ম গোলাম মুস্তাফাকে বাসা থেকে অপহরণের পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করেন। চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১২ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের নির্দেশে সশস্ত্র আলবদর সদস্যরা সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমদকে বাসা থেকে অপহরণের পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করেন। পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১৩ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের উপস্থিতিতে একদল সশস্ত্র আলবদর সদস্য সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে বাসা থেকে অপহরণ করেন। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১৩ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের উপস্থিতিতে পাঁচ-ছয় জন সশস্ত্র সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সিরাজুল হক খান, ড. মো. মর্তুজা, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, রাশিদুল হাসান, আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্যের বাসভবনে ঢুকে তাদের বন্দুকের মুখে মিরপুরের বধ্যভূমি এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। সপ্তম অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের উপস্থিতিতে সাত-আট সশস্ত্র আলবদর সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর বাসায় জোরপূর্বক ঢুকে পড়েন। পরে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হয়। অষ্টম অভিযোগে বলা হয়, '১৭-এর ১৪ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের নির্দেশে তিন-চার জন সশস্ত্র আলবদর সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে অপহরণ করেন। তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হয়।

নবম অভিযোগে বলা হয়, '১৭-এর ১৪ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের উপস্থিতিতে পাঁচ-ছয় জন সশস্ত্র আলবদর সদস্য সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারকে অপহরণ করেন। তাকেও অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হয়। ১০তম অভিযোগে বলা হয়, '১৭-এর ১৫ ডিসেম্বর মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের উপস্থিতিতে দু-তিন জন সশস্ত্র আলবদর সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক মো. ফজলে রাবি্বকে বাসা থেকে অপহরণ করেন। পরে তাকে হত্যা করা হয়। ১১তম অভিযোগে বলা হয়, '৭১-এর ১৫ ডিসেম্বর সশস্ত্র আলবদর সদস্যরা মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের নির্দেশে চিকিৎসক আলিম চৌধুরীকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।

স্বাধীনতার পরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম : আশরাফুজ্জামান ও মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় গত ২৫ এপ্রিল। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় শিক্ষক, ছয় সাংবাদিক এবং তিন জন চিকিৎসককে অপহরণ করে নির্যাতন শেষে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৫৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

তদন্তের সময় ৬০ জনের বেশি ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর। মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান। মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে ফেনী ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জেও তদন্ত করা হয়। একই সঙ্গে এলাকায় তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির খোঁজ নেওয়া হয়।

এ ছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকেও কাটিং উপস্থাপন করা হয় ট্রাইব্যুনালে। ২৮ এপ্রিল মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান। পরে ২ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের না পেয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর পরও মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান হাজির না হওয়ায় ৪ জুন তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে।

ট্রাইব্যুনাল-২ এ হবে মীর কাসেমের বিচার : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়েছে। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল-১ এ বর্তমানে অনেক মামলা বিচারাধীন। তাই দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মামলা স্থানান্তর করা হলো। মামলাটি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, সে অবস্থা থেকেই ট্রাইব্যুনাল-২ এ কার্যক্রম শুরু হবে।

ট্রাইব্যুনাল-১ এ গত ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেমের বিচার শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

সাঈদীর আপিল শুনানি : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর করা আপিলের ওপরে শুনানি অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে গতকাল পঞ্চম দিনের মত শুনানি হয়েছে। আসামিপক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।

শুনানিতে তিনি ট্রাইব্যুনালের রায়ের ১২০ পৃষ্ঠা আদালতে পড়ে শোনান। সরকারপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।